কলকাতা: বিহারের গোপালগঞ্জে তখন সন্ধে নামছে। অন্য দিনের মতো গ্রামের রাস্তাঘাট অনেক আগেই শুনশান। কেউ মোবাইল, কেউ টিভিতে রেখেছেন চোখ। দরগাশরিফ এলাকায় দু’কামরার ছোট বাড়ির আনাচে কানাচে কৌতুহলী লোকজনের ভিড়। গোপালগঞ্জের সকলেই জানেন, আলি আহমেদের ছেলে এ বারের নিলামে চূড়ান্ত তালিকায় জায়গা পেয়েছেন। কিন্তু তা তো সব নয়। শুধু স্বপ্নের দোরগোড়ায় এসে দাঁড়ানো। কে জানত, রাত নামতেই উৎসব শুরু হয়ে যাবে। ঈশান কিষাণ, মুকেশ কুমারের পর বিহারের আরও এক ছেলে জায়গা পেয়ে যাবে আইপিএলে (IPL)। ২০ লক্ষ টাকা ছিল বেস প্রাইস। তাতেই কলকাতা নাইট রাইডার্স তুলে নিল সাকিব হোসেনকে (Sakib Hussain)। ২০ বছরের ডানহাতি পেসার আন্দ্রে রাসেল, মিচেল স্টার্কের টিমমেট হতেই ঢোল, ব্যান্ডপার্টি নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়েন গোপালগঞ্জের মানুষজন। কেক কেটে কেকেআরে (KKR) সুযোগ পাওয়া সেলিব্রেট করেন সাকিব।
কে এই সাকিব হোসেন? কার জন্য ২০ লক্ষ টাকা খরচ করলেন গৌতম গম্ভীর? বিহারের গোপালগঞ্জের ছেলের জীবন পাল্টে গিয়েছিল ২০২১ সালে। পাটনায় অনুষ্ঠিত পাটনা ক্রিকেট লিগে চোখে পড়ে যান। দুরন্ত সুইংয়ের পাশাপাশি চমৎকার গতি ও লাইন-লেন্থের জন্য নজর কেড়ে নেন। তারপর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। অনূর্ধ্ব ১৯ বিহার টিমে সুযোগ পেয়ে যান সাকিব। পারফর্ম করেন ভালো। সেখান থেকেই বেঙ্গালুরু জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে নিজেকে ঘষামাজা করার সুযোগ পেয়ে যান। ২০২২ সালে আবার মুস্তাক আলি ট্রফিতে বিহারের হয়ে খেলার সুযোগ পান সাকিব। সেখানেও পারফর্ম করেন। গুজরাটের বিরুদ্ধে ২০ রান দিয়ে নেন চারটে উইকেট। তার মধ্যে নিজের চতুর্থ ওভারে নিয়েছেন দুটো উইকেট। বোলার হিসেবে সাকিবের ভবিষ্যৎ যে অত্যন্ত উজ্জ্বল, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
মুস্তাক আলিতে ভালো পারফর্ম করার পরই আইপিএল টিমগুলোর নজরে পড়ে যান সাকিব। অনেকেই তাঁকে নেট বোলার হিসেবে যোগ দিয়ে বলেছিল। সাকিব বেছে নেন মহেন্দ্র সিং ধোনির টিম চেন্নাই সুপার কিংস। ভুল যে করেননি, তা প্রমাণ হয়ে যাচ্ছে। নেটে সাকিবের প্রতিভা দেখে প্রশংসাও করেছেন ধোনি। ভারতের প্রাক্তন ক্যাপ্টেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ও তাঁর বোলিংয়ের প্রশংসা করেছেন।
সাকিব বলছেন, ‘কেকেআরের মতো টিম আমাকে নেওয়ায় অত্যন্ত খুশি। গোপালগঞ্জ, বিহারের সবাই সাপোর্ট করেছেন আমাকে। আইপিএলে সুযোগ পেলে সেরাটা দিতে চাই। কোচ মিন্টু ভাই আর বেঁচে নেই। ওঁর জন্যই এত দূর আসতে পেরেছিলাম। উনি সব সময় বলতেন, বড় মঞ্চে খেলার স্বপ্ন দেখতে। অবশেষে সেটা পূরণ হচ্ছে। মিন্টু ভাই বেঁচে থাকলে খুব খুশি হতেন।’