অধ্যাপনা থেকে ব্যবসা, স্বপ্ন পূরণের প্রতি পদে ভরসা ছিল মা—ই, জানাচ্ছেন তরুণিমা

তরুণিমার জন্ম সাধারণ এক মধ্যবিত্ত পরিবারে। বাবা ছিলেন পেশায় চাকুরিজীবি এবং মা শিক্ষিকা। দুষ্টুমির জন্য স্কুলে পড়ার সময় বাবা-মা’র কাছে প্রায়ই অভিযোগ আসত। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে আমূল বদলে নিয়েছেন তরুণিমা

অধ্যাপনা থেকে ব্যবসা, স্বপ্ন পূরণের প্রতি পদে ভরসা ছিল মা—ই, জানাচ্ছেন তরুণিমা
Tarunima BanerjeeImage Credit source: We Make Us

| Edited By: Soumya Saha

May 13, 2023 | 7:55 PM

কখনও খেলা নিয়ে মায়ের বকুনি, তো কখনও চোখে চোখ রেখে প্রশ্ন, কখনও পাঁচিল টপকে পালিয়ে যাওয়া তো কখনও মারপিট করে বাড়ি ফেরা — তরুণিমার ছোটবেলার গল্প জুড়ে রয়েছে শুধুই রোমাঞ্চ। ছাপোষা খেলনাবাটি নিয়ে নয়, তাঁর বেড়ে ওঠা রীতিমতো ডাকাবুকো মেয়েদের মতো। সব মিলিয়ে ছোট থেকে খানিক আলাদাভাবেই বড় হয়েছেন গল্পের নায়িকা তরুণিমা বন্দ্যোপাধ্যায়। বর্তমানে তিনি অধ্যাপিকা। পাশাপাশি একজন সফল ব্যবসায়ীও বটে! অল্প সময়েই লাভের মুখ দেখেছে তাঁর সংস্থা। তরুণিমার পথ চলার গল্প সত্যিই অনুপ্রেরণা দেয়।

তরুণিমার জন্ম সাধারণ এক মধ্যবিত্ত পরিবারে। বাবা ছিলেন পেশায় চাকুরিজীবি এবং মা শিক্ষিকা। দুষ্টুমির জন্য স্কুলে পড়ার সময় বাবা-মা’র কাছে প্রায়ই অভিযোগ আসত। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে আমূল বদলে নিয়েছেন তরুণিমা। তাঁকে বরাবরই বিচলিত করেছে গতানুগতিক নিয়মের বেড়াজাল। সমাজের নানা বাঁকা প্রশ্নকে রীতিমতো ফুঁৎকারে উড়িয়ে দিয়ে পথ চলেছেন তিনি।

Tarunima Banerjee

বর্তমানে তরুণিমা একটি কলেজের শিক্ষাবিজ্ঞানের অধ্যাপিকা। পাশাপাশি, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করছেন তিনি। তরুণিমা মনে করেন, নির্ভরশীলতা নয়, বরং সুন্দর জীবনযাপনের লক্ষ্যে প্রতিটি নারীর নিজ চেষ্টায় প্রতিষ্ঠিত হওয়া প্রয়োজন। আর্থিক স্বচ্ছলতা বজায় থাকলেই জীবন অনেকটাই দুশ্চিন্তামুক্ত হয়। আর তরুণিমার এই চিন্তাধারার নেপথ্যে রয়েছেন তাঁর মা তনিমা বন্দ্যোপাধ্যায়। যাঁর হাতেই ছোট থেকে বড় হয়ে উঠেছেন তরুণিমা। যাঁর থেকেই পেয়েছেন জীবনে বড় হওয়ার মন্ত্র।

এই প্রসঙ্গে তরুণিমাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “মাতৃদিবস বলে ঘটা করে বাড়িয়ে বলছি না। কিন্তু আমি আমার মায়ের মতোই। মা—ই আমায় ছোট থেকে শেখাত যে, জীবনে কারো উপর নির্ভর করবি না টাকার জন্য। একটা ছোট সেফটিপিন কেনার জন্যও যেন হাত পাততে না হয়। আমি মায়ের সেই প্রতিটি কথা মেনেই এগিয়ে চলেছি। আজ আমি যা কিছু হতে পেরেছি, তার সম্পূর্ণ কৃতীত্ব আমার মায়েরই।”

Tarunima Banerjee

মায়ের প্রতিটি কথাকে বেদবাক্য মনে করে নিজের লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছেন তরুণিমা। অসংখ্য কালো মাথার ভিড়ে হারিয়ে না গিয়ে, চড়াই উৎরাইয়ের মধ্যেও নিজের মতো করেই গুছিয়ে নিয়েছেন লক্ষ্য পূরণের পথ।       

তরুণিমার গল্প কিন্তু এখানেই শেষ নয়। অধ্যাপনা এবং পিএইচডির পাশাপাশি তিনি শুরু করেছেন নিজের ব্যবসাও। নাম দিয়েছে ‘রাপুঞ্জেল বিউটি’। ত্বকের ও চুলের যত্নের জন্য বিভিন্ন ধরনের বিউটি প্রোডাক্ট তৈরি করেন তিনি। মূলত প্রাকৃতিক উপাদান দিয়েই তৈরি হয় এগুলি। ব্যবসা শুরু করার আগে এই বিষয়ে দুই বছর পড়াশোনা করেছেন তিনি। বলা বাহুল্য, এই ব্যবসা শুরুর পেছনেও কিন্তু তাঁর মায়ের অবদান কম কিছু নয়।

বর্তমানে রোজের রুটিন কী তরুণিমার? উত্তরে জানালেন, “অধ্যাপনা থেকে ব্যবসা, এই নিয়েই সময় কেটে যায়। সকালে কলেজ থেকে পড়িয়ে বাড়ি ফিরে খানিক বিশ্রাম নিয়েই আবার ব্যবসার কাজে লেগে পড়তে হয়। সেই সঙ্গে সামলাতে হয় সংসারও।”

Tarunima Banerjee

যদিও তরুণিমার ভাবনাটা একটু অন্য রকম। দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজের মতো করে এগিয়ে যেতেই পছন্দ করেন তিনি। এই বিষয়ে তাঁর সাফ বক্তব্য, “আমি ভেবে চিন্তে খুব একটা কিছু করি না। আগে ঝাঁপিয়ে যাই। ব্যস! দেখলাম মানুষ পছন্দ করছেন। আর কি!” এখন এটাই জীবন তরুণিমার। সেই ছোটবেলার দু’চোখ ভরা স্বপ্ন, সত্যি হওয়ায় উচ্ছ্বসিত তিনি।    

হাতে মাত্র ১০০ টাকা পুঁজি নিয়ে ব্যবসা শুরু করেছিলেন তরুণিমা। খুব কম সময়েই সেই ব্যবসা বেড়েছে। খুব কম সময়েই ‘রাপুঞ্জেল বিউটি’কে সাদরে গ্রহণ করেছে সাধারণ মানুষ। তরুণিমার অবিশ্রান্ত পরিশ্রম আর অদম্য জেদের উপর ভর করে এই সংস্থা আজ বেশ জনপ্রিয়। তবে তাঁর সব কৃতিত্বের নেপথ্যে রয়েছে দু’টি মানুষের ক্রমাগত সমর্থন ও অনুপ্রেরণা। তাঁর মা ও বাবা। স্বপ্নকে সঙ্গী করে আগামীর পথে এগিয়ে চলেছেন তরুণিমা। তাঁর এই পথ আজ বহু মহিলাদের কাছে অনুপ্রেরণা।