শরদিন্দু মুখোপাধ্যায়
শরীরী ভাষাই বুঝিয়ে দিচ্ছিল পাকিস্তান (Pakistan) এ বারে ভারতকে হারাতে কতটা মরিয়া। বাবর-রিজওয়ান-শাহিন আফ্রিদিরা তাদের পূর্বসূরিদের অপমান ঘোচাল। কথায় বলা হয় ‘আনলাকি থার্টিন’। ওই অপয়া তেরোতেই আটকে গেল বিরাটরা। ম্যাচ জিততে গেলে কখনও কখনও ভাগ্যেরও দরকার হয়। বিরাট যখন টস হারল, তখনই ম্যাচে অ্যাডভান্টেজ হয়ে গেল বাবররা। এই উইকেটে শুরুতে ব্যাট করে স্কোরবোর্ডে বড় রান তোলা অনেকটাই কষ্টকর। তবু বলব, শেষ দেড় মাস বিরাট-রোহিতরা এখানে রয়েছে। এই পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছে। তা সত্ত্বেও আজ দাঁড়াতেই পারল না রোহিত-রাহুল-সূর্যকুমাররা। ওয়ার্ম আপ ম্যাচে রোহিত-রাহুলদের ব্যাটিং দেখে ভেবেছিলাম বিশ্বকাপে হয়তো ওরা ফর্মে ফিরেছে। কিন্তু শাহিন আফ্রিদির ওই স্পেলটাই ভারতকে (India) ম্যাচ থেকে কয়েক যোজন দূরে ছিটকে দিল।
আফ্রিদি যে বলে রোহিতকে প্রথম ওভারে আউট করল তা এককথায় অনবদ্য। রাহুলকেও যে বলে আউট করল তাও অন্যতম সেরা ডেলিভারি। ওখানেই মানসিক ভাবে অনেকটা উজ্জীবিত হয়ে গেল পাকিস্তান। ৬ রানে ২ উইকেট পড়ে গেলেও ভারতের ১৫১ স্কোরের পিছনে অবদান অবশ্যই বিরাট কোহলির। চাপের মুহূর্তে যে ভাবে ব্যাটিং করল, তাতে বুঝিয়ে দিল কেন এখনও তিন ফরম্যাটেই ও বিশ্বের সেরা ব্যাটার। অস্ট্রেলিয়া সফরে পরিণত ঋষভ পন্থকে দেখেছিলাম। টি-২০ বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে আবার যেন সেই পুরনো অপরিণত পন্থকে দেখলাম। শট নির্বাচনে দক্ষতা দেখালে ভারতের স্কোর ১৬০ থেকে ১৭০ হত। কারণ পন্থ আউট হওয়ায় উল্টো প্রান্তে কাউকে ঠিক মতো পেল না বিরাট। তাই স্কোরবোর্ডে রানও বেশি উঠল না। টপ অর্ডার ফেল করলে ভারতের কি হতে পারে, তা প্রথম ম্যাচেই দেখা গেল। বিরাট ৫৭ না করলে স্কোর আরও কম হত। হার্দিক পান্ডিয়া ওর খেলা থেকে ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে। স্লগ ওভারে রানই করতে পারল না। তবে প্রশংসা করব পাক বোলারদেরও। হাসান আলি, শাহিন আফ্রিদিদের আটোসাটো বোলিং মনে করাল ওয়াসিম আক্রম, ওয়াকার ইউনিসদের কথা। সেই কবে শুনেছিলাম, পাকিস্তান পেসারদের জন্ম দেয়। শাহিন আফ্রিদি, হাসান আলিরা সেই পুরনো কথাকে আবার মনে করাল।
দেড়শো রানের পুঁজি নিয়েও লড়া সম্ভব। ম্যাচ জেতা সম্ভব। কিন্তু তার জন্য ভালো বোলিং আর ফিল্ডিং করতে হয়। বিরাটদের দেখে মনে হচ্ছি ওরা আত্মতুষ্টিতে ভুগছে। আর তার খেসারত দিতে হল। এত বাজে ফিল্ডিং করে এই ম্যাচ জেতা যায় না। আর বোলিং আরও জঘন্য। আইপিএল খেলে বিশ্বকাপ, বিরাটরা মানসিক ভাবেও ক্লান্ত। সেই ইংল্যান্ড সফর থেকে টানা খেলে যাচ্ছে। তবে বিশ্বকাপে এ সব অজুহাত মানায় না। বুমরা-ভুবনেশ্বর-সামিদের বলে না ছিল গতি, না ছিল ভালো সুইং। রিজওয়ান-বাবর জুটি অনায়াসে ব্যাটিং করে ম্যাচ বার করে দিল। ওদের উইকেটই ফেলতে পারল না ভারত। অনেকটা প্রস্তুতি সেরেই কিন্তু এ বার বিশ্বকাপ খেলতে এসেছে পাকিস্তান। ভারতকে হারাতে এতটাই মরিয়া হয়ে উঠেছিল ওরা যে, প্রত্যেক বোলারের ভিডিও দেখেই তার দুর্বলতা খুঁজে বার করেছে। বাবর আজম কতটা জাতের ব্যাটার তা ও প্রমাণ করল। কারণ বড় মঞ্চে নিজেকে প্রমাণ করতে হয়। চাপের ম্যাচে কি ভাবে ব্যাটিং করতে তা দেখিয়ে দিল পাকিস্তানের ওপেনিং জুটি। আর বিশ্বকাপের আসরে ও দেখিয়ে দিল এ বারের কাপটা জিততেই ওরা এসেছে।
ভারতের দুর্বলতা অনেক জায়গায়। এই দুর্বলতা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে হবে। না হলে কিন্তু গ্রুপ পর্ব থেকেই ছুটি হয়ে যাবে। পরের ম্যাচ নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে। ওই ম্যাচটাই ডু অর ডাই। কারণ এই গ্রুপ থেকে প্রথম দুটো দল সেমিফাইনাল খেলবে। কিউইদের কাছে হেরে গেলে তখন পাকিস্তান আর নিউজিল্যান্ডের দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া উপায় থাকবে না। কারণ বিরাট অঘটন না ঘটলে আফগানিস্তান, স্কটল্যান্ড বা নামিবিয়ার মধ্যে কেউ সেমিফাইনালে উঠবে না। সূর্যকুমার যাদব, হার্দিক পান্ডিয়া, ভুবনেশ্বর কুমার, বরুণ চক্রবর্তীদের পারফরম্যান্স নিয়ে কিন্তু দুশ্চিন্তা থেকেই গেল। ভারতকে বিশ্বকাপে ভালো ফল করতে হলে শ্রেয়স আইয়ারকে রিজার্ভ দল থেকে ইতিমধ্যেই মূল দলে ফেরানো উচিত। শার্দূল ঠাকুরকে খেলানো উচিত পরের ম্যাচে। দীপক চাহারকেও রিজার্ভ টিম থেকে প্রাথমিক দলে ফেরানো উচিত। বরুণ চক্রবর্তীর জায়গায় খেলুক অশ্বিন। ওর অভিজ্ঞতা সম্পদ হতে পারে দলের। বিশ্বকাপে ভারতকে প্রথম বার হারতে দেখলাম। তাও এ রকম ১০ উইকেটে লজ্জার হার। শাস্ত্রী-ধোনিরা আজকের হার নিয়ে পর্যালোচনা করবে ঠিকই। পরের ম্যাচে দলগঠন যদি ঠিকঠাক না হয়, তা হলে এ বারের বিশ্বকাপে বিরাটদের বিদায়ঘণ্টা বেজে যাবে।