CWG 2022: সংসার টানতে স্বপ্ন বিসর্জন দিয়েছিলেন দাদা, সোনার পদক তাঁকেই উৎসর্গ অচিন্ত্যর

TV9 Bangla Digital | Edited By: তিথিমালা মাজী

Aug 01, 2022 | 1:46 PM

Achinta Sheuli wins gold: বাবার মৃত্যুর পর ভারোত্তোলক হওয়ার স্বপ্ন বিসর্জন দিয়েছিলেন অচিন্ত্যর দাদা আলোক। বার্মিংহ্যাম কমনওয়েলথ গেমসের সোনার পদক দাদাকে উৎসর্গ করলেন ২০ বছরের বাঙালির গর্ব।

CWG 2022: সংসার টানতে স্বপ্ন বিসর্জন দিয়েছিলেন দাদা, সোনার পদক তাঁকেই উৎসর্গ অচিন্ত্যর
Image Credit source: Twitter

Follow Us

বার্মিংহ্যাম: ওই সোনার পদকের পিছনে কত রক্ত জল করা পরিশ্রম, কষ্ট, স্বপ্ন বিসর্জনের ব্যথা লুকিয়ে আছে তা একমাত্র অচিন্ত্যই (Achinta Sheuli) জানেন। কমনওয়েলথ গেমসের পোডিয়ামের সেন্টারে পদক গলায় দাঁড়ানো ছেলেটির তখন একের পর এক ছবি উঠছে ক্যামেরায়। উঠল তেরঙা, বাজল জাতীয় সঙ্গীত। সংবাদমাধ্যমের ভিড়। এত কোলাহলের মধ্যেও অচিন্ত্যর মন বারবার চলে যাচ্ছিল দেউলপুরের বাড়িতে। মা, দাদা, বাবা…

হাওড়ার দেউলপুরের ঘুপচি বাড়িতে ডন বৈঠক দিয়ে দিন শুরু হত শিউলি পরিবারের দুই ছেলের। শারীরিক কসরত করতে করতে ভারোত্তোলক হওয়ার ইচ্ছে। ভবিষ্যৎ ছকে নিয়েছিল নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের দুই ছেলে অচিন্ত্য ও অলোক শিউলি। বাবা রিকশা চালাতেন। মাঝেমধ্যে ছেলে দুটির স্বপ্ন তাঁর বুকে কাঁপন ধরাত বইকি। সেই তিনিও একদিন এ সংসারের মায়া ত্যাগ করে অন্য জগতে পাড়ি দিলেন। পরিবারের একমাত্র রোজগেরে মানুষটির প্রয়াণে তখন নুন আনতে পান্তা ফুরোয় অবস্থা। অচিন্ত্যর তখন ৮ বছর বয়স। অলোক একটু বড়। সংসার কীভাবে চলবে সেটাই জানা নেই। স্বামীর মৃত্যুর পর সেলাই, জরির কাজ করা শুরু করেন অচিন্ত্যর মা পূর্ণিমা শিউলি। ছেলেদুটো সাহায্য করত। বাবার মৃত্যুর ধাক্কা, সংসার সামলে পড়াশোনা, কাজ ও ভারোত্তোলক হওয়ার স্বপ্নে ক্ষান্ত দেন অলোক। তবে ভাই অচিন্ত্যর ভারোত্তোলক হওয়ার স্বপ্নে ধুলো জমতে দেননি।

২০১০-১১ সালে দুই ভাই মিলে প্রশিক্ষণ শুরু করেছিলেন । ২০১৩ সালে দু’জনেই জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া। সব ঠিকঠাক চলছিল। কিন্তু সেবছরই বাবার মৃত্যু সব ওলটপালট করে দেয়। ভারোত্তোলন ছেড়ে সংসারের ভার নেওয়া তখন বেশি প্রয়োজন ছিল অলোকের। রবিবার মাঝরাতে (ভারতীয় সময়) ভারোত্তোলনের ৭৩ কেজি বিভাগে জেতার পর প্রথম প্রতিক্রিয়ায় অচিন্ত্য বললেন, “এই পদক উৎসর্গ করছি দাদাকে।” যাঁর পরিশ্রম, উৎসাহ ছাড়া এতটা পথ হয়তো আসাই হত না। যাঁর জন্য পাতিয়ালায় জাতীয় শিবিরে নিশ্চিন্তে অনুশীলনে মগ্ন থাকতে পারতেন। বললেন, “দাদা ভারোত্তোলক হতে চেয়েছিল। বাবার মৃত্যুর পর তা হয়ে ওঠেনি। আমাকে সাপোর্ট করতে দিনরাত পরিশ্রম করে গিয়েছে। এখনও পরিবারের দায়িত্ব একমাত্র দাদার কাঁধে। এই সোনার পদক দাদা এবং আমার কোচদের উৎসর্গ করছি।”

২০১৮ সালে খেলো ইন্ডিয়া ইয়ুথ গেমসে সোনা। ২০১৯ সালে কমনওয়েলথ চ্যাম্পিয়নশিপের সিনিয়র পর্যায়ে সোনা জেতেন। ২০২১ সালের আন্তর্জাতিক যুব ভারোত্তোলক প্রতিযোগিতা দ্বিতীয় স্থানে শেষ করে রুপোর পদক। দ্বিতীয় কমনওয়েলথ চ্যাম্পিয়নশিপ পদক আসে সেবছরই। বরাবরই শান্ত স্বভাবের অচিন্ত্য নিভৃতে নিজেকে গড়ে নিয়েছেন। কয়েকটা দিনের হইচইয়ের পর ফের অনুশীলনে ডুবে যাবেন। প্যারিসের বিমান তাঁকে ধরতেই হবে। এবারের স্বপ্নটা যে আরও বড়।

Next Article