বার্মিংহ্যাম: ভারতীয় তারকা কুস্তিগির সাক্ষী মালিকের (Sakshi Malik) ট্রফি ক্যাবিনেটে অবশেষে উঠল কমনওয়েলথ গেমসের (Commonwealth Games) সোনা। এর আগে ২০১৪ সালে গ্লাসগোতে রুপো পেয়েছিলেন সাক্ষী। এরপর ২০১৮ সালের গোল্ড কোস্টে ব্রোঞ্জ পদক। এ বার বার্মিংহ্যাম কমনওয়েলথে গেমসে (Birmingham Commonwealth Games 2022) সাক্ষীর কাছে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল নিজের ফর্মে ফিরে পদক নিয়ে দেশে ফেরা। সেটা করে দেখাতে পারলেন সাক্ষী। ফর্মেও ফিরলেন, পদকের রংও বদলালেন। একইসঙ্গে খারাপ সময় কাটিয়ে এই সাফল্য পাওয়ার দিন ধন্যবাদ জানালেন পরিবারকে ও তাঁর স্বামীকে।
কমনওয়েলথের মঞ্চে সাক্ষীর কামব্যাকের সাক্ষী রইল গোটা দুনিয়া। সোনা জেতার পর এক সাক্ষাৎকারে সাক্ষী বলেন, “এই প্রথম বার কমনওয়েলথে সোনা পেলাম আমি। এমন নয় যে আমার কাছে কমনওয়েলথের পদক ছিল না। আমার কাছে রুপো, ব্রোঞ্জ দুটোই আছে। কিন্তু সোনার পদক ছিল না। বাড়ি থেকে যখন এখানে এসেছিলাম, ঠিক করেই নিয়েছিলাম এ বার শুধু পদক নিয়ে বাড়ি ফেরা নয়, সোনার পদক নিয়েই ফিরব। আমার স্বপ্ন ছিল সোনার পদক জেতা। আর সেটা পূর্ণ হয়েছে। আমার সময়টা বেশ কয়েকদিন ধরে ভালো কাটছে না। ভারতেই একাধিক ম্যাচে আমাকে হারতে হয়েছে। ফলে এখানে এসে এই জয়টা আমার কাছে অনেকটাই বড় ও গুরুত্বপূর্ণ। আমি ভীষণ খুশি।”
বার্মিংহ্যামে সমর্থকদের পূর্ণ সমর্থন পেয়েছেন সাক্ষী। এই ব্যাপারে তিনি বলেন, “অলিম্পিকেও দর্শকরা ছিলেন। তবে এখানে যেভাবে দর্শকরা আমাকে তাতিয়েছে, সেটাই উত্তেজিত করেছিল আমাকে। এটা আমার কাছে বরাবরের জন্য একটা ভালো স্মৃতি তৈরি করে দিল। আমি জানি না কতদিন এই সাক্ষী সাক্ষী…. আওয়াজটা আমার কানের মধ্যে থেকে যাবি কুস্তির জন্য যাচ্ছি, সেখান থেকে ফিরছি তাতে সমর্থকরা যেভাবে সাড়া দিয়েছেন পুরো শরীরে শিহরণ তৈরি হয়ে উঠেছিল। বাড়তি মনোবল পাচ্ছিলাম। ৪-০ তে হেরে যাচ্ছিলাম, তাতেও আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিলাম, সাক্ষী হারলে চলবে না। মনে একটা আত্মবিশ্বাস বেড়ে গিয়েছিল তখন, দেশের মানুষ যখন হার মানেনি আমাকে জিততেই হবে। আর আমি জিতে দেখিয়েছি।”
পিছিয়ে থেকেও কামব্যাক করে সোনা জিতে নিয়েছেন সাক্ষী। এই নিয়ে সাক্ষী বলেন, “ম্যাচটা শুরু হওয়ার পর সেটা পড়তে, বুঝতে একটু সময় লাগে। তবে এই ম্য়াচে প্রথম ২ পয়েন্ট আমারই ছিল। তবে সেটা কোনও ভাবে কানাডার প্রতিপক্ষ নিয়ে যায়। তবে বার বার নিজেকে বলছিলাম কুস্তি যেন খারাপ না করি, আমার কাছে সময় রয়েছে। বিশ্রাম নেওয়ার সময়ও আমি নিজেকে বোঝাই যে আমি অ্যাটাক করতে পারব। আর ফেরার পরের নিজের প্রিয় মুভেই আমি ওকে হারিয়ে দিই।”
খারাপ সময় কাটিয়ে ওঠার জন্য সাক্ষী পাশে পেয়েছিলেন তাঁর পরিবার ও স্বামী সত্যওয়ার্ত কাদিয়ানকে। সত্যওয়ার্ত পেশায় কুস্তিগির। তিনি বলেন, “খারাপ সময় কাটানোর জন্য আমি পরিবারকে, আমার স্বামীকে পাশে পেয়েছিলাম। আমি যখন হারতাম তখন আমার স্বামী বলত, দেখে নিও পরে সব ঠিক হবে।”
সোনা জেতার দিন সাক্ষীর মনে পড়ে গিয়েছে তাঁর স্বামীর বলা একটি বিশেষ কথা। তিনি বলেন, “আমার স্বামী ভারতে যখন ট্রায়াল চলছিল তখন আমাকে বলেছিল, ‘ঈশ্বর যদি চায় আমাদের দু’জনের মধ্যে এক জনের কমনওয়েলথে যাওয়ার সুযোগ হোক, তা হলে আমি চাইব, সেটা যেন তোমার হয়।’ আর হয়েছেও তাই। ভারতে তখন ট্রায়ল চলছিল। কিন্তু আমারই আসা হল। আমাকে সব সময় ভরসা দিয়েছে আমার স্বামী।”