কলকাতা: কমনওয়েলথ গেমস (Commonwealth Games 2022) শুরু হতে আর মাত্র কয়েক দিন বাকি। তার আগে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ নিয়ে এলেন অলিম্পিকে ব্রোঞ্জজয়ী বক্সার লভলিনা বরগোহাইন (Lovlina Borgohain)। ‘রাজনীতি’র শিকার হয়েছেন অসমের বক্সার। গেমসের প্রস্তুতির জন্য পর্যাপ্ত প্রস্তুতিই নিতে পারছেন না। লভলিনার সঙ্গে জুড়ে রয়েছেন দুই বক্সিং কোচ। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সন্ধ্যা গুরুংও। দ্রোণাচার্য কোচ যাতে তাঁর ছাত্রী লভলিনাকে ট্রেনিং করাতে পারেন, তার সুযোগই দেওয়া হচ্ছে না। বারবার বলার পর অনেক দেরিতে ট্রেনিং ক্যাম্পে ঢুকতে দেওয়া হয়েছিল ওই দুই কোচকে। দুই কোচ লভলিনার সঙ্গেই গিয়েছিলেন বার্মিংহ্যাম। কিন্তু এক কোচকে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। অন্য কোচ সন্ধ্যাকে গেমস ভিলেজে ঢুকতেই দেওয়া হয়েছে। এতে যে প্রস্তুতিতে প্রভাব পড়েছে, তা নিয়েই সোচ্চার হয়েছেন লভলিনা। অসমের মেয়ের এই চাঞ্চল্যকর অভিযোগ বার্মিংহ্যাম গেমসের আগে রীতিমতো চাপে ফেলে দিয়েছে বক্সিং (Boxing) ফেডারেশনের কর্তাদের। টুইট করে নিজের মনোভাব পরিষ্কার করে দিয়েছেন টোকিওতে পদক পাওয়া বক্সার।
লভলিনা লিখেছেন, ‘খুব দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, আমাকে মানসিক ভাবে নির্যাতন সহ্য করতে হচ্ছে। যে দুই কোচ অলিম্পিক থেকে পদক আনতে সাহায্য করেছেন, তাঁদের ট্রেনিং থেকে বারবার সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এতে যে কমনওয়েলথ গেমসের জন্য আমার প্রস্তুতি যে মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে, তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। শুধু প্রস্তুতি নয়, প্রতিযোগিতার সময়ও আমাকে নানা ভাবে সমস্যার মুখে ফেলা হয়। হাজার বার হাত জোড় করে অনুরোধ করার পর দুই কোচকে ট্রেনিংয়ে জায়গা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এতে যে আমার অসুবিধা হচ্ছে, মানসিক ভাবে বিপযস্ত হয়ে পড়ছি, তা নিয়ে কেউ ভাবছে না।’
লভলিনার এই মারাত্মক অভিযোগ বিতর্কের মুখে ফেলে দিয়েছে বক্সিং কর্তাদের। কোচ সন্ধ্যা গুরুংকে গেমস ভিলেজে জায়গা দেওয়া হয়নি। এর ফলে গেমসের শেষবেলার প্রস্তুতি নিতে যে বেশ চাপে পড়ে গিয়েছেন লভলিনা, তাও তুলে ধরেছেন। তাঁর কথায়, ‘আমার কোচ সন্ধ্যা গুরুংকে ভিলেজে জায়গা দেওয়া হয়নি। মাত্র ৮ দিন পর আমার প্রথম বাউট। তার আগে নিজের ঠিকঠাক প্রস্তুতি নিতে গেলে ওঁকে দরকার। কিন্তু আমার কোচকে ঢুকতেই দেওয়া হচ্ছে না। আমার দ্বিতীয় কোচকে দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।’
— Lovlina Borgohain (@LovlinaBorgohai) July 25, 2022
লভলিনা স্পষ্ট টুইটারে লিখেছেন, ‘আমি বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও তা রাখা হয়নি। এটা কার্যত মানসিক নির্যাতনই। এমন পরিস্থিতিতে পড়েছি যে, গেমসে ফোকাস করব কী ভাবে, বুঝতে পারছি না। এই রকম ঘটনার জেরেই আমি বিশ্ব মিটে ভালো ফল করতে পারিনি। এই রাজনীতির শিকার হয়ে কমনওয়েলথ গেমসেও খারাপ ফল করতে চাই না। এই রাজনীতির বলয় ভেঙে আমি দেশের জন্য পদক জিতব, এই আশাই রাখি।’
ব্যক্তিগত কোচ বনাম ফেডারেশনের এই টক্কর নতুন নয়। এর আগেও অনেক অ্যাথলিট এ নিয়ে নানা গেমসের সময় নানা অভিযোগ তুলে ধরেছেন। টোকিও গেমসের সময়ও টেবল টেনিস প্লেয়ার মনিকা বাত্রা অভিযোগ তুলেছিলেন, ব্যক্তিগত কোচের কাছে তাঁকে ট্রেনিং করতে দেওয়া হচ্ছে না। এমন ঘটনা যে অ্যাথলিটের উপর চাপ তৈরি করে, তা যেমন ঠিক, তেমনই ফেডারেশন যে কোচকে নিয়োগ করে, তাঁরও কাজ অ্যাথলিট যাতে পদক জেতেন, তার উপযুক্ত করে তোলা। ফলে জাতীয় কোচ বনাম ব্যক্তিগত কোচের এই চিরাচরিত দ্বন্দ্ব থেকে যায়। সেই দ্বন্দ্বের তালিকায় লভলিনা নতুন নাম। তাঁর মতো তারকা বক্সারের দাবির সামনে ফেডারেশন নতিস্বীকার করে কিনা, সেটাই দেখার।