কলকাতা: শুধুই কি কুসংস্কার! একেবারেই না। মেয়ের প্রতি বাবার ভালোবাসাও। মেয়ে শেফালি ভার্মাকে ক্রিকেটার বানাতে কম কাঠখড় পোড়াতে হয়নি রোহতকের সঞ্জীব ভার্মার। নিয়মিত পড়শিদের গঞ্জনা শুনতে হয়েছে। মেয়ে আবার ক্রিকেট খেলবে! সমাজের সঙ্গে লড়াই, নানা বিদ্রুপ সহ্য করতে হয়েছে। শেফালি ভারতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার পর থেকে জুটেছে বাহবাই। বাকি সব তখন অতীত। আর মেয়ে যখন কেরিয়ারের সেরা সাফল্যের দিকে, বাবা একটু কুসংস্কারী কি হয়ে উঠতে পারেন না? এমনটাই হলেন সঞ্জীব ভার্মা। ভারতের জয় সূচক রান হওয়ার আগে, কাউকে জায়গা থেকে উঠতে দিলেন না শেফালির বাবা। অবশেষে মেয়ের হাতে বিশ্বকাপ! ইতিহাসের মুহূর্ত। তার জন্য কোনও কিছুর সঙ্গে আপোস নয়…। বিস্তারিত TV9Bangla-য়।
পচেস্ট্রুমে ভারতের অনূর্ধ্ব ১৯ দল যখন ফাইনাল খেলছে, রোহতকের ভার্মা পরিবারে উচ্ছ্বাস, আশঙ্কা, আতঙ্ক মিলিয়ে এক অদ্ভূত পরিস্থিতি। মেয়েদের ক্রিকেটে এর আগে কখনও বিশ্বকাপ জেতেনি ভারত। তীরে এসে তরী ডুববে না তো! ইংল্যান্ডের বোলিং আক্রমণ এ বারের বিশ্বকাপের অন্যতম সেরা। ফাইনালে ভারত বনাম ইংল্যান্ড, লড়াইটা মূলত ছিল ভারতীয় ব্যাটিং বনাম ইংল্যান্ড বোলিং। প্রথমে ফিল্ডিং করে ভারত। আশঙ্কা সেখানেই ছিল। ইংল্য়ান্ড যদি বড় রান করে! ভারতীয় ব্যাটিংয়ে যদি বিপর্যয় হয়! ভারতীয় বোলারদের দাপটে ইংল্য়ান্ড মাত্র ৬৮ রানেই অলআউট। ততক্ষণে একটু স্বস্তি ফিরেছে। কিন্তু সাময়িক। ৬৯ রানের লক্ষ্য আগে পেরোতে হবে, তারপর ট্রফি তোলার সুযোগ হবে। ভার্মা পরিবারের মেয়ে শেফালি আগেও একটা বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলেছেন। সিনিয়র বিশ্বকাপ খালি হাতেই মাঠ ছাড়তে হয়েছিল। এ বার!
ভারতের হয়ে ওপেন করেন শেফালি ও শ্বেতা শেরাওয়াত। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বোলাররা ভালো মতোই জানেন শেফালির দক্ষতা। প্রতিটা দলেরই লক্ষ্য থাকে শেফালিকে দ্রুত আউট করে প্রতিপক্ষ শিবিরে চাপ বাড়ানো। এ দিন শেফালি আউট হতেই আতঙ্ক বাড়ে ভার্মা পরিবারে। শেফালি যে অ্যাকাডেমিতে ক্রিকেট শিখেছিলেন সেখানেই ম্যাচ দেখার ব্য়বস্থা হয়েছিল। শেফালির অ্যাকাডেমির সতীর্থ, কোচ, বাবা সঞ্জীব ভার্মা এবং পরিবারের আরও অনেকেই ছিলেন। মেয়ের জন্য এ বার ‘কড়া’ হলেন সঞ্জীব বর্মা। ম্যাচ শেষ না হওয়া অবধি নির্দিষ্ট জায়গা থেকে কাউকে নড়তে অবধি দিলেন না। তিনি একাই যেন ফুটবল মাঠের সেই পরিচিত শব্দ ‘পুলিশ’ মার্কিংয়ে রেখেছিলেন প্রত্যেককে। শেফালি আউট হতেই একজনকে বলে ওঠেন, এখানে বসে মেয়েটাকে আউট করে দিলে! এমন নানা ঘটনাই ঘটল রোহতকের ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে। শেষ অবধি মেয়ের হাতে ট্রফি উঠতেই আনন্দ, উচ্ছ্বাস, সাফল্যের কান্না, সব মিলে মিশে একাকার।