Controversial Cricket Story: সামান্য টাকার লোভে যেদিন দেশ বেচে দিয়েছিল পাক ক্রিকেটাররা

TV9 Bangla Digital | Edited By: তিথিমালা মাজী

Aug 15, 2022 | 10:00 PM

2010 Pakistan Spot-fixing Scandal: ভদ্রলোকের খেলায় কলঙ্কের ছিটে। ২০১০ সালে ইংল্যান্ড সফরে ম্যাচ গড়াপেটার অন্ধকারে ডুবেছিল পাকিস্তান ক্রিকেট। চারিদিকে ছিছিকার, ধিক্কার।

Controversial Cricket Story: সামান্য টাকার লোভে যেদিন দেশ বেচে দিয়েছিল পাক ক্রিকেটাররা
বিতর্কের ক্রিকেট : ক্রিকেটের বিতর্ক

Follow Us

আলো আর অন্ধকার, দুই-ই পা মেলায় ইতিহাসের মিছিলে। উজ্জ্বলতম অতীত যেমন ফিরে আসে স্মৃতিতে, তেমনই চুপিসারে হানা দেয় কলঙ্কও। ক্রিকেট ইতিহাস যেমন রেকর্ড, সাফল্য, নায়কদের খোঁজ দেয়, তুলে ধরে বিতর্কিত ঘটনাও। ক্রিকেট ইতিহাসের মহাবিতর্কিত নানা গল্পের খোঁজ দিল TV9 Banglaতিথিমালা মাজী তুলে ধরলেন দ্বিতীয় কিস্তি।

নিছক ভুল বা ক্ষণিকের বিচ্যুতি নয়- ম্যাচ ফিক্সিং, স্পট ফিক্সিং ক্রিকেট বিশ্বে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। নীতির জলাঞ্জলি দিয়ে কিছু অর্থের বিনিময়ে দেশ, দল এবং সহ খেলোয়াড়দের সঙ্গে ‘বেইমানি’। ২০১০ সালে এমনই এক ঘটনা তোলপাড় করে দিয়েছিল ক্রিকেট বিশ্বকে। স্পট ফিক্সিংয়ের মতো ঘৃণ্য অপরাধে পাকিস্তানের একাধিক খেলোয়াড় জড়িয়ে পড়েন। অভিযোগের তির উঠেছিল সেই দেশের ক্রিকেট বোর্ডের দিকেও। স্টিং অপারেশন, তদন্ত, হাতকড়া, নিষেধাজ্ঞা, বিতর্কে জর্জরিত পাক ক্রিকেটের সেই ‘কালো অধ্যায়’ ফিরে দেখা আরও একবার।

চার বছরের বিরতির পর টেস্ট দলে ফিরেছিলেন শাহিদ আফ্রিদি। ফিরেই পেলেন নেতৃত্বের গুরুদায়িত্ব। অথচ ইংল্যান্ডে লর্ডস টেস্টে ১৫০ রানে হারের পর সবাইকে অবাক করে দিয়ে হঠাৎই টেস্ট ফরম্যাট থেকে অবসর ঘোষণা তাঁর। মেনে নিতে পারেননি পাকিস্তানের প্রাক্তন ক্রিকেটাররা। ইমরান খান তো বলেই দিলেন, “পালিয়ে গেল আফ্রিদি। যাওয়ার আগে পাক ক্রিকেটের পরিস্থিতি আরও জটিল করে দিয়ে গেল।” স্টেডিয়ামের লাখো দর্শকের করতালি, সতীর্থদের গার্ড অব অনারে বিদায়টা হয়নি। সত্যিই কি পালিয়ে বেঁচেছিলেন আফ্রিদি? নাকি পাকিস্তান ক্রিকেটের ঘুণ ধরা চেহারাটা তাঁর সামনে প্রকট হতেই পেয়েছিলেন বড় ঝটকা। আসলে লর্ডস টেস্টে লজ্জার হারের পর আফ্রিদির হঠাৎ সিদ্ধান্তের বীজ বপন হয়েছিল ২০১০ সালের জুন মাসে। শ্রীলঙ্কায় এশিয়া কাপ খেলতে গিয়ে।

