IPL: উইম্বলডনের টেনিস কোর্টে জন্ম হয়েছিল আইপিএলের! এই গল্প জানেন তো?

Jul 25, 2023 | 6:54 PM

IPL 2023: আর মাত্র কয়েক ঘণ্টার অপেক্ষা। আজ, শুক্রবার আইপিএলের ১৬তম সংস্করণ শুরু হতে চলেছে।

IPL: উইম্বলডনের টেনিস কোর্টে জন্ম হয়েছিল আইপিএলের! এই গল্প জানেন তো?
IPL: উইম্বলডনের টেনিস কোর্টে জন্ম হয়েছিল আইপিএলের! এই গল্প জানেন তো?

Follow Us

সঙ্ঘমিত্রা চক্রবর্তী

দেখতে দেখতে ১৫ বছর পার করে ফেলেছে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ। আজ শুরু হচ্ছে আইপিএল-১৬ (IPL)। টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে লড়াই মহেন্দ্র সিং ধোনির চেন্নাই সুপার কিংস বনাম হার্দিক পান্ডিয়ার গুজরাট টাইটান্সের। বিশ্ব জুড়ে বিপুল জনপ্রিয়তা, টাকার ছড়াছড়ি, নামী ব্র্যান্ডগুলোর হামলে পড়া, বিজ্ঞাপনী বাজারের তুঙ্গে থাকা, মাত্র একটা ম্যাচ থেকে বোর্ডের ১০০ কোটি আয়— আইপিএল বিশ্বের অন্যতম সফল ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ। ২০০৮ সালে শুরু হওয়া এই লিগ প্রথম ম্যাচ থেকেই সুপারহিট। ১৫ বছর আগে কী ভাবে শুরু হয়েছিল আইপিএল? বিস্তারিত জেনে নিন TV9Bangla-র এই প্রতিবেদেন।

কী ভাবে আইপিএলের স্বপ্ন দেখেছিলেন ললিত মোদী?

আইপিএলের জনক ললিত মোদী। বাইশ গজের লড়াইয়ের সঙ্গে ব্যবসার মিশেলে তৈরি করেছিলেন ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ। ভারতে ক্রিকেট প্রেমীদের অভাব নেই। সেই আবেগকে কাজে লাগিয়ে এক শহরের সঙ্গে আর এক শহরের ব্যাটে-বলের লড়াইকে আলাদা মাত্রা দিয়েছে এই আইপিএল। ব্যবসায়ী ললিত মোদি আমেরিকার পেস ইউনিভার্সিটি এবং ডিউক ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করেছেন। সেখানে তিনি পেশাদার ক্রীড়া লিগের জ্ঞান অর্জন করেছিলেন। তখন থেকেই ভারতে ক্রিকেট লিগ চালু করার স্বপ্ন দেখেছিলেন। ১৯৯৩ সাল থেকে তিনি ভারতে ক্রিকেট লিগ চালু করার কাজে হাত দেন। সম্প্রচারের জন্য ESPN এর সঙ্গে কথা বলেছিলেন। প্রথমে ঠিক হয়েছিল, ওয়ান ডে ধাঁচে হবে টুর্নামেন্ট। তার রয়্যালটি পাবে বিসিসিআই। ১৯৯৬ সালে বোর্ড ক্রিকেটারদের সঙ্গে এই নিয়ে কথাবার্তাও বলে। কিন্তু বোর্ডের একাংশের অনিচ্ছায় ওই লিগ শুরু করতে পারেননি ললিত।

ললিত মোদী হার মানেননি

ব্যর্থতার মধ্যে দিয়েই ললিত বুঝেছিলেন, ভারতের বাজারে বিশ্বমানের ক্রিকেট লিগ চালু করতে গেলে বোর্ডের অন্দরে পা দিতে হবে। প্রথমে হিমাচল ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন এবং তারপর পঞ্জাব ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনে তিনি যোগ দেন। ২০০৫ সালে রাজস্থান ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হন। ২০০৫ সালে বিসিসিআইয়ের নির্বাচনে সাহায্য করেন শরদ পাওয়ারকে। জগমোহন ডালমিয়াকে হারিয়ে বিসিসিআই সভাপতি হন শরদ পাওয়ার। ললিত মোদী বিসিসিআইয়ের সহ-সভাপতি নিযুক্ত হন। ২০০৭ সালে ফের ভারতে পেশাদার ক্রিকেট লিগ শুরু করার পথে হাঁটতে শুরু করে দেন ললিত। ২০০৭ সালের জুলাইতে ইংল্যান্ডে গিয়ে আইএমজি ওয়ার্ল্ডের ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রু ওয়াইডব্লাডের সঙ্গে দেখা করেন। উইম্বলডনের ফাইনাল ছিল সে দিন। তখনই তাঁদের মধ্যে আইপিএল নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছিল। ওয়াইডব্লাড এবং আইএমজি লন্ডন অফিসের ভাইস প্রেসিডেন্ট পিটার গ্রিফিথ তখন ললিত মোদীকে বোঝান, কী ভাবে আইপিএলের করার স্বপ্ন বাস্তবায়িত করতে পারেন ললিত।

বোর্ড আইপিএলের জন্য ১০০ কোটির চেক দিয়েছিল

২০০৭ সালের ১০ সেপ্টেম্বর ক্রিকেটারদের আইপিএল শুরু করার জন্য ললিত মোদীকে ২৫ মিলিয়ন ডলারের (সেই সময়ে প্রায় ১০০ কোটি টাকা) চেক দিয়েছিলেন বিসিসিআই সভাপতি শরদ পাওয়ার। মুম্বইয়ে তাঁর ব্যক্তিগত অফিস থেকে আইপিএলের নীলনকশা সাজাবেন, এই শর্তে ললিতকে ওই টাকা দেওয়া হয়েছিল। জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, এর জন্য তিনি মাইনে পাবেন না। পরিবর্তে ললিত শর্ত রাখেন, ৫ বছর এই লিগ থেকে দূরে থাকবে বিসিসিআই।

আইপিএল শুরুর সেই অধ্যায়

২০০৭ সালে শুরু হয় প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। ওই সময়, ১২ সেপ্টেম্বর দিল্লিতে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের ঢাকে কাঠি পড়ে গিয়েছিল। বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে রাহুল দ্রাবিড়, সচিন তেন্ডুলকার, সৌরভ গাঙ্গুলি, স্টিফেন ফ্লেমিংয়ের মতো তারকারা উপস্থিত ছিলেন। বিভিন্ন দেশের পাশাপাশি আইসিসির কর্তারাও ছিলেন। বিশ্বকাপের সময় ক্রিকেটারদের সঙ্গেও দেখা করেন ললিত মোদী। আইপিএল থেকে ক্রিকেটাররা যে পরিমাণ অর্থ ও সুযোগ সুবিধা পাবেন, তুলে ধরেছিলেন ললিত। টুর্নামেন্টের জন্য বিশ্বের ক্রিকেট বোর্ডগুলোর সাহায্যও চাওয়া হয়। ইংল্যান্ড ছাড়া সব দেশ ভারতের লিগে ক্রিকেটার পাঠাতে সম্মতি জানিয়েছিল। পাকিস্তানও ছিল সেই তালিকায়।

ফ্রাঞ্চাইজির জন্য নিলাম

৮টি শহর দিল্লি, মুম্বই, কলকাতা, চেন্নাই, বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদ, জয়পুর এবং মোহালি টুর্নামেন্টের জন্য নির্বাচিত হয়েছিল। ২০০৮ সালের ২৪ জানুয়ারি ফ্র্যাঞ্চাইজির নিলাম শুরু হয়েছিল। দেশের সবচেয়ে বড় ব্যবসায়ী মুকেশ আম্বানি থেকে শুরু করে বলিউড অভিনেতা শাহরুখ খান কিনেছিলেন ফ্র্যাঞ্চাইজি।

ক্রিকেটারদের নিলাম

২০০৮ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি প্রথমবার আইপিএলের নিলাম অনুষ্ঠিত হয়। ধোনি ছিলেন উদ্বোধনী মরসুমের সবচেয়ে দামি ক্রিকেটার। তাঁকে প্রায় সাড়ে ৬ কোটি টাকায় কেনে চেন্নাই। প্রতিটি দল একজন ক্রিকেটারকে আইকন প্লেয়ার বানিয়েছিল। সচিন তেন্ডুলকরকে নিয়েছিল মুম্বই, দিল্লি নেয় বীরেন্দ্র সেওয়াগকে, কলকাতা নিয়েছিল সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে। হায়দরাবাদের আইকন হন ভিভিএস লক্ষ্মণ, বেঙ্গালুরু বেছে নেয় রাহুল দ্রাবিড়কে এবং মোহালি দল নিয়েছিল যুবরাজ সিংকে। নিলামে তাঁদের কোনও দর ছিল না। দলের সবচেয়ে দামি ক্রিকেটারদের চেয়ে তাঁদের ১৫ শতাংশ বেশি দেওয়া হয়েছিল। আইপিএলের প্রথম মরসুমে ৫৯টা ম্যাচ আয়োজন করতে লেগেছিল ৪৪ দিন। প্রথম আইপিএলের ফাইনালে মহেন্দ্র সিং ধোনির চেন্নাই সুপার কিংসকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল শেন ওয়ার্নের রাজস্থান রয়্যালস।

Next Article