বার্মিংহ্যাম: কতটা পথ হাঁটলে তবে অ্যাথলিট হওয়া যায়? প্রশ্নটা আরও সোজাসাপ্টা হতে পারে— কতখানি ট্রেনিং করলে তবে পদক জেতা যায়! শুধু ট্রেনিংয়েও পদকের দেখা নাও মিলতে পারে। তার জন্য অনেক আত্মত্যাগ। পদক পেতে হলে কঠোর অনুশীলন আর সংযত জীবনযাপন দরকার। কেরলের ২৩ বছরের তরুণ মুরলী শ্রীশঙ্কর(Murali Sreeshankar) গতকাল রাত থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় রাজত্ব করছেন। সেই সোশ্যাল মিডিয়া (Social Media)যা ব্যবহার করতে হলে নিতে হত বাবা তথা কোচের অনুমতি। পালাক্কড় জেলার বাসিন্দা এস মুরলীর পরিবারে অনেক কড়া নিয়ম। ১১টার পর দেখা যাবে না টিভি। পরিবারের সকলকে এই কঠোর নিয়ম মেনে চলতে হয়। মুরলীর গল্প শুনলে অনেকেই অবাক হয়ে যাবেন। মোবাইল এখন ছেলেবেলা থেকেই সঙ্গী যে কোনও বাচ্চার। সেখানে ১৮ বছরের জন্মদিনের পর মুরলী জেনেছিলেন, কাকে বলে ফেসবুক, হোয়্যাটসঅ্যাপ। ইনস্টার জগতে ঘোরাঘুরি তো আরও পরে। বাবা তথা কোচ এস মুরলীর(S. Murali) ‘মিলিটারি শাসন’ নিয়ে কোনওদিন টুঁ শব্দটিও করেননি শ্রীশঙ্কর। বরং তাঁর বিশ্বাস ছিল এই কড়া অনুশাসনই একদিন সাফল্য এনে দেবে। তা স্বীকার করতেও দ্বিধা করছেন না। শ্রীশঙ্করের কথায়, ‘একমাত্র বাবা জানে কোন কাজে আমার ভালো হবে।’
কমনওয়েলথ গেমসে লং জাম্পে ঐতিহাসিক রুপো পাওয়া শ্রীশঙ্করের বাবা নিজেও একসময়ের অ্যাথলিট ছিলেন। মা কেএস বিজিমলও এক সময় স্প্রিন্টার ছিলেন। ইভেন্ট ছিল ৮০০ মিটার। অ্যাথলিট পরিবারে বড় হওয়া শ্রীশঙ্কর ছোট থেকেই জানতেন তাঁকে দৌড়তে হবে। বাবা-মায়ের মতো। শঙ্কু (শ্রীশঙ্করের ডাক নাম)-র মতো ছেলে পেয়ে নিজেদের ধন্য মনে করছেন কেএস বিজিমলরা। ভারতের সেরা লং জাম্পারের বাবা-মা দু’জনের গলাতেই ছেলের প্রশংসা। ছোট, বড় সকলকে সম্মান জানানো, সহজ পদ্ধতির অবলম্বন না করে কঠোর পরিশ্রমে বিশ্বাসী ছেলেকে কবে যে শেষবার বকা দিয়েছেন, মনেই করতে পারছেন না তাঁরা। প্র্যাক্টিসের সময় কোনও রকম মিউজিক পছন্দ করেন না। শ্রীশঙ্করের ট্রেনিংয়ের সময় বাড়ির সদস্যদের মোবাইল ফোন ব্যবহার বন্ধ রাখতে হয়। এটাই অলিখিত নিয়ম। শ্রীশঙ্করের ডিকশেনারিতে ‘পার্টি’ শব্দের মানেই আলাদা। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় বসলে ভাজাভুজি আর ফ্রুট জুস খান।
খেলাধুলোর পর পড়াশোনা। যত উঁচুতেই ওঠো, যতই ব্যস্ত থাকো- দিনের শেষ বই খুলে বসতেই হয় শ্রীশঙ্করকে। ব্যস্ত শিডিউলের মধ্যেও পড়াশোনাকে অবহেলার করার সাহস পাননি। পৃথিবীর যে মুলুকেই প্রতিযোগিতা থাকুক, পড়ার বই সব সময় থাকে তাঁর ব্যাগে। দশম এবং দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় ৯৫ শতাংশের বেশি নম্বর নিয়ে পাশ করেন। স্পোর্টস কোটায় ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এন্ট্রাস পরীক্ষায় কেরলের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন শ্রীশঙ্কর। তাঁর নিট পরীক্ষার ফল কেরলের যে কোনও কলেজে ডাক্তারি পড়ার সুযোগ করে দিতে পারে। কিন্তু শ্রীশঙ্করের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এর একটাও নয়। অঙ্ক নিয়ে স্নাতক স্তরে ভর্তি হয়েছেন। অনুশীলন, প্রতিযোগিতা সামলে বিএসসি কমপ্লিট করে ফেলতে পারবেন।
Keep watching that 8.08m jump on a loop…it’s a Silver Medal for #India from Murli Sreeshankar ??#CommonwealthGames2022
Congratulations India, Congratulations Sree!@birminghamcg22 pic.twitter.com/Rzec3zHWyO
— Athletics Federation of India (@afiindia) August 5, 2022