শরদিন্দু মুখোপাধ্যায়
অঙ্কটা এ ভাবেও তো সাজাতে পারি, ডেভিড ওয়ার্নার, কেন উইলিয়ামসন বনাম কলকাতা নাইট রাইডার্স (Kolkata Knight Riders)! বাইশ গজের লড়াইটা যদি এই রকম হয়, তা হলে কী ভাবে ছক তৈরি করবে নাইটরা? আমার মনে হয়, ওয়ার্নারের বিরুদ্ধে পেসাররা খুব একটা এফেক্টিভ হবে না। ওর বিরুদ্ধে স্পিনাররাই সাফল্য পাবে। আর সেটা হতে পারে সুনীল নারিন। যদি ও খেলে, পাওয়ার প্লে-তে ওকে দিয়ে অন্তত দুটো ওভার বল করানো হোক। নারিনকে কিন্তু ওয়ার্নারের বিরুদ্ধে অ্যাটাকিং বোলিং করতে হবে। একটা স্লিপ, একটা গালি নিয়ে। নারিনের ক্যারম বলটার ধার হয়তো কমেছে, কিন্তু ওর অফস্পিন এখনও বিষাক্ত। তবে, উইলিয়ামসনের বিরুদ্ধে শুধু স্পিনের জাল সাজালে চলবে না। ওর ভুলের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। মোদ্দা কথা, ওয়ার্নার আর উইলিয়ামসনের উইকেট দুটোই কিন্তু টার্গেট করতে হবে কেকেআরকে।
গত কয়েক বছর ধরে কেকেআর মোটামুটি পারফর্ম করলেও খেতাবের ধারেকাছে পৌঁছতে পারেনি। ক্রিকেট তো টিম গেম। একা কেউ একটা টিমকে জেতাতে পারে না। কখনও আন্দ্রে রাসেল, নীতিশ রানা, রাহুল ত্রিপাঠীরা বিক্ষিপ্ত ভাবে পারফর্ম করেছে ঠিকই, কিন্তু ধারাবাহিকতা ছিল না। আন্দ্রে রাসেলের চোট, সুনীল নারিনের ধার কমে যাওয়া। সেই সঙ্গে মরসুমের মাঝপথে ক্যাপ্টেন বদল। এই রকম ঘটনা ঘটলে টিমের পারফরম্যান্স তলানিতে চলে যায়। এ সবেরই খেসারত দিতে হয়েছে নাইটদের। সব ভুলে সামনে তাকাতে হবে। এই আইপিএল কিন্তু নাইটদের কাছে অন্যরকম হতে পারে। টিমের গভীরতা আছে। আছে বিকল্পও। শুধু দরকার একটা টিম হয়ে ওঠা। যারা সবাই মিলে পারফর্ম করবে।
⚔️ ???ℂℍ??? ⚔️
Our Knights ride into our first #IPL2021 battle against the Sunrisers tonight ?#KKRHaiTaiyaar #SRHvKKR pic.twitter.com/DAVEtYOKrH
— KolkataKnightRiders (@KKRiders) April 11, 2021
সোজা কথা বললে, এই আইপিএল (IPL) কেকেআরের (KKR) ঘুরে দাঁড়ানোর টুর্নামেন্ট। মর্গ্যান, কার্তিকদের টিমের মতোই হাল সানরাইজার্স হায়দরাবাদেরও। দু’বার চ্যাম্পিয়ন হওয়া টিম কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে তেমন পারফর্ম করতে পারছে না। ভালো শুরু করেও খেই হারিয়ে ফেলছে। তার বেশ কিছু কারণ আছে। মাঝে ডেভিড ওয়ার্নারের নির্বাসন, কেন উইলিয়ামসনের চোট সমস্যা। শুরুতে কিছুটা ঝামেলায় পড়লেও হায়দরাবাদ গত আইপিএলের শেষ দিকে জ্বলে উঠেছিল। কোয়ালিফায়ারে যখন পৌঁছয় কোনও টিম, তখন বুঝতে হবে, তাদের মধ্যে যথেষ্ট মশলা আছে। তার পরও ট্রফির কাছাকাছি পৌঁছতে পারেনি। এ বার অবশ্য অনেকটাই ব্যালান্সাড সাইড ওয়ার্নারের হায়দরাবাদ। দলে ফিরেছে ভুবনেশ্বর কুমার, দুর্দান্ত বোলিং করছে টি নটরাজন। রশিদ খানের স্পিনের ভেল্কিটা এখনও ব্যাটসম্যানদের বুঝতে কষ্ট হয়। সঙ্গে রয়েছে জেসন হোল্ডার। মণীশ পাণ্ডে, প্রীয়ম গর্গ, কেদার যাদব কিংবা অভিষেক শর্মারা দলের ভরসার মুখ হয়ে উঠতে পারে। তবে বিজয় শঙ্করকে কিন্তু বাড়তি দায়িত্ব নিতে হবে অলরাউন্ডার হিসেবে। আর রয়েছে আমাদের বাংলার ঋদ্ধিমান সাহা। ও-ই ওপেন করবে হায়দরাবাদের হয়ে।
নাইটদের এ বারও মুখ হতে পারে শুভমন গিল। গতবারও ও কিছু চমত্কার ইনিংস খেলেছে। ওর দিকে শুধু কেকেআর সমর্থকরা নয়, সারা ক্রিকেট দুনিয়া তাকিয়ে থাকবে। শুভমনের সঙ্গে জ্বলে উঠতে হবে রাহুল ত্রিপাঠীকেও। নীতিশ রানা, বিশ্বকাপজয়ী ইওন মর্গ্যান, দীনেশ কার্তিকরা যদি রানের গতিটা ধরে রাখতে পারে, তা হলে বিপক্ষকে চাপে রাখতে পারবে কেকেআর। আন্দ্রে রাসেল এবং সুনীল নারিনের মতো দুই ম্যাচ উইনারের উপরেও নির্ভর করবে অনেক কিছু।
আরও পড়ুন: IPL 2021: ‘গুরু’ ধোনিকে হারিয়ে জয়ের শিখরে ‘শিষ্য’ পন্থ
বলতে দ্বিধা নেই, নারিনের কাছে এটাই মেক অর ব্রেক আইপিএল। তিনি নিজেকে প্রমাণ করতে না পারলে কিন্তু সাকিব আল হাসান ওর জায়গা নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। বরুণ চক্রবর্তী যদি গত বারের মতো বোলিং করতে পারে, কামলেশ নাগারকোটি, প্রসিধ কৃষ্ণা, শিবম মাভিদের আগুন ঝরানো বোলিং দেখতে পাই, তা হলে কিন্তু কেকেআরকে থামানো মুশকিল হবে। কিং খানের টিমকে ক্ষুধার্ত বাঘের মতো খেলতে হবে। প্রতিটা ম্যাচ ফাইনাল ধরে এগোক ওরা। কেকেআরের খেলোয়াড়দের যা প্রতিভা, আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা, তৃতীয় বার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে। কেকেআর ফ্যান হিসেবে এটা আমার নিশ্চিত বিশ্বাস।