নয়াদিল্লি : যত দিন যাচ্ছে, ক্রিকেট দুনিয়ায় যেন ‘আশ্চর্য’ হয়ে উঠছেন মহেন্দ্র সিং ধোনি (MS Dhoni)। ৪২এ পা দেবেন কয়েক সপ্তাহ পর। কিন্তু আইপিএলে এখনও মাহি-ঝলক অটুট। এতটাই যে, তাঁর জন্য সারা দেশ উত্তাল। যে স্টেডিয়ামে খেলছেন, সব টিকিট বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। একবার ধোনিকে দেখার জন্য পাগলামি যেন বেড়েই চলেছে ভক্তদের। অন্য রাজ্য, এমনকি বিদেশ থেকে পর্যন্ত লোক উড়ে আসছেন এমএসডি-কে দেখতে। বিদেশে তো বটেই, ভারতীয় ক্রিকেটেও এমনটা এর আগে হয়নি। অতীতে একমাত্র সচিন তেন্ডুলকরকে ঘিরে এমন সার্বিক উন্মাদনা ছিল। রানমেশিন, ম্যাচ উইনার হলেও বিরাট কোহলিকে নিয়ে এত কাড়াকাড়ি নেই। বিয়াল্লিশের ধোনির জন্য যা দেখা যাচ্ছে। ধোনি আর কতদিন খেলবেন? এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা শুরু হয়ে গিয়েছে। চেন্নাই সুপার কিংসকে আবার ফাইনালে তুলেছেন মাহি। এ বারই কি আইপিএলের শেষ মরসুম হতে চলেছে তাঁর? ধোনি নিজে বলেছেন, হাতে যথেষ্ট সময় রয়েছে সিদ্ধান্ত জানানোর। ধোনি এমনই। যে সিদ্ধান্তই নিন না কেন, চমকে দেবেনই। ভারত এবং বিশ্ব ক্রিকেট দুনিয়ায় মাহি মৌতাতে মম করছে, তখন উল্টো মেরুতেও কেউ কেউ বাস করেন। ‘বুড়ো’ ধোনিকে দেখে তিনি রীতিমতো বিরক্ত। থামতে জানাও একটা আর্ট। সেটা সবাই জানেন না বা পারেন না। ধোনিকে হয়তো এই পরামর্শই দিচ্ছেন তিনি। এই ‘তিনি’ কে? নাম শুনলে চমকে যাবেন। বিস্তারিত TV9Bangla Sportsএর এই প্রতিবেদনে।
এ বারের আইপিএল সব অর্থে ধোনিময়। নেতৃত্ব, উইকেটের পিছনে ঠান্ডা মাথায় নেওয়া সিদ্ধান্ত, হাঁটুর চোট সত্ত্বেও টিমের প্রয়োজনে খেলা, ছয় কিংবা সাতে নেমে ছক্কায় মোহিত করে দেওয়া, ম্যাচের পর বিপক্ষ টিমের তরুণ ক্রিকেটারদের পরামর্শ দেওয়া— ভক্তদের মনে সুখস্মৃতির লিস্ট বাড়িয়েই চলেছেন ধোনি। শুধু কি তাই, এই তো কয়েক দিন আগেই নিজের শার্টে ধোনির অটোগ্রাফ নিয়েছেন সুনীল গাভাসকর। কিংবদন্তি ক্রিকেটার যা নিয়ে আপ্লুত হয়েছিলেন। কিন্তু তিনি যাঁর নেতৃত্ব ১৯৮৩ সালে বিশ্বকাপ জিতেছিলেন, সেই কপিল দেব কী বলছেন? ভারতের সর্বকালের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার কিন্তু মনে করছেন, এ বার থামার সময় এসেছে ধোনির। অবসরের সিদ্ধান্ত না জানানো কিংবা সিএসকের হয়ে ধোনির টানা খেলে যাওয়া একেবারেই মেনে নিতে পারছেন না। ধোনির এমন কাণ্ডকারখানায় বেশ বিরক্তই হচ্ছেন কপিল। কেন? কী যুক্তি দিচ্ছেন তিনি?
ধোনি জোয়ারের মধ্যে দাঁড়িয়েও কপিলের মন্তব্য, ‘১৫ বছর ধরে আইপিএল খেলছে ধোনি। এটাই তো যথেষ্ট। ওর যা করার ছিল, করে দিয়েছে। সিএসকের হয়ে চারবার আইপিএল জিতেছে। ওর কাছে আর কী চাওয়ার আছে? কেন ধোনিকে নিয়েই কথা বলে যাচ্ছি আমরা? ও সারা জীবন খেলে যাক, সেটাই কি চাইছি আমরা? কিন্তু সেটা তো সম্ভব নয়। হতে পারে না। ২০০৭ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, ২০১১ সালে ওয়ান ডে বিশ্বকাপ ওর ক্যাপ্টেন্সিতেই জিতেছে ভারত। ২০১৩ সালে ওর নেতৃত্বেই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতেছে ভারত। আর কী চাই!’
বিরক্ত হওয়ার পাশাপাশি ধোনির প্রশংসাও করছেন কপিল। তাঁর কথায়, ‘গত মরসুমে সিএসকের হাল খুব খারাপ ছিল। ৯ নম্বরে শেষ করেছিল। সেখান থেকে চেন্নাই এ বার ফাইনালে পৌঁছেছে। এর থেকেই প্রমাণিত হয় যে, ক্রিকেটে ক্যাপ্টেনের গুরুত্ব কতটা। ধোনি আগামী মরসুমে যদি নাও খেলে, ওর পারফরম্যান্সকে কিন্তু ছোট করা যাবে না। এ বারের আইপিএলে হয়তো বড় রান করার সুযোগ পায়নি, কিন্তু মাঠে যখনই নেমেছে, ছাপ রেখেছে।’
কপিল যাই বলুন কেন, যতই বিরক্ত হোন, ধোনি নিজের মতোই সিদ্ধান্ত নেবেন। এমনও হতে পারে, আজ, সোমবার রাতেই আইপিএল ফাইনালের পর হয়তো অবসর ঘোষণা করে দিতে পারেন। এমনও হতে পারে, আগামী মরসুমে আবার দেখা গেল তাঁকে উইকেটের পিছনে। ধোনি কী করবেন, ধোনি ছাড়া আর কেউ জানেন না।