ঠিক কোথা থেকে শুরু করি! এ বারও যে ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ! এ কোনও অশনি সংকেত নয়তো? গত কয়েক দিন ধরেই বিশ্বকাপের সেরা কিছু ম্যাচ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। আজ সপ্তম পর্ব। আর এখানে আলোচনায় ১৯৮৭ সালের একটা ম্যাচ। কপিল দেবের নেতৃত্বে তার আগের বিশ্বকাপেই রূপকথা লিখেছে ভারত। ১৯৭৫, ১৯৭৯ এবং ১৯৮৩। প্রথম তিনটি ওডিআই বিশ্বকাপের আয়োজক ছিল ইংল্যান্ড। ১৯৮৭ সালে প্রথম বার ইংল্যান্ডের বাইরে পা রাখে বিশ্বকাপ। ১৯৮৩ বিশ্বকাপে আন্ডারডগ থেকে চ্যাম্পিয়ন ভারত। ১৯৮৭ বিশ্বকাপ আয়োজনের দায়িত্বে যৌথভাবে ভারত-পাকিস্তান। কেন অশনি সংকেত বলছি! বিস্তারিত রইল TV9Bangla Sports-এর এই প্রতিবেদনে।
প্রথম বার ভারতের মাটিতে বিশ্বকাপ। সালটা ১৯৮৭। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ভারতের প্রথম ম্যাচ চেন্নাইতে। প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া। বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথম দুই সংস্করণে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তাদের হ্যাটট্রিক রুখে দিয়েছিল ভারত। স্বাভাবিক ভাবেই ঘরের মাঠে ফেভারিট ছিল টিম ইন্ডিয়া। সে বারও ক্যাপ্টেন কপিল দেব। স্কোয়াডে হাতে গোনা কিছু নতুন মুখ। বলা যায়, চ্যাম্পিয়ন স্কোয়াডকেই ধরে রাখা হয়েছিল। চ্যাম্পিয়ন টিমে যাঁরা তরুণ ছিলেন, চার বছরে আরও পরিণত হয়েছেন। ভারতকে ফেভারিট কেনই বা ধরা হবে না!
আগের তিন বিশ্বকাপে ভারতের যা হাল ছিল, ১৯৮৭ বিশ্বকাপে সেই জায়গায় অস্ট্রেলিয়া। আন্ডারডগ হিসেবেই বিশ্বকাপ খেলতে নেমেছিল তারা। দলে একঝাঁক নতুন মুখ। যাই হোক, এ বার বলি কেন, অশনি সংকেত। এ বার ভারতে বিশ্বকাপ। প্রথম প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া। ম্যাচটি হবে চেন্নাইতে। আপাতত বিশ্বকাপের প্রস্তুতিতে ভারতের মাটিতে তিন ম্যাচের ওয়ান ডে সিরিজ খেলছে অস্ট্রেলিয়া। প্রথম দু-ম্যাচে হার, সিরিজ জিতে নিয়েছে ভারত। আজ তৃতীয় ম্যাচ। ৮ অক্টোবর বিশ্বকাপ অভিযান শুরু করবে ভারত। প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া, ম্যাচটি হবে চেন্নাইতে।
সে বার, অর্থাৎ ১৯৮৭ সালেও ভারতের প্রথম ম্যাচ ছিল অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে। ম্যাচটি হয়েছিল চেন্নাইতে। এই টুকু মিল নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন? আর একটু মিল হতে পারত, সে বারের ম্যাচের তারিখ ছিল ৯ অক্টোবর। এ বার আসা যাক আসল প্রসঙ্গে। অর্থাৎ, ৮৭-এর ঘরে। চেন্নাইতে টস জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন ভারত অধিনায়ক কপিল দেব। তাঁর নামের পাশে জুড়ে গিয়েছে বিশ্বজয়ী অধিনায়ক।
আন্ডারডগ অস্ট্রেলিয়া প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ভারতীয় বোলিংকে হতাশায় ভরিয়ে দেয়। ডেভিড বুন এবং জিওফ মার্শের ওপেনিং জুটি ভাঙেন রবি শাস্ত্রী। ১১০ রানে জুটি ভাঙে। ডেভিড বুন ফেরেন ৪৯ রানে। ডিন জোন্স কিছুটা অবদান রাখেন। আসল কাজটা করেন জিওফ মার্শ। ১১০ রানের অনবদ্য ইনিংস। সে বার থেকেই বিশ্বকাপ ৫০ ওভারের ফরম্যাটে। নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ২৭০ রান তোলে অজিরা। জিওফ মার্শ আরও কিছুক্ষণ ক্রিজে থাকলে স্কোর আরও বড় হতে পারত।
সে সময় ৫০ ওভারে ২৭০ রান তাড়া করা এখনকার মতো জলভাত ছিল না। তবে ভারতীয় শিবিরে ভরসা ছিল কৃষ্ণামাচারি শ্রীকান্তের জন্য। সে সময় বিধ্বংসী ব্যাটার বললে, তাঁর নামই প্রথম মনে আসে। তাঁর ওপেনিং সঙ্গী ধ্রুপদী ব্যাটার সুনীল গাভাসকর। জুটি ভাঙে ৬৯ রানে। ছক ভেঙে গাভাসকর একশোর বেশি স্ট্রাইকরেটে ৩৭ রানে ফেরেন। দলীয় ১৩১ রানে কৃষ্ণমাচারি শ্রীকান্তও আউট। মাত্র ৮৩ বলে ৭০ রানের ইনিংসে ভিত গড়ে দিয়েছেন। কিন্তু ক্রেগ ম্যাকডর্মেটের বোলিং ভারতকে বেসামাল করে। দুর্দান্ত ছন্দে থাকা নভজ্যোত সিং সিধুকে বোল্ড করেন। ৭৯ বলে ৭৩ রানের ইনিংস। নিয়মিত উইকেট হারালেও জয়ের দিকে এগচ্ছিল ভারত। পেন্ডুলামের মতো দুলছে ম্যাচ।
শেষ দিকে কিরণ মোরে যেন সঙ্গী চাইছিলেন। কিন্তু পেলেন কই! উল্টো দিক থেকে রজার বিনি (৩ বলে ০), মনোজ প্রভাকর (৭ বলে ৫)। দুজনেই রান আউট। জয় থেকে মাত্র ২ রান দূরে ভারত। ক্রিজে কিরণ মোরে এবং মনীন্দর সিং। ইনিংসের ১ বল বাকি থাকতে শেষ উইকেট হিসেবে আউট মনীন্দর। তাঁকে বোল্ড করেন স্টিভ ওয়া। ২৬৯ রানেই অলআউট ভারত। ১ বল বাকি, মাত্র ১ রানে হার। চেন্নাইয়ের গ্যালারি সেই ১ রানেই চুপ। ভারতকে হারিয়ে বিশ্বকাপ অভিযান শুরু করেছিল অস্ট্রেলিয়া। শেষ অবধি তারাই চ্যাম্পিয়ন হয়। প্রথম বার বিশ্বজয় অজিদের। কৃষ্ণমাচারি শ্রীকান্ত এবং নভজ্যোত সিং সিধু ট্র্যাজিক নায়ক। ১টা রান কতটা জরুরি, সেদিন তাঁদের থেকে আর কে বেশি উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন!
আরও একটা নাটকীয় মুহূর্ত রয়েছে ম্যাচে। ডিন জোন্সের একটি শট বাউন্ডারির সিগন্যাল দিয়েছিলেন আম্পায়ার। কিন্তু অজি প্লেয়াররা আম্পায়ারকে জানান সেটি ছয় হয়েছে। আম্পায়ার সিদ্ধান্ত বদলে ছয়ের সিগন্যাল দেন! এটা না হলেও…!