অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়া হল না। টানা দশ ম্যাচ জয়ের হাসি নিমেষে উধাও। অপেক্ষা বাড়ল। এক যুগ পর বিশ্বকাপ ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছিল ভারত। টানা দশ ম্য়াচ জিতে ফাইনাল। এখানেই দৌড় শেষ। আরও একবার এ ভাবেই মনে রাখা হবে, ‘ফাইনালে উঠেছিল ভারত।’ অতি আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে সাফল্য় মিলছিল টিম ইন্ডিয়া, সেই ব্যাটিংই ফাইনালে ফ্লপ। ৬ উইকেটের জয়ে ষষ্ঠ বার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া।
ম্যাচের আগের দিন সাংবাদিক সম্মেলনে একটা কথা বলেছিলেন। এত প্রত্যাশার চাপ। যেখানেই যান, নানা আব্দার শুনতে হয়। কেউ বলেন, দু’শো করতে হবে, কেউ বা বলেন বিশ্বকাপ জিততে হবে। কারও প্রত্যাশাকে ছোট করেননি রোহিত। এটাই স্বাভাবিক মনে হয়েছে তাঁর। তবে এগুলো শুনলে যে চাপ আরও বাড়ে! তাই হেডফোন ব্যবহার করেন। অন্তত বাইরের এই আব্দারগুলো তো কানে আসবে না! ফাইনালের মঞ্চে সেই উপায় ছিল না। গ্যালারিতে লক্ষাধিক সমর্থক। সকলেই ভারতের জয় চাইছেন। সবরমতীর তীরে, ভারতের পরিস্থিতি দাঁড়ালো ‘সবুর’মতী। এক যুগের অপেক্ষা আরও দীর্ঘ হল। রোহিতদের ভরসা ছিল হেডফোন, অস্ট্রেলিয়ার ভরসা হয়ে দাঁড়ালেন ট্রাভিস হেড। তাঁদের জন্য বৃত্ত সম্পূর্ণ হল।
সব মিলিয়ে অষ্টম বার বিশ্বকাপের ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। ভারত চতুর্থ বার। টুর্নামেন্টে নিজেদের প্রথম ম্য়াচে ভারতের প্রতিপক্ষ ছিল অস্ট্রেলিয়া। তার আগে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে তিন ম্য়াচের সিরিজও খেলেছে ভারত। কেউ কারও কাছে অচেনা প্রতিপক্ষ নয়। ম্য়াচের দিন যে ভালো খেলবে, জয় তার। অস্ট্রেলিয়া এখানেই বাজিমাত করল। টানা দশ ম্যাচ জয়ের আনন্দ, এক নিমেষে মিলিয়ে গেল।
টুর্নামেন্টের শুরুতে ভিন্ন কম্বিনেশন খেলাচ্ছিল ভারত। হার্দিক পান্ডিয়ার চোটে কম্বিনেশন বদলাতে বাধ্য হয় ভারতীয় টিম ম্য়ানেজমেন্ট। হার্দিকের বিকল্প আর এক পেস বোলিং অলরাউন্ডার শার্দূল ঠাকুর রয়েছেন স্কোয়াডে। তবে আর যাই হোক, হার্দিকের মতো ভরসা করা যায় না। লিগের পঞ্চম ম্যাচ থেকে পাঁচ স্পেশালিস্ট বোলার খেলানোর সিদ্ধান্ত। ব্যাটিং নিয়ে নিরাপত্তাহীনতার কারণেই এমন সিদ্ধান্ত। টিম ম্য়ানেজমেন্টের লক্ষ্য ছিল ব্য়াটিং মজবুত থাকত হবে। বোলিং আক্রমণ তো দুর্দান্ত! কিন্তু লিগ পর্বে নেদারল্যান্ডস ম্যাচটাই যেন ভারতকে সতর্কবার্তা দিয়েছিল। বোলিংয়েও বিকল্প চাই।
টস জিতে প্যাট কামিন্স ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিতেই আশার আলো দেখেছিলেন ভারতীয় সমর্থকরা। অধিনায়ক রোহিত শর্মাও জানান, টস জিতলে তিনিও ব্যাটিংই নিতেন। বিশ্বকাপের মতো হাইভোল্টেজ ম্য়াচে এটাই যেন সেরা বিকল্প। প্রথমে ব্যাট করে বোর্ডে বড় রান তুলে প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলো। ব্য়াটিং করতে গিয়ে ভারতীয় শিবির উপলব্ধি করল, পিচ খুবই কঠিন। তাহলে কি প্রয়োজন ছিল? টেস্ট ম্য়াচের মতো ইনিংস খেলা।
ভারতীয় দলে টেস্ট প্লেয়ারের তো অভাব নেই! সূর্যকুমার যাদব, শ্রেয়স আইয়ার, কুলদীপ যাদব ছাড়া একাদশের বাকি সকলেই নিয়মিত টেস্ট খেলেন। বিরাট কোহলি, লোকেশ রাহুল কিছুটা চেষ্টা করলেন। বোর্ডে একটা লড়াই করার মতো স্কোর এল না। কতটা স্কোর সুরক্ষিত বোঝা মুশকিল। ভারতীয় বোলিং যে ছন্দে রয়েছে, তাতে যে কোনও স্কোরই অনেকটা সুরক্ষা দেয়। কিন্তু যে প্রশ্নটা উঠছিল, ষষ্ঠ বোলার। কোনও এক বোলারের দিন খারাপ যেতেই পারে! কিন্তু বোর্ডে পর্যাপ্ত রান না থাকলে, লড়াই কঠিন হয়।
ভারতে যে ভেনুতেই খেলা হোক, পরের দিকে ব্যাটিং করা তুলনামূলক সহজ। ভারতও তো লিগ পর্বের প্রথম পাঁচ ম্যাচ রান তাড়া করেই জিতেছিল! অস্ট্রেলিয়া সেটাই করল। লক্ষ্যটা ৩০০-র ওপরে হল কী হত বলা কঠিন, তবে ২৪০ নিয়ে লড়াই হল না। আর উল্টোদিকে যদি ট্রাভিস হেডের মতো সেঞ্চুরির ইনিংস হয়! এই রান যথেষ্ঠ নয়।