কলকাতা: উড়িয়ে দেওয়া সাদা বলটার দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে ছিলেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। মাহির মতোই কানায় কানায় পূর্ণ ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামের দর্শক, সারা দেশ, সারা ক্রিকেট বিশ্বের চোখ তখন সেদিকেই। আকাশ দিকে ধেয়ে যাওয়া বলটি সীমানা পার করে আছড়ে পড়লেই স্বপ্ন সত্যি হবে ১৩০ কোটি মানুষের। হলই তাই। আলতো করে ব্যাটটা ঘুরিয়ে নিলেন কোটি কোটি দেশবাসীর স্বপ্ন পূরণের কারিগর। অপর প্রান্ত থেকে দু বাহু ছড়িয়ে আলিঙ্গনের জন্য ছুটে এসে জড়িয়ে ধরলেন যুবরাজ সিং। বুকের খাঁচায় সতীর্থকে আশ্রয় দিলেন মাহি। কমেন্ট্রি বক্স থেকে গমগমে গলায় ভেসে আসা ধারাভাষ্যকার রবি শাস্ত্রীর কথাগুলো ঢেকে যাচ্ছে ওয়াংখেড়ের শব্দব্রহ্মে। অলিতে, গলিতে আতসবাজির রোশনাই, অকাল দীপাবলি। ২৮ বছরের অপেক্ষার অবসান। ভাবতে বসলে মনে হবে এইতো সেদিনের কথা…।
২০১১ সালের ২ এপ্রিল দিনটি ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে স্বর্ণক্ষরে লেখা রয়েছে। সচিনের স্বপ্ন, গম্ভীরের ধৈর্য, ধোনির অসাধারণ ফিনিশিংয়ে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে ২৮ বছর পর ওডিআই বিশ্বকাপ জিতে নিয়েছিল ভারত। দেখতে দেখতে বিশ্বজয়ের এক যুগ পূর্তি। ১২টা বছর। ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে সেদিন প্রথমে ব্যাট করে স্কোরবোর্ডে ২৭৬ রান তোলে শ্রীলঙ্কা। কুমার সাঙ্গাকারার অপরাজিত ১০৩ রানের ইনিংস। রান তাড়া করতে নেমেই বিপত্তি। বীরেন্দ্র সেওয়াগ ও সচিন তেন্ডুলকরের উইকেট দ্রুত হারিয়ে ফাইনাল ম্যাচ হেরে যাওয়ার শঙ্কা চেপে বসে। স্তব্ধ হয়ে যাওয়া ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে ভারতকে ম্যাচে ফেরায় গৌতম গম্ভীর ও বিরাট কোহলির জুটি। বিরাট ৩৫ রানে আউট হয়ে যান। এরপর ভারতের ভরসা হয়ে নামেন ক্যাপ্টেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। গম্ভীরের ধৈর্যশীল ৯৭ রান ও মাহির ৯১ রানের দুর্দান্ত ইনিংসে ভর করে জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে যায় ভারত। ৪৮তম ওভারের দ্বিতীয় বলে ধোনির গগনচুম্বী ছয়ের কথা ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে গাঁথা হয়ে রয়েছে।
কাকতালীয়ভাবে ১২ বছর পর ফের একবার ভারতের মাটিতে ওডিআই বিশ্বকাপ। ১১’র বিশ্বজয়ী দলের মধ্যে বিরাট কোহলি ছাড়া বর্তমান দলে আর কেউ নেই। স্বপ্ন জয়ের পর ব্যাট-প্যাড তুলে রাখেন মাস্টার ব্লাস্টার। মহেন্দ্র সিং ধোনি বহুদিন হল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছেন। সেদিনের তরুণ ক্রিকেটার বিরাট এখন মহীরূহ। ক্যাপ্টেন হয়ে পারেননি, কেরিয়ারের শেষ (হয়তো) বিশ্বকাপে ব্যাটার কোহলি কি ১১’র সেই রাত ফিরিয়ে আনতে পারবেন?