টুর্নামেন্টের ফাঁকে মাজহার মজিদ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে একদিন শ্রীলঙ্কার সমুদ্র সৈকতে ঘুরতে চলে গিয়েছিলেন আফ্রিদি। মাজহার ছিলেন পাক ক্রিকেটারদের এজেন্ট। সৈকতে বেড়ানোর সময় মাজিদের মোবাইল নিয়ে খেলা করতে গিয়ে জলেই ফেলে দিল তার ছেলে। মোবাইল ভেসে না গেলেও যন্ত্র কাজ করা বন্ধ করে দিল। পরের মাসেই ইংল্যান্ড সফর পাকিস্তানের। লন্ডনে আফ্রিদির এক বন্ধুর পরিচিতর দোকানে মোবাইলটি সারানোর জন্য দিয়ে এসেছিলেন মাজিদ। ফোন সারতে গিয়ে যত বিপত্তি। কৌতূহলবশত দোকানের মালিক মাজিদের ফোনের এসএমএস পড়ে ফেলেন। সেখান থেকে খবর যায় বন্ধু মারফত আফ্রিদির কানে। কী ছিল সেই এসএমএসে? দলের ওপেনিং ব্যাটার সলমন বাটের সঙ্গে নিয়মিত মেসেজ মারফত কথা হত জুয়াড়ি মাজিদের। ম্যাচ গড়াপেটা সংক্রান্ত মেসেজের বিস্ফোরক কথোপকথন মোবাইল সারানোর দোকানি, আফ্রিদি, তাঁর বন্ধু ছাড়াও আরও কয়েকজনের কানে গিয়েছিল। নিউজ অব দ্য ওয়ার্ল্ডের সাংবাদিকদের কানে খবরটা কেউ পৌঁছে দেওয়ার কাজটা আরও দায়িত্ব নিয়ে করে দিয়েছিলেন কেউ।

২০০৯ সালে লাহোরে শ্রীলঙ্কার টিমবাসে সন্ত্রাসবাদী হামলার পর ইংল্যান্ডে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে দুই টেস্টের ‘হোম সিরিজ’ খেলে পাকিস্তান। লর্ডসে প্রথম টেস্ট ১৫০ রানে বিশ্রী হারের পর বিতৃষ্ণায় সরে দাঁড়ালেন আফ্রিদি। ইংল্যান্ডে যাওয়া ইস্তক দলের ছেলেদের মাজিদের থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন আফ্রিদি। কোচ এবং ম্যানেজমেন্টকে আসন্ন ঝড়ের আগাম পূর্বাভাস দিয়েও কাজ হয়নি। কিছুই বদলালো না। জুয়াড়িদের সাজঘরে উঁকিঝুঁকি, ক্রিকেটারদের আশেপাশে ঘুরঘুর করা চোখ এড়ায়নি তাঁর। দেখেশুনে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্তটাই বেটার মনে করলেন। দ্বিতীয় টেস্ট থেকে অধিনায়কের তাজ গেল সলমন বাটের মাথায়।

নিউজ অব দ্য ওয়ার্ল্ডের এক্সক্লুসিভ স্টোরি

ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ শুরু হল ২৯ অগাস্ট থেকে। প্রথম দুটি টেস্টে হারের পর ওভালে তৃতীয় টেস্টে ৪ উইকেটে জেতে পাকিস্তান। ১৮ অগাস্ট লর্ডসে চতুর্থ টেস্টের প্রথম দিন বাঁ হাতি পেসার মহম্মদ আমিরের নির্বিষ নো বল দেখে কেউ ভাবতেও পারেনি সেটা ঐতিহাসিক গড়াপেটা কেলেঙ্কারির প্রথম ধাপ। বিস্ফোরণ ঘটল দিন দুয়েক পর। জানা গেল, আমিরের দুটি এবং তাঁর বোলিং পার্টনার মহম্মদ আসিফের একটি নো বল ছিল জুয়ার অংশ। মাজহার মাজিদের সহযোগিতায় স্পট ফিক্সিংয়ের মূল হোতা পাকিস্তানের অধিনায়ক সলমন বাট। ব্রিটেনের অধুনালুপ্ত নিউজ অফ দ্য ওয়ার্ল্ড ট্যাবলয়েডের স্টিং অপারেশনে-এ উন্মোচিত এই কেলেঙ্কারি ক্রিকেট বিশ্বকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। ঘটনার এক যুগ পরেও ক্রিকেটপ্রেমী মনে তাজা সেই কলঙ্কিত অধ্যায়।

হোম অব ক্রিকেটে সেদিন সকাল থেকেই আবহাওয়ায় যেন গুমোটভাব। তিন বিপথগামী তরুণ ক্রিকেটারের উপর নিষেধাজ্ঞা, তদন্ত, কারাবাসের খবরে কয়েকদিন তোলপাড় হয়ে রইল। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে পাকিস্তানের নাম মুছে দেওয়ার দাবিতে উঠল রব। লন্ডন কোর্টে দীর্ঘ শুনানির পর ২০১১ সালে কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন বাট, আমির ও আসিফ।

Next Article