রাহুলের টিমে না থাকা ভোগাতে পারে ভারতকে

sushovan mukherjee |

Dec 25, 2020 | 7:10 PM

মেলবোর্নে পিছিয়ে থেকে নামছে ভারত। বক্সিং ডে টেস্টের আগে TV9 বাংলা ডিজিটালের জন্য কলম ধরলেন প্রাক্তন জাতীয় ক্রিকেটার শরদিন্দু মুখোপাধ্যায়।

রাহুলের টিমে না থাকা ভোগাতে পারে ভারতকে

Follow Us

শরদিন্দু মুখোপাধ্যায়

৩৬ রানে বিপর্যয়ের পর ভারত মেলবোর্ন টেস্ট কী ভাবে সামলায়, সেটা দেখার অপেক্ষা ছিল। মাঠে বল পড়তে এখনও দেরি আছে, কিন্তু মাঠের বাইরের ভাবনা থেকে অনেক কিছুই পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে। এটা নিয়ে কোনও জটিলতা নেই যে, ফর্মে না থাকা ক্রিকেটাররা বাদ পড়েছে টিম থেকে। তার বদলে ছন্দে আছে যারা, যাদের অভিজ্ঞতা আছে, যারা ম্যাচের রং পাল্টে দিতে পারে, তাদের উপরেই আস্থা রাখার চেষ্টা করল টিম ম্যানেজমেন্ট। যে কারণে চারটে বদল নেওয়া হল। শুভমন গিল, মহম্মদ সিরাজদের অভিষেক হচ্ছে। টিমে এল ঋষভ পন্থ ও রবীন্দ্র জাডেজা।

শুভমনে ভরসা

শুভমনকে যে প্রথম টেস্টেই খেলানো উচিত ছিল, সেটা তো এর আগেই বলেছি। ও ফর্মে আছে। বিদেশে বড় রান করার অভিজ্ঞতা আছে। সেই সঙ্গে অস্ট্রেলিয়া এ টিমের বিরুদ্ধে প্র্যাক্টিস ম্যাচটাতেও রান করেছিল। পৃথ্বীর বদলে এটা প্রত্যাশিত বদল। যেমন মহম্মদ সামির পরিবর্তে মহম্মদ সিরাজকে নেওয়া হয়েছে।

রাহুল নেই কেন?

বিরাট কোহলির মতো সেরা ব্যাটসম্যানের না থাকা মানে ভারতের সব সময় ব্যাকফুটে থাকা। রাহানে, পূজারাদের মতো অভিজ্ঞরা আছে হয়তো, তবু এমন একজনকে দরকার ছিল মিডল অর্ডারে, যার চাপ সামলানোর ক্ষমতা আছে। সেটা হতে পারত রাহুল। সব ধরণের ফর্ম্যাটে ও দারুণ খেলছে। ওর ধারাবাহিকতাই ওর হয়ে প্রশ্ন তুলছে। রাহুল থাকলে বরং রাহানে, পূজারাদের মতো সিনিয়ররাও কিছুটা স্বস্তিতে থাকত। ঠিক একই রকম ভাবে চাপে থাকত অস্ট্রেলিয়ান বোলাররাও। রাহুলকে মেলবোর্ন টেস্টে না নেওয়া ভারতকে ভোগাতে পারে।

আগ্রাসী ভারত 

একটা জিনিস অবশ্য ভালো লাগছে, ৩৬ রানের ওই বিপর্যয়টা ভারত ভুলতে চাইছে। পরিকল্পনায় অন্তত সেই ছাপই দেখতে পাচ্ছি। আমি বিশ্বাস করি, যে কোনও বিপর্যয়ই একটা ব্যতিক্রম। যে কোনও টিমকেই ওই রকম একটা দিন দেখতে হতে পারে। ক্রিকেট ইতিহাস ঘাঁটলে কিন্তু সেই উদাহরণ ভুরিভুরি দেখতে পাওয়া যাবে। ভারত সেখান থেকে বেরিয়ে এসে আগ্রাসী ক্রিকেট খেলতে চাইছে, এটাই সবচেয়ে পজিটিভ দিক। কোথায় আগ্রাসন? মেলবোর্ন টেস্টে ভারতের পাঁচ বোলার নিয়ে নামার ভাবনা। তিন পেসার বুমরা-উমেশ-সিরাজেক সঙ্গে দুই স্পেশালিস্ট স্পিনার হিসেবে অশ্বিন-জাডেজাকে খেলানো অত্যন্ত সাহসী পদক্ষেপ। এর অর্থ হল, ভারত শুধু পাঁচটা বিশেষজ্ঞ বোলারই খেলাচ্ছে না, দু’জন বাড়তি ব্যাটসম্যানও পেয়ে যাচ্ছে। জাডেজা, অশ্বিন ব্যাট হাতেও টিমকে টেনে নিয়ে যেতে যে পারে, অতীতেও তেমন উদাহরণ রয়েছে।

