অভিষেক সেনগুপ্ত
‘কাইফ কেমন খেলছে?’
প্রশ্ন শুনে বাংলার কোচ অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। প্রশ্ন কর্তাকে চেনেন অনেক দিন। একসঙ্গে রঞ্জি খেলেছেন। তিনি নিজের বোলিং নিয়ে কোনও দিন সতীর্থদের খুব বেশি কথা বলেননি। সেই তিনিই কিনা এক তরুণের কথা জানতে চাইছেন বিদেশ থেকে! যিনি ফোন করেছেন, তিনি দেশের হয়ে তখন বিদেশে খেলতে ব্যস্ত। যাঁকে নিয়ে জানতে চাইছেন, তিনি তাঁর ভাই। প্রশ্ন কর্তা কে? মহম্মদ সামি। ভাই মহম্মদ কাইফের জন্য একটা সময় এমনই ফোন আসত তাঁর। ভাইয়ের পারফরম্যান্স নিয়ে কাটাছেঁড়া করতেন। বোঝার চেষ্টা করতেন ভাইয়ের বোলিং। সেই অনূর্ধ্ব ২৩ থেকেই দাদা হয়ে আগলে গিয়েছেন ভাইকে। যে বাংলার হয়ে এক সময় উত্থান হয়েছিল তাঁর, সেই বাংলার হয়ে উইকেট ফলাতে শুরু করেছেন কাইফ। কী ভাবে ভাইকে পাল্টে দিলেন সামি?
তখনও ভাইরাল শব্দটার জন্ম হয়নি। অথচ, সে ছবি ভাইরালই তো ছিল। কাগজে কাগজে ছাপা হত। ক্রিকেট নেশায় মাঠ কিংবা টিভির পর্দায় চোখ রাখা কচিকাঁচারা কেটে রাখত সেই ছবি। খুদে সচিন তেন্ডুলকর ব্যাট করছেন নেটে। থ্রো-ডাউন করছেন দাদা অজিত। গত শতাব্দীর আটের দশকের সেই সাদা-কালো ছবি হয়তো আজও পাওয়া যাবে খুঁজলে। হয়তো এমনই পারিবারিক ছবি উত্তরপ্রদেশের সাহসপুরের বাড়িতেও পাওয়া যাবে। আর ভালো করে বললে, লকডাউনই পাল্টে দিয়েছে কাইফকে। দাদা কোচিং দেওয়া শুরু করেছিলেন সেই সময় থেকে। সফল ক্রিকেটারের রেসিপি কেমন হওয়া উচিত, ভাইয়ের জন্য ঠিক করে দিয়েছেন সামি।
বছর আটেক আগে দাদা সামির মতোই কলকাতায় পাড়ি দিয়েছিলেন কাফইও। দাদার মতো গাইড হিসেবে পেয়ে গিয়েছিলেন নির্মাল্য সেনগুপ্তকে। বনগাঁতে তাঁর কোচিংয়েই কলকাতার মাঠে পথচলা। সেই দিনগুলো কেমন ছিল কাইফের? ময়দানে অপু নামে পরিচিত নির্মাল্য। তিনি ফোনে বলে দিলেন, ‘সামির মতো ওর গতিটা ছিল। নেটে অনেকেই কাইফকে খেলতে গিয়ে সমস্যায় পড়ত। ওকে যে কারণে আমার বাড়িতে রেখে কোচিং করাই। ঠান্ডা স্বভাবের ছেলে। কিন্তু বল হাতে পেলেই যেন ভয়ঙ্কর। অনেক ম্যাচে একাই টানত। একটা ম্যাচে তো ব্যাট হাতে দুরন্ত পারফর্ম করেছিল। টিম প্রায় হারছে। এই অবস্থায় ৭০ রানের বিস্ফোরক ইনিংস খেলেছিল কাইফ।’
কাইফ ময়দানে প্রথম খেলেন ফ্রেন্ডস স্পোর্টিংয়ে। দ্বিতীয় ডিভিশন ক্লাবে ভালো খেলার পর তালতলাতে সই করেন। কিন্তু খুব একটা খেলার সুযোগ পাননি। পরের বছর দাদার মতো চলে যান টাউনে। সেখান থেকেই বাংলার অনূর্ধ্ব ২৩ টিম হয়ে রঞ্জি দলে। এই সময়টায় সামিই কোচ হয়ে উঠেছিলেন ভাইয়ের। সাহসপুরে বাড়ির সামনেই প্র্যাক্টিস গ্রাউন্ড তৈরি করে নিয়েছেন সামি। সেখানেই দিনের পর দিন নেটে পড়ে থেকেছেন কাইফকে নিয়ে। ইন সুইংটা বরাবর ভালো ছিল। এখন আউট সুইংও চমৎকার করেন। রিভার্স সুইংও শিখেছেন। সামি যেমন সিমের নিখুঁত ব্যবহার করেন, তেমনই পারেন কাইফও। শুধু তাই নয়, বোলিংয়ের পাশাপাশি ডায়েটও তৈরি করে দিয়েছেন। মানসিক ভাবে সব সময় কী ভাবে চাঙ্গা থাকতে হয়, তাও শিখিয়েছেন।
এই কাইফ নিরাশ করছেন না। বরং প্রত্যাশা মতোই জ্বলে উঠছেন প্রতি ম্যাচে। উত্তর প্রদেশের বিরুদ্ধে দুরন্ত পারফরম্যান্স সামির ভাইয়ের। ওপেনার সমর্থ সিংকে (১৩) ফিরিয়ে প্রথম উইকেট নিয়েছিলেন কাইফ। তারপর আর রোখা যায়নি । মাত্র ৫.৫ ওভার বল করেছেন। ১৪ রান দিয়ে নিয়েছেন ৪ উইকেট। গ্রিন পার্কের গ্রিন টপে তিনিই সবচেয়ে বেশি উইকেট নিয়েছেন বাংলার বোলারদের মধ্যে। সামির মতোই কি কাইফও জায়গা করে নেবেন জাতীয় টিমে? দাদা তো তাই চান। তার জন্য ভাইকে আরও উইকেট নিতে হবে। আগ্রাসী হতে হবে।