অভিষেক সেনগুপ্ত
৫৮তে পা দিয়েও ক্যারিশমা কি বাড়ছে কিং খানের? টানা ন’টা ফ্লপের পর ফিরেছেন ‘জওয়ান’। এই ফেরা শুধু কি শাহরুখ খানের? দক্ষিণী হাওয়ায় এলোমেলো বলিউড আবার গুছিয়ে নিতে পেরেছে। বক্স অফিসের সূচক আবার উর্ধ্বগামী। ২ নভেম্বরের রেশ এখনও কাটেনি। তিন দিনের মধ্যে আর এক রাজকীয় জন্মদিনের জন্য তৈরি হচ্ছে দেশ। ইডেন তো শুধু মঞ্চ। আসলে ৫ নভেম্বর আর আস্ত রবিবার কিং কোহলির! আগ্রাসন থাকবে। থাকবে ছন্দ। তার থেকেও বেশি থাকবে স্বপ্ন। সচিন তেন্ডুলকরকে ছোঁয়ার স্বপ্ন। ধরমশালায় হতে পারত। ঈশ্বরের খাসতালুক মুম্বইয়েও হতে পারত। তা হলে কি ৪৯তম সেঞ্চুরিটা কলকাতার জন্য তুলে রেখেছেন বিরাট কোহলি?
জন্মদিন কতটা স্পেশাল ছিল শাহরুখের? খোঁজ নিলে জানা যাবে, আর পাঁচটা দিনের মতো। শুটিং থেকে ছুটি নেই। নিয়ম ভাঙা নেই। রোজ যে পথে হাঁটেন একটা আস্ত দিন, তেমনই হেঁটেছেন। হয়তো আরও যত্ন নিয়ে। সাফল্যের আকাশে যাঁরা থাকেন, তাঁদের কাছে জন্মদিন নিজেকে আরও ধারালো, গোছানো, সাজানোর। কমলা জার্সি পরে কিং কোহলি আকাশ মুঠোয় রাখার মন্ত্র ঝালিয়ে গেলেন জন্মদিনের আগের সন্ধেয়। প্র্যাক্টিসে এলেন সবার আগে। ক্রিকেট কফিনকে আদর করতে করতে নিয়ে গেলেন ইডেনের নেটে। গ্লাভস আর ব্যাট তুলে নিলেন হাতে। রোজ তোলেন, তুলবেনও। ৩৫তম জন্মদিনের আগের সন্ধেয় সেই একজোড়া হাত আরও আবেগি, আরও দায়বদ্ধ।
সেই নয়ের দশক থেকে ‘সচিন আলা রে’ শুনে বড় হয়েছে একটা প্রজন্ম। সচিন খেলছেন মানে স্বেচ্ছাবসরে পুরো দেশ। স্বপ্নের ইমারত তৈরি করেছে ‘মাহি মার রাহা হ্যায়’। মহেন্দ্র সিং ধোনি আছেন মানে শেষ মুহূর্তেও জেতা যায়। আর বিরাট? গত পনেরো বছরে তরুণ থেকে নায়ক, ম্যাচ উইনার থেকে কিংবদন্তির পর্যায় পেরিয়েছেন একে একে। সেঞ্চুরির এক একটা দরজা পেরোতে পেরোতে কখন যে ওয়ান ডে ক্রিকেটে সচিনের শেষ ধাপে পা রেখে ফেলবেন, বোঝাই যায়নি। যেন লহমায় বিপ্লব। যেন পলকে ইতিহাস। সচিনের ইতিহাসে পাকাপাকি পা রাখবেন একদিন, জানাই ছিল। প্রস্তুতিও ছিল। এত তাড়াতাড়ি করে ফেললেন, জানা ছিল না।
বিরাট কভার ড্রাইভ মারেন যখন, উল্লাসে ফেটে পড়ে গ্যালারি। স্টেপ আউট করেন যখন, বিরাট-বিরাট কোরাস গায় গ্যালারি। রবিবারের ইডেনে এ সব থাকবে। থাকবেই। স্পেশাল ডে কি বিরাটের চোদ্দ বছরের শাপমুক্তি ঘটাবে? ২০০৯ সালে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ইডেনে ১০৭ রানের ইনিংস খেলেছিলেন বিরাট। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গোলাপি টেস্টে সেঞ্চুরি করেছিলেন ঠিকই, কিন্তু ওয়ান ডে ফর্ম্যাটে শ্রীলঙ্কার পর আর ইডেনকে সেঞ্চুরির উত্তাপ দিতে পারেননি। রবিবারের ইডেনে বনবাস কাটবে ভিকে-র? সেই আকাঙ্খা নিয়েই থ্রো ডাউন করলেন প্রায় আধঘণ্টা। সেই তাগিদ নিয়েই নেটে নামলেন। মনোযোগী ছাত্র যেন সিলেবাস রিভাইস দিচ্ছেন শেষ মুহূর্তে।
কিং খান আর কিং কোহলির মিল কোথায়? বলিউড আর নিজের কেরিয়ার দুটোই মধ্যগগনে ফিরিয়েছেন শাহরুখ খান। আর বিরাট? ভারতের মাটিতে বিশ্বকাপটাকে একাই টানছেন। বিরাট উত্তাপ বাড়াচ্ছেন। আলোচনা ফেরাচ্ছেন। লোক টানছেন। ইডেনও তার ব্যতিক্রম নয়। শনি-সন্ধেয় বিরাট ইডেনের গেটে নামতেই জনতা কয়েক’শো এমন চেঁচাল, যেন ভরা গ্যালারি লজ্জায় পড়ে যাবে। একটানা শাঁখ বাজিয়ে যাওয়া ছেলেটি কিংবা উত্তরপ্রদেশ থেকে ইডেনে ঘণ্টা’দুয়ের তেরঙা উড়িয়ে যাওয়া ছেলেটিকে টেনে এনেছেন ইডেনে। ঠিক যে ভাবে জওয়ান টেনেছে সারা দেশকে!
রবিবার সত্তর হাজার মুখোশ নাকি থাকছে না! দরকার কী? হৃদয়ে থাকবেন তো! আর রেকর্ডেও। বিরাট যদি ৪৯তম সেঞ্চুরিটা করে ফেলেন, তা হলে ইডেনের মতো সারা দেশ মাথা ঝুঁকিয়ে কুর্নিশ করবে তাঁকে। বরাবরের মতো।