ঋদ্ধি প্রসঙ্গ 

একটা প্রশ্ন অনেককেই তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে খুব ভালো করে জানি। ঋদ্ধিমান সাহা কেন টিমে নেই? স্পেশালিস্ট কিপারকেই টেস্ট টিমে খেলানো উচিত, সব সময় মনে করি। কিন্তু বিশ্বের যে কোনও টিমের দিকে তাকালে একটা জিনিস বোঝা যাবে, কিপারদের কাজটা শুধু কিপিং করেই শেষ হয়ে যাচ্ছে না। অর্থাৎ, কিপারদের ব্যাটের হাতটাও ভালো হতে হয়। পন্থ টেস্ট সিরিজ শুরুর আগেই একটা প্রস্তুতি ম্যাচে সেঞ্চুরি করেছে। ফলে টিম ম্যানেজমেন্ট চাইছে, ফর্মে থাকা কিপারকেই খেলিয়ে দিতে।

টস ফ্যাক্টর 

আমার মনে হয়, মেলবোর্নে টসে জিতে ভারতের ব্যাটই করা উচিত। কারণ, কোকাবুরা লাল বল গোলাপি বলের মতো এত সুইং করবে না। ব্যাটসম্যানের উপর চাপটা কমই থাকবে। সেট হওয়ার সময়ও পাবে। সেই কারণে ভারত যদি আগে ব্যাট করে ৩৫০-৪০০ তুলে ফেলতে পারে, অস্ট্রেলিয়ার উপর চাপ বাড়বেই। তা ছাড়া, একটা ব্যাপার তো পরিষ্কার, টিম পেইনের অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং গভীরতা কিন্তু কম। ডেভিড ওয়ার্নার এই ম্যাচটাও খেলতে পারছে না। স্টিভ স্মিথ আর মার্নাস লাবুসেনকে তুলে নিতে পারলে কিন্তু অজিদের পাল্টা চাপ দেওয়া যেতে পারে। চতুর্থ ইনিংসে যদি আড়াইশো রানও তাড়া করতে হয় অস্ট্রেলিয়াকে, চাপ বাড়বেই। ভারতের হাতে ম্যাচ জেতানোর মতো বোলার কিন্তু আছে।

আরও পড়ুন: বক্সিং ডে টেস্টে ফোকাসে দুই তরুণ

ক্যাপ্টেন রাহানে

বিরাটের বদলে রাহানে ক্যাপ্টেন্সি করবে। বিদেশের মাটিতে ০-১ পিছিয়ে থাকা সিরিজের দায়িত্ব নেওয়াটা কঠিন কাজ, কোনও সন্দেহ নেই। আবার এর উল্টো একটা দিকও আছে। রাহানের কিন্তু হারানোর কিছু নেই। ওর ক্যাপ্টেন্সিতে ভারত যদি ০-৪-ও হারে, কেউ ওকে দোষ দেবে না। বরং বিরাট না থাকায় টিমকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য প্রশংসাই পাবে। তার পরও বলব, রাহানের কাছে এটা একটা বিরাট সুযোগ। এখান থেকে টিমকে যদি এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে, ভারত যদি মেলবোর্ন টেস্টটা জিতে ১-১ করে ফেলে, রাহানে হিরো হয়ে যাবে।

এই ভারত যতই ৩৬ রানে অল আউট হয়ে যাক, টিমটার মধ্যে যথেষ্ট মশলা আছে। যে কোনও মুহূর্তে ঘুরে দাঁড়াতে পারে। সেটা এই মেলবোর্নেই হতে পারে!

Next Article