Controversial Cricket Story: অজি আম্পায়ারের অনড় সিদ্ধান্ত, মুরলীধরনের নো বলের ‘সাত’কাহন

TV9 Bangla Digital | Edited By: সঙ্ঘমিত্রা চক্রবর্ত্তী

Aug 17, 2022 | 6:05 PM

নো বল বিতর্ক নিয়ে কথা হলেই আমাদের স্মৃতিতে ভেসে ওঠে আজ থেকে ২৭ বছর আগেকার এক ঘটনা।

Controversial Cricket Story: অজি আম্পায়ারের অনড় সিদ্ধান্ত, মুরলীধরনের নো বলের সাতকাহন
বিতর্কের ক্রিকেট : ক্রিকেটের বিতর্ক

Follow Us

আলো আর অন্ধকার, দুই-ই পা মেলায় ইতিহাসের মিছিলে। উজ্জ্বলতম অতীত যেমন ফিরে আসে স্মৃতিতে, তেমনই চুপিসারে হানা দেয় কলঙ্কও। ক্রিকেট ইতিহাস যেমন রেকর্ড, সাফল্য, নায়কদের খোঁজ দেয়, তুলে ধরে বিতর্কিত ঘটনাও। ক্রিকেট ইতিহাসের মহাবিতর্কিত নানা গল্পের খোঁজ দিল TV9 Banglaসঙ্ঘমিত্রা চক্রবর্তী তুলে ধরলেন চতুর্থ কিস্তি

১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপ জিতে বিশ্বক্রিকেটে নিজেদের ছাপ রাখা শুরু করেছিল শ্রীলঙ্কা (Sri Lanka)। সেই শ্রীলঙ্কার সাফল্যের বীজ কিন্তু বোনা শুরু হয়েছিল তার থেকে ঠিক এক বছর আগে। আর এই ব্যাপারে জানতে হলে ফিরে যেতে হবে ১৯৯৫ সালের বক্সিং টেস্টে। ক্রিকেটে নো বল বিতর্ক উঠলেই অনেকেই সরব হয়ে থাকেন। আর নো বল বিতর্ক নিয়ে কথা হলেই আমাদের স্মৃতিতে ভেসে ওঠে আজ থেকে ২৭ বছর আগেকার এক ঘটনা। মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে চলছিল বক্সিং ডে টেস্ট। সেই সময় ২৩ বছরের তরুণ মুথাইয়া মুরলীধরনের (Muttiah Muralitharan) বিরুদ্ধে নো বল বিতর্কের আগুন জ্বালিয়েছিলেন অজি আম্পায়ার ড্যারেল হেয়ার। সেই বক্সিং ডে টেস্টের স্মৃতি আজীবন মনে থাকবে শ্রীলঙ্কার কিংবদন্তি প্রাক্তন তারকা ক্রিকেটার মুথাইয়া মুরলীধরনের। পুরো ক্রিকেট দুনিয়া রীতিমতো চমকে গিয়েছিল আম্পায়ার ড্যারেল হেয়ারের সিদ্ধান্তে। আসলে ১৯৯৫ সালের বক্সিং ডে টেস্ট চলাকালীন, মুরলীধরনের বলে ড্যারেল মোট ৭ বার নো বল ডাকেন। তবে ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের মতে, নো বল হলে তা সাত নয়, সত্তর বারও কল করা যেতেই পারত। কিন্তু ড্যারেল হেয়ার বার বার মুরলীধরনের বল নো বল কল করছিলেন, তাঁর অবৈধ বোলিং অ্যাকশনের জন্য়। তাঁর বোলিং অ্যাকশন যে অবৈধ, তা কিন্তু প্রমাণিত হয়নি। তবে, সেই ঘটনার জেরে পুরো দল নিয়ে মাঠ ছেড়ে চলে যেতে চেয়েছিলেন তখনকার লঙ্কান অধিনায়ক অর্জুন রণতুঙ্গা। যদিও শেষ অবধি দুই দল ম্যাচ খেলে মাঠ ছেড়েছিল।

মুরলীধরনের বোলিং অ্যাকশন অবৈধ বলে ঘোষণা করতে পারেনি আইসিসি। কারণ, তিনি দফায় দফায় বেশ কয়েকবার আইসিসির ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা দিয়েছিলেন। জন্মগতভাবে তাঁর কনুই কিছুটা বাঁকা হওয়ায় কখনও তিনি কনুই সোজা করতে পারতেন না। যার ফলে তিনি যখনই বল করতেন মনে হত তাঁর বোলিং অ্যাকশনে কিছু গলদ আছে। হয়তো বল ছুঁড়ছেন। কিন্তু আইসিসি তাঁকে এই ব্যপারে সবুজ সংকেত দেওয়ায় মুরলীকে নিয়ে আর প্রশ্নের জায়গা ছিল না। যদিও বক্সিং ডে টেস্টে ৩৮ ওভার বল করে ১২৪ রান খরচ করেছিলেন মুরলী। আর পেয়েছিলেন মাত্র ১টি উইকেট। সেই ম্যাচে ১০ উইকেটে জিতেছিল অস্ট্রেলিয়া।

শুধু মুথাইয়া মুরলীধরনকে সাত বার নো বল কল করে থেমে থাকেননি ড্যারেল হেয়ার। তিনি একই সঙ্গে ওই ম্যাচে মুরলীকে খুঁটিয়ে দেখার জন্য মাঠে তাঁর অপর প্রান্তে থাকা কিউয়ি আম্পায়র স্টিভ ডুনের সঙ্গে জায়গা বদলও করেন। যা নিয়েও রীতিমতো সরগরম হয়েছিল ক্রিকেটপ্রেমীরা। যদিও তাঁর যুক্তি হিসেবে ড্যারেল হেয়ার বলেছিলেন, “মুথাইয়ার বোলিং অ্যাকশন পরিষ্কার দেখতে হলে ওর পিছন থেকে দেখা ভালো। আমি জানি, ব্যাপারটা হয়তো ভাবনার খোরাক জোগাতে পারে, কিন্তু সেই সময় আমার ওটাই ভালো বলে মনে হয়েছিল। স্কোয়্যার লেগে দাঁড়ালেও বোলারের অ্যাকশন দেখতে পাওয়া যায়। তবে আমি একটু অন্য ভাবে ওকে দেখতে চাইছিলাম। কারণ ও অনেকগুলো বৈধ ডেলিভারিও করছিল।”

সেই সময়ে অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক, মার্ক টেলর স্বীকার করেছিলেন যে ১৯৯৫ সালের বক্সিং ডে-তে তাঁর দল আম্পায়ার হেয়ারের দায়িত্ব দেখে রীতিমতো চমকে গিয়েছিল। কিন্তু তিনি এও জানান, তাঁর মতে হেয়ারের সিদ্ধান্ত আম্পায়ার হিসেবে যথেষ্ট সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল। তিনি বলেন, “সকলে ড্যারেলকে নিয়ে যাই বলুক না কেন, তিনি সেটাই করেছেন যেটা নিজে ঠিক মনে করেছেন। সকলেই মুরলীর অ্যাকশন নিয়ে কিন্তু কথা বলছিল। ড্যারেল তাই দেখতে চাইছিল মুরলী ঠিক, নাকি ভুল। তাই তিনি সেই সিদ্ধান্তটা নিয়েছিলেন। তিনি যেটা ঠিক মনে করেছেন সেটাই করেছেন।” তবে মার্ক টেলর যাই বলুন না কেন, এশিয়ান দলগুলির সঙ্গে এরপর থেকে হেয়ারের ঝামেলার সূত্রপাত হয়।

বর্তমানে সন্দেহজনক বোলিং অ্যাকশনের জন্য একাধিক প্লেয়ারকে আইসিসির পক্ষ থেকে নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। যার মধ্যে পাকিস্তানের অফস্পিনার সইদ আজমল, ভারতের প্রজ্ঞান ওঝা এবং আরও অনেক তরুণ বোলারকে সন্দেহজনক বোলিং