নয়া দিল্লি: সারাদেশে জ্বালানির দাম বৃদ্ধি এবং পরিবেশ দূষণ সম্পর্কে সাধারণ মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধির ফলে দেশে বৈদ্যুতিক গাড়ির (Electric Car) জনপ্রিয়তা ক্রমে বাড়ছে। বৈদ্যুতিক গাড়ির কারবণ নিঃসরণ শূন্য। জ্বালানীর প্রয়োজন হয় না, ব্যাটারিতে চলে। তবে, জ্বালানি-চালিত গাড়ির মতোই, বীমা ছাড়া ভারতের রাস্তায় বৈদ্যুতিক গাড়ি চালানো যায় না। সাধারণ জ্বালানি চালিত গাড়িগুলির থেকে বৈদ্যুতিক গাড়িগুলির দাম বেশি হয়। বৈদ্যুতিক গাড়িগুলির শুধু দামই বেশি নয়, এই গাড়িগুলির বিমা পলিসির খরচও সাধারণত জ্বালানি চালিত গাড়ির তুলনায় বেশি হয়। অথচ, দুর্ঘটনা, চুরি বা অন্য কোনও বিপত্তির ক্ষেত্রে এই বিমা পলিসিই আর্থিক সহায়তা দেয়। কেন বৈদ্যুতিক গাড়ির বিমার খরচ বেশি? কীভাবে এই খরচ কমানো যায়? আসুন জেনে নেওয়া যাক –
ক্রয়মূল্য বেশি: বৈদ্যুতিক গাড়িগুলির বিমার খরচ বেশি হওয়ার প্রথম কারণ হল এই গাড়িগুলির দাম জ্বালানি-চালিত গাড়ির থেকে বেশি। কার্বন নিঃসরণ যাতে শূন্য হয়, সেই কথা মাথায় রেখেই বৈদ্যুতিক গাড়িগুলি নকশা করা হয়েছে। এর জন্য এই গাড়িগুলিতে ব্যবহার করা হয়েছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। এর ফলে গাড়িগুলির দাম বেশি হয়। দাম বেশি হয় বলে, গাড়িগুলির ইনসিওরড ডিক্লেয়ার্ড ভ্যালু বেশি হয়। ফলে এই গাড়িগুলির বিমার প্রিমিয়ামের মূল্যও বেশি হয়। তবে, বৈদ্যুতিক গাড়ির ক্রয় মূল্য বেশি হলেও, দীর্ঘমেয়াদে বৈদ্যুতিক গাড়িগুলি আসলে সাশ্রয় করে।
মেরামত এবং যন্ত্রপাতি বদলের খরচ বেশি: জ্বালানি-চালিত গাড়ির তুলনায় বৈদ্যুতিক যানবাহনে কম সংখ্যক যন্ত্রাংশ লাগে। তবে, এই যন্ত্রাংশগুলির মেরামত এবং প্রতিস্থাপনের খরচ বেশি। উদাহরণস্বরূপ, এই গাড়িগুলিতে লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়। এই ব্যাটারি বদলানোর খরচ, প্রায় গাড়িটির মোট খরচের অর্ধেক। স্বাভাবিকভাবেই, এই ব্যাটারি মেরামত বা বদলের খরচ অনেক বেশি। এই ব্যাটারিগুলির একটি নির্দিষ্ট মেয়াদও থাকে। মেয়াদ ফুরনোর পর, ব্যাটারি বদলাতেই হয়।
টেকনিশিয়ানের সংখ্যা সীমিত: প্রচলিত গাড়িগুলির মেকানিক পাওয়া মোটেই কঠিন কাজ নয়। যে কোনও গাড়ি মেরামতির দোকানে গেলেই, গাড়ি সারাইয়ের মেকানিক পাওয়া যায়। তবে, বৈদ্যুতিক গাড়ি মেরামতের জন্য প্রয়োজন বিশেষ দক্ষতা এবং প্রযুক্তিগত জ্ঞান। এই দক্ষতা এবং জ্ঞান সম্পন্ন মেকানিক বা টেকনিশিয়ানের সংখ্যা সীমিত। তাই, বৈদ্যুতিক গাড়ি মেরামতের খরচও বেশি। শুধু মেকানিকই নয়, ভারতীয় অটোমোবাইল বাজারে এই বৈদ্যুতিক গাড়িগুলি সারানোর মতো জায়গারও অভাব রয়েছে।
মূলত এই তিন কারণেই বিমা সংস্থাগুলি, বৈদ্যুতিক গাড়ির বিমার জন্য বেশি মূল্য নেয়।
বৈদ্যুতিক গাড়ির বিমার খরচ বেশ কয়েকটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে – কভারেজের পরিমাণ, গাড়ির খরচ, আপনার ড্রাইভিং অভিজ্ঞতা, আপনার ড্রাইভিং এবং বিমার অর্থ দাবির ইতিহাস। এর মধ্যে কিছু কিছু বিষয় নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। তবে তারপরও, কয়েকটি উপায়ে বৈদ্যুতিক গাড়ির বিমার খরচ কমানো যায়।
বৈদ্যুতিক গাড়িতে লাগান সিকিওরিটি ডিভাইস: বৈদ্যুতিক গাড়ির যন্ত্রাংশ বদলের খরচ বেশি বলে, চুরি বা এই ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে, তার জন্য গাড়িতে চুরি-রোধী এবং অন্যান্য সিকিওরিটি ডিভাইস ইনস্টল করা যেতে পারে। বিমা সংস্থাগুলি প্রিমিয়াম গণনার সময় এই সিকিওরিটি ডিভাইসগুলিকে বিবেচনায় রাখে। কাজেই, বৈদ্যুতিক গাড়িতে সিকিওরিটি ডিভাইস লাগানো থাকলে বিমার খরচ কমতে পারে।
অনলাইনে কিনুন বিমা: অনলাইনেই সবথেকে ন্যায়সঙ্গত মূল্যে বৈদ্যুতিক গাড়ির বিমা পাওয়া যায়। বিভিন্ন ওয়েবসাইটে আপনি বিভিন্ন বিমা সংস্থার বৈদ্যুতিক গাড়ির বিমার খরচ তুলনা করতে পারবেন। সেখান থেকে সর্বাধিক কভারেজের সাশ্রয়ী বিমা পলিসি বেথে নেওয়া যায়। গাড়ি বিমা ক্যালকুলেটর ব্যবহার করে, দেখে নিতে পারবেন আপনার পছন্দের গাড়ি বিমা পলিসি আপনার বাজেটের সঙ্গে মানানসই কিনা। এইভাবে, আপনি আপনার বাজেটের মধ্যেই একটি উপযুক্ত মোটর বীমা পলিসি কিনতে পারবেন।
ব্যবহার করুন নো-ক্লেম বোনাস: আপনি বিমার অর্থ একবারও দাবি না করলে, প্রতি বছর বিমা সংস্থা আপনাকে একটি নো-ক্লেম বোনাস দেবে। আপনি যদি চালানোর সময় সতর্ক থাকেন এবং নিয়মিত গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ করেন, তাহলে প্রতি বছরই নো-ক্লেম বোনাস পেতে পারেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই বোনাসগুলি জমে জমে আপনার বীমা পলিসির প্রিমিয়াম অনেকটাই কমিয়ে দেবে।
ছোটখাটো দাবি করা এড়িয়ে চলুন: গাড়ি চালাতে গেলে ছোটখাটো ক্ষতি হতেই পারে এবং তার জন্য মেরামতিরও প্রয়োজন পড়ে। এই ধরনের ছোটখাটো মেরামতির জন্য বিমা অর্থ দাবি করবেন না। এইভাবে, আপনার নো-ক্লেম বোনাস পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়, ফলে পলিসি প্রিমিয়ামের পরিমাণ কমে। ফলে, গাড়ির কোনও ক্ষতি হলেই প্রতিবার বিমার অর্থ দাবি করার পরিবর্তে, নিজের পকেট থেকেই সেই টাকা পরিশোধ করুন।
বৈদ্যুতিক গাড়িগুলি শূন্য কার্বন নিঃসরণকারী যান। জ্বালানির দাম বৃদ্ধি এবং পরিবেশগত উদ্বেগের বাস্তব সম্মত সমাধান হল এই গাড়িগুলি। বৈদ্যুতিক গাড়িগুলি ক্রয়ের প্রাথমিক খরচ বেশি হলেও, দীর্ঘমেয়াদে এগুলির রক্ষণাবেক্ষণের খরচ কম এবং জ্বালানি-চালিত গাড়িগুলির তুলনায় অনেক বেশি সাশ্রয়ী। বৈদ্যুতিক গাড়ির ইন্স্যুরেন্সের খরচ, জ্বালানি চালিত গাড়িগুলির থেকে বেশি হয়। তবে, কয়েকটি সহজ ব্যবস্থা নিলেই পলিসি প্রিমিয়াম অনেক কমে যায়। পরপর ৫ বছর যদি আপনি বিমার অর্থ দাবি না করেন, সেই ক্ষেত্রে টাটা এআইজির মতো বিমা সংস্থা বিমার প্রিমিয়ামে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দেয়।