রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর ১৫৬-৬ (২০ ওভারে)
চেন্নাই সুপার কিংস ১৫৭-৪ (১৮.১ ওভারে)
৬ উইকেটে জয়ী চেন্নাই সুপার কিংস
দুবাই: একে রান নেই। তার উপর একের পর এক ক্যাপ্টেন্সি ছেড়েই চলেছেন। পাহাড়প্রমাণ চাপের মুখে দাঁড়িয়ে পুরনো বিরাট দেখা দিলেন আইপিএলে (IPL)। যে বিরাটকে (Virat Kohli) দেখার জন্য মুখিয়ে ছিল কুড়ি-বিশের দুনিয়া, ফ্র্যাঞ্চাইজি, এমনকি ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টও। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে কিং কোহলির রানে ফেরাটা অত্যন্ত জরুরি। বিরাট শুরুটাও করলেন যেন সব প্রশ্নের জবাব দিতেই। ইনিংসের প্রথম বলেই চার মারলেন। উইকেটের চারপাশে শটের ফুলঝুরি শুরু করে দিয়েছিলেন। ডোয়েন ব্র্যাভোর বলে রবীন্দ্র জাডেজার হাতে ধরা না পড়লে অন্যরকম হতে পারত। হাফসেঞ্চুরি করার পর বিরাটের মুখে সেই উচ্ছ্বাস ধরা পড়ল না। বোঝাই যাচ্ছিল, সমালোচনায় কতটা বিদ্ধ তিনি। শেষ পর্যন্ত ৫৩ করেন আরসিবির (RCB) ক্যাপ্টেন। আজ কিন্তু শারজায় যেমন ব্যাটার বিরাটের দেখা মিলল, তেমনই ফিল্ডার বিরাট ও ক্যাপ্টেন বিরাটেরও প্রত্যাবর্তন হল। কিন্তু ঘটনাচক্রে তাঁর টিম যে ভুলটা করেছিল সেটারই মাশুল গুনতে হল। ধোনির (MS Dhoni) চেন্নাইয়ের (CSK) কাছে হারতে হল বিরাটের আরসিবিকে।
বিরাটের টিমকে এ দিন অবশ্য দুরন্ত টানলেন আর এক ওপেনার দেবদত্ত পাড়িক্কাল। গত মরসুম থেকেই অসাধারণ খেলছেন বাঁ হাতি তরুণ। যত ম্যাচ যাচ্ছে, ভারতীয় টিমের জন্য নিজের জোরালো দাবি পেশ করছেন। এই ম্যাচে ৫০ বলে ৭০ রান করে গেলেন। দেবদত্তের সবচেয়ে বড় প্লাস পয়েন্ট হল, কখনও তাড়াহুড়ো করেন না। ধীরে ধীরে এগিয়ে নিয়ে যান নিজেকে। চেন্নাইয়ের বিরুদ্ধেও তা-ই করলেন। ইনিংসের ভিত গড়ে দিলেন বিরাট আর দেবদত্ত মিলেই। জুটিতে এল ১১১ রান।
Back to back wins for @ChennaiIPL! ? ?
A convincing victory for #CSK as they beat #RCB by 6⃣ wickets. ? ? #VIVOIPL #RCBvCSK
Scorecard ? https://t.co/2ivCYOWCBI pic.twitter.com/qKo58oFAJb
— IndianPremierLeague (@IPL) September 24, 2021
শারজা মানেই রানের বন্যা। ছোট মাঠে স্পিনাররা খুব একটা কার্যকর হন না। তার উপর শিশিরের উৎপাৎ। যে কারণে টসে আগে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। প্রথম ১৩টা ওভার বিরাট-দেবদত্ত পার করে দিলেও বাকিরা কিন্তু তেমন টানতে পারলেন না টিমকে। বিশেষ করে এবি ডে ভিলিয়ার্স আর গ্লেন ম্যাক্সওয়েল প্রথম পর্বে যে দুর্ধর্ষ ফর্ম দেখিয়েছিলেন, তার ছিটেফোঁটা নেই দু’জনের খেলায়। এবিডি ১২ করলেন, ম্যাক্সি ১১। এই রকম ম্যাচ যদি জিততে হয়, বিশেষ করে শারজার মতো ছোট মাঠে, ২০০-র কাছেপিঠে পৌঁছতেই হয়। সেখানে আরসিবি থেমে যায় ১৫৬ রানে। পেসার হোন আর স্পিনার, কেউই বিশেষ পাত্তা পান না এই মাঠে। আরসিবিতে কবে টপ অর্ডারের ব্যাটাররা সবাই মিলে চাহিদা মিটিয়েছেন, মনে পড়ছে না।
শারজাতেও ব্র্যাভো অসাধারণ। বিরাট, ম্যাক্সওয়েল আর হর্ষ প্যাটেলের উইকেট তাঁর ঝুলিতে। ৪ ওভারে সব মিলিয়ে ২৪ রান দিয়ে নিলেন ৩ উইকেট। শার্দূল ঠাকুর এখন যে কোনও ফর্ম্যাটেই চমৎকার খেলছেন। জস হ্যাজেলউডদের মতো বোলাররা যখন বল ফেলার সুযোগ পাচ্ছেন না, তখন শার্দূল পর পর ফেরালেন দেবদত্ত আর এবিডিকে। ১টা উইকেট দীপক চাহারের।
আরসিবির মতোই শুরুতে শারজার মাঠে জমে গিয়েছিলেন সিএসকের দুই ওপেনার। ঋতুরাজ-দু প্লেসি জুটিতে তোলেন ৭১ রান। এক সময় মনে হচ্ছিল ওপেনিং জুটিতে টলাতে পারবেন না হার্ষাল প্যাটেলরা। সেই সময় আরসিবিকে প্রথম উইকেট এনে দেন যুজবেন্দ্র চাহাল। ২৬ বলে ৩৮ রান করে ফিরে যান ঋতু। তারপর বেশিক্ষণ ক্রিজে থাকতে পারেননি ডু প্লেসিও। আরসিবিকে দ্বিতীয় সাফল্য এনে দেন ম্যাক্সি। ২৬ বলে ৩১ রান করে প্যাভিলিয়নে ফেরেন ডু প্লেসি। তিন নম্বরে নামেন মইন আলি। ঠিকঠাকই এগোচ্ছিলেন। কিন্তু হার্ষাল প্যাটেল তুলে নেন মইন আলির উইকেট (২৩)। সোজা ক্যাপ্টেন কোহলির হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন মইন। ৩ উইকেট হারানোর পর অম্বাতি রায়ডুর সঙ্গে জুটি বাঁধার জন্য মাঠে নামেন সুরেশ রায়না। ভালো ভাবেই দলকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন দু’জন। তবে বেশিক্ষণ এই জুটিকে এগোতে দেননি হার্ষাল প্যাটেল। সেই জায়গা থেকে দলকে উদ্ধার করতে নামেন ক্যাপ্টেন কুল। মাহি-রায়না জুটিতে দলকে কাঙ্খিত জয় এনে দিল। ১১ বল বাকি থাকতেই ১৫৭ রান তুলে নিল সিএসকে।
কিভাবে একটা ম্যাচ শেষ করতে হয় বা এগিয়ে নিয়ে যেতে হয় সেটা চেন্নাই যতটা ভালো বোঝে আরসিবি এই জায়গাতেই বারবার হোঁচট খায়। তবে ক্যাপ্টেন বিরাটের প্রত্যাবর্তন সেই জায়গাতে যখন যুজবেন্দ্র চাহাল ঋতুকে ফেরান, ঠিক তার পর গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে নিয়ে এসে বোলিংয়ে বদল আনেন। এবং, উইকেটে জমে যাওয়া ডু প্লেসির উইকেট তুলে নেন। এই সময় উইকেটের খোঁজের জন্য বোলিং পরিবর্তন করাটা দরকার ছিল, কারণ দুই ওপেনার জুটিতে এগোচ্ছিল। ফিল্ডার বিরাটের কথাও বলতেই হয় আলাদা করে। চাহালের প্রথম উইকেট নেওয়ার বলটা যখন মারেন ঋতু সেই সময় বিরাট সামনে ঝাঁপিয়ে লুফে নেন তাঁর ক্যাচ। পরে আরও একটি ক্যাচ নেন ভিকে। তবুও দিনের শেষে কিন্তু সেই গুরুর কাছে শিষ্যের হার। তবে আশা করা যায়, এই হারের জন্য কিন্তু আরসিবি টিম ম্যানেজমেন্ট বিরাটের ক্যাপ্টেন্সি নিশ্চয়ই কেড়ে নেবে না। যদি তা হয়, তা হলে বলতে হবে লঘু পাপে গুরু দণ্ড।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর ১৫৬-৬ (দেবদত্ত ৭০, বিরাট ৫৩, ব্র্যাভো ৩-২৪, শার্দূল ২-২৯)। চেন্নাই সুপার কিংস ১৫৭-৪ (ঋতুরাজ গায়কোয়াড় ৩৮, অম্বাতি রায়ডু ৩২, ফাফ ডু প্লেসি ৩১, ধোনি ১১ নট আউট, রায়না ১৭ নট আউট, হার্ষাল ২-২৫, চাহাল ১-২৬)
৬ উইকেটে জয়ী চেন্নাই।