কলকাতা: আজ ২৫ জুন। আজকের দিনটার সঙ্গে কোটি কোটি ভারতবাসীর একটা আলাদা আবেগ জড়িয়ে রয়েছে। ভারতের ক্রিকেটপ্রেমীরা এই দিনটা কখনও ভুলবে না। আর ভুলবেই বা কি করে! ঠিক ৩৯ বছর আগে আজকের দিনেই প্রথম বার বিশ্বকাপ জিতেছিল কপিল দেবের (Kapil Dev) ভারত। ৮৩-র বিশ্বকাপ (1983 World Cup) জয় ভারতকে ক্রিকেট মানচিত্রে ভবিষ্যতে এক অন্য জায়গায় পৌঁছে দিয়েছিল। ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপের ফাইনালে লর্ডসের হাউসফুল গ্যালারিতে ক্লাইভ লয়েডের ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়েছিল কপিল দেবের ভারত। ‘৮৩’ সিনেমার দৌলতে ভারতের প্রথম বার বিশ্বকাপ জয়ের একাধিক গল্প উঠে এসেছে আগেই। সেই ম্যাচের সেরার পুরস্কার পেয়েছিলেন কিংবদন্তি ভারতীয় ক্রিকেটার মহিন্দর অমরনাথ (Mohinder Amarnath)। ভারতের প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের ৩৯ বছর পূর্তিতে সেই অমরনাথই তুলে ধরলেন এক অন্য গল্প।
উল্লেখ্য, ১৯৮৩ সালের ২৫ জুন, লর্ডসে টসে জিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়ক ক্লাইভ লয়েড ভারতকে ব্যাটিংয়ে পাঠান। প্রথমে ব্যাটিং করে ১৮৩ রান তোলেন কপিল দেবরা। ভারতের ইনিংস চলাকালীন তিন নম্বরে ব্যাটিং করতে নেমে ২৬ রান করে আউট হয়েছিলেন মহিন্দর অমরনাথ। এরপর ৭ ওভার বল করে ১২ রান খরচ করে ৩টি উইকেট নেন তিনি। যার ফলে, ভারতের প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের দিন ম্যাচের সেরার পুরস্কার পেয়েছিলেন মহিন্দর অমরনাথ।
কপিল দেবের ভারত যে ক্লাইভ লয়েডের ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারাতে পারে, এমন কথা হয়তো সেই সময় কেউ ভাবেননি। ভারতের প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের ৩৯ বছর পূর্তিতে অমরনাথ জানান, লর্ডসের সেই ম্যাচে ক্যারিবিয়ানরা হেরে যাওয়ায়, তাঁরা রীতিমতো হতাশ হয়েছিলেন। তবে এরপর বেশ কয়েকজন ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটার ভারতীয় ড্রেসিংরুমে এসেছিলেন। এরপর কী ঘটেছিল? অমরনাথ বলেন, “ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্লেয়াররা ফাইনালে ভারতের কাছে হেরে যাওয়ার পর খুবই হতাশ হয়েছিলেন। আমরা ফিল্ডিং করার পর, সরাসরি আমাদের ড্রেসিংরুমে চলে গিয়েছিলাম। লর্ডসের ভরা গ্যালারির সামনে ক্যারিবিয়ানরা হারবে না এই ব্যপারে তাদের সমর্থকরাও বিশ্বাসী ছিল। কিন্তু আমরা আলাদা মানসিকতা নিয়ে সেই ম্যাচে মাঠে নেমেছিলাম। আমরা জানতাম, আমাদের প্রত্যেকের কী কাজ। আমার এখনও মনে আছে, আমরা আমাদের জয়টা সেলিব্রেট করার পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের ড্রেসিংরুমে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে দেখি সকলে কাঁদছিল। ওদের চোখ লাল হয়ে গিয়েছিল। আমার ওদের সকলের সঙ্গেই বন্ধুত্বপূর্ণ, ভালো সম্পর্ক ছিল।”
তিনি আরও বলেন, “আমি দেখেছিলাম, ওদের ড্রেসিংরুমে বিশ্বকাপ জয়ের সেলিব্রেশন করার জন্য শ্যাম্পেন রাখা ছিল। এরপরই ওদের মধ্যে কয়েকজন আমাদের ড্রেসিং রুমে কয়েকটা শ্যাম্পেন বোতল নিয়ে এসেছিল। ওদের মধ্যে ভালো স্পোর্টসম্যান স্পিরিট ছিল।”
ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো একটা তাবড় দলকে হারিয়ে সেদিন শুধু বিশ্বকাপই দেশে নিয়ে আসেনি কপিলের ভারত। সারা দুনিয়াকে কপিল দেবরা দেখিয়েছিলেন ভারতীয় ক্রিকেট আগামী দিনে কোন জায়গায় যেতে পারে। বলা বাহুল্য, এরপর সত্যিই তিন ফর্ম্যাটের ক্রিকেটেই ভারতীয় দল একটা আলাদা জায়গা করে নিয়েছে।