AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

Virat Kohli: তারকাদের গ্যালাক্সি, ওয়াংখেড়েতে ‘ধ্রুবতারা’ কিং কোহলিই

India vs New Zealand ICC world Cup 2023 Semi-Final: পুরো বিশ্বকাপেই বিরাটকে ভিন গ্রহের মনে হয়েছে। কখনও রাজার মতোই ব্যাট করছেন আবার কখনও শিশুসুলভ আনন্দে ভেসে যাচ্ছেন। লিগের শেষ ম্যাচটাই ধরা যাক। নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে ষষ্ঠ বোলারের প্রয়োজন ছিল। রাহুল দ্রাবিড়ের বর্ণনা অনুযায়ী, 'ভয়ঙ্কর ইনসুইং বোলার' বিরাট কোহলিকে আক্রমণে আনেন রোহিত শর্মা। স্পেলের দ্বিতীয় ওভারে ডাচ অধিনায়ক স্কট এডওয়ার্ডসের উইকেট নিয়ে সেই যে উল্লাস...।

Virat Kohli: তারকাদের গ্যালাক্সি, ওয়াংখেড়েতে 'ধ্রুবতারা' কিং কোহলিই
Image Credit: PTI
| Edited By: | Updated on: Nov 15, 2023 | 1:46 AM
Share

অভিষেক সেনগুপ্ত

মুম্বই: দেখো আলোয় আলো আকাশ, দেখো আকাশ তারায় ভরা! মুম্বই মানেই তো তারকা সমাহার। কাকে ছেড়ে কার কথা বলা হবে? যে পেশাই ধরা যাক। কিন্তু তাঁদের থেকে যেন দুটো দিনের জন্য স্পটলাইট সরিয়ে নিয়েছেন ভারতীয় দলের এক ক্রিকেটার। শুধু মুম্বই শহরই বা বলছি কেন? ভারতীয় দলে কে তারকা নয় বলুন তো? রোহিত শর্মা, জসপ্রীত বুমরা, মহম্মদ সামি…। তালিকা শেষ হবে না। বিশ্বের অন্যান্য দেশের ক্রিকেটাররা যাঁদের সামনে পেলে ছুটে আসেন পরামর্শের জন্য। তেমনই নিউজিল্যান্ড টিমের কেন উইলিয়ামসন, ট্রেন্ট বোল্ট এবং উঠতি তারকা রাচিন রবীন্দ্রর কথাই বা ভুলি কী করে! কিন্তু একটা নাম যেন সব কিছুর উর্ধ্বে। বিরাট কোহলি।

বিশ্ব জয়! সে স্বাদ তো পেয়েছেন বিরাট। অনূর্ধ্ব ১৯ স্তরে ক্যাপ্টেন হিসেবে। আর সিনিয়র দলের হয়ে! এক যুগ আগে এই ওয়াংখেড়েতেই তো চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন। তখন অবশ্য বিরাট কোহলি বর্তমান শুভমন গিলের মতো। দলের এক তরুণ সদস্য মাত্র। আকর্ষণের কেন্দ্রে ছিলেন মাস্টার ব্লাস্টার সচিন তেন্ডুলকর। আচ্ছা ওই দৃশ্যটা মনে পড়ে? ২০১১ সালে ২ এপ্রিলের রাত। ওয়াংখেড়েতে ভারত-শ্রীলঙ্কা বিশ্বকাপ ফাইনাল। রান তাড়া করছে ভারত। আউট মাস্টার ব্লাস্টার সচিন তেন্ডুলকর। ওয়াংখেড়ের গ্যালারিতে পিন পড়ার শব্দ শোনা যাবে।

সচিনের আউটে মাঠে প্রবেশ বিরাট কোহলির। তাঁকে নিয়ে কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই। সচিনের আউটের পর দেশের লক্ষ লক্ষ টেলিভিশন সেট বন্ধ হয়ে যেত। কোহলিকে কেই বা স্বাগত জানাবেন! তাও আবার সচিনের খাসতালুকে। ওয়াংখেড়ের গ্যালারি তার কিছুক্ষণ আগেও গমগম করছিল, ‘সচিন…সচিন…’ সেই চেনা ধ্বনিতে। একটি সাক্ষাৎকারে বিরাটও বলেছিলেন, ‘মাঠে নামার সময় দু-তিন বার গ্যালারির দিকে তাকালাম। যদি একটু চিৎকার হয়! কেউ আমাকে হিসেবেই ধরেনি। সচিন পাজী আউট হয়েছেন, এরপর যা হয়’!

আরও একটা দৃশ্য মনে পড়ে? চ্যাম্পিয়নের উচ্ছ্বাসে ভেসে টিম ইন্ডিয়া। হঠাৎই মাস্টারব্লাস্টার সচিন তেন্ডুলকরকে কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন সেই তরুণ ক্রিকেটার। যেন ভারতীয় ক্রিকেটের প্রত্যাশার চাপ এবং দায়িত্বটাই তুলে নিলেন। এক যুগের ব্যবধানে পরিস্থিতি এমনই। যে কোনও পরিস্থিতিতে বিরাটই ভরসা। প্রতিপক্ষের সবচেয়ে দামি উইকেট। সেমিফাইনালের আগে প্রতি মুহূর্তে নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন যেন ভাবছেন, ‘আমার টিমে তো ট্রেন্ট বোল্ট আছে। সে কি আজ ডেভিড উইলি হয়ে উঠতে পারবে?’ কেন এমন বলছি! বিশ্বকাপের ইতিহাসে উইলিই তো প্রথম বার শূন্য রানে ফিরিয়েছেন বিরাটকে। কয়েক ম্যাচ আগেই।

ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে বিরাট কোহলির পরিসংখ্যান খুবই ভালো। সাতটি ওয়ান ডে-তে ৩৫৭ রান। সর্বাধিক স্কোর ১২১ রান। ব্যাটিং গড় প্রায় ৬০। স্ট্রাইক রেটও ৯০-এর বেশি। একটি সেঞ্চুরি এবং দুটি হাফসেঞ্চুরি রয়েছে। কিন্তু বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে? পুরনো কথা না হয় বাদই থাকল। গত বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে ৬ বলে মাত্র ১ রান। অথচ লিগ পর্বে দুরন্ত পারফরম্যান্স। তেইশের বিশ্বকাপেও স্বপ্নের ফর্মে রয়েছেন বিরাট কোহলি। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সেঞ্চুরি। আর ঐতিহ্যের ইডেনে জন্মদিনে নিজেকেই সেরা উপহার দিয়েছিলেন। ৪৯তম ওডিআই সেঞ্চুরিতে ছুঁয়েছেন সচিন তেন্ডুলকরকে। লিগ পর্বে ৯ ম্যাচে ৫৯৪ রান! ব্যাটিং গড় ৯৯!

পুরো বিশ্বকাপেই বিরাটকে ভিন গ্রহের মনে হয়েছে। কখনও রাজার মতোই ব্যাট করছেন আবার কখনও শিশুসুলভ আনন্দে ভেসে যাচ্ছেন। লিগের শেষ ম্যাচটাই ধরা যাক। নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে ফিল্ডিংয়ে চোট লাগে মহম্মদ সিরাজের। ষষ্ঠ বোলারের প্রয়োজন ছিল। রাহুল দ্রাবিড়ের বর্ণনা অনুযায়ী, ‘ভয়ঙ্কর ইনসুইং বোলার’ বিরাট কোহলিকে আক্রমণে আনেন রোহিত শর্মা। স্পেলের দ্বিতীয় ওভারে ডাচ অধিনায়ক স্কট এডওয়ার্ডসের উইকেট নিয়ে সেই যে উল্লাস…। কেই বা ভেবেছিল বিশ্বের সেরা ব্যাটারকে এই মেজাজেও দেখা যেতে পারে?

বেঙ্গালুরু থেকেই সেমিফাইনালের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছিলেন বিরাট কোহলি। কিউয়ি দলের বাঁ হাতি স্পিনার মিচেল স্যান্টনারের জন্য স্পেশাল ট্রেনিং। আর এক বাঁ হাতি স্পিনার রাচিন রবীন্দ্রও রয়েছেন। যতই পার্টটাইম হোক, বোলিংয়েও ভরসা দিয়েছেন রাচিন। আর আইসিসি টুর্নামেন্টে ভারতের বিরুদ্ধে মিচেল স্যান্টনারের পরিসংখ্যান চমকে দেওয়ার মতোই। তাঁর বিরুদ্ধে রান করা, মিশন ইমপসিবল। নিউজিল্যান্ডের এক্সপ্রেস গতির বোলার লকি ফার্গুসনের জন্যও ভিন্ন অনুশীলন করেছিলেন বিরাট। এমনকি স্বভাববিরুদ্ধ র‌্যাম্প শটও প্র্যাক্টিস করেছিলেন। ওয়াংখেড়ের অনুশীলনে অন্য এক মেজাজে দেখা গেল কোহলিকে।

বিরাটকে ম্যাচে কখনও সুইচ হিট খেলতে দেখেছেন? খেলে থাকলেও মনে থাকার কথা নয়। বরং তাঁর কভার ড্রাইভ চোখের সামনে ভিডিয়োর মতো থাকবে। ওয়াংখেড়েতে কখনও বাঁ হাতে স্টান্স নিয়ে ব্যাট করলেন, আবার কখনও সুইচ হিট। বিশ্বকাপের আগে ভারতের বিরুদ্ধে সিরিজে অশ্বিনকে ট্যাকল করতে এই পন্থা নিয়েছিলেন অজি ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার। তাও আবার সরাসরি ম্যাচে অশ্বিনের সঙ্গে পাঙ্গা! পেরে ওঠেননি ওয়ার্নার। বিরাট অবশ্য প্রস্তুতি সেরে রাখলেন। প্রয়োজনে স্যান্টনার কিংবা রাচিনের বিরুদ্ধে সুইচ হিট কিংবা বাঁ হাতে ব্যাটিং দেখা গেলেও অবাক হবেন না।

আসলে বিরাট যে মেজাজে রয়েছেন, তাতে অনেক কিছুই সম্ভব। কে জানে বিশ্ব ক্রিকেটের ইতিহাসে হয়তো ১৫ নভেম্বর স্পেশাল হয়ে উঠল! যাঁর থেকে ব্যাটন পেয়ে বয়ে চলেছেন বিরাট, সেই সচিনের মাঠে, তাঁর সামনেই যদি আরও একটা সেঞ্চুরি আসে? শতরানের হাফসেঞ্চুরি করে ওডিআইতে মাস্টার ব্লাস্টার সচিন তেন্ডুলকরকে ছাপিয়ে যেতেই পারেন বিরাট। মায়ানগরীতে সবই যেন সম্ভব। এর চেয়ে বড় মঞ্চ আর কী হতে পারে! কোহলির মতো বিরাট প্লেয়াররা তো এমন বড় মঞ্চেই জ্বলে উঠতে চান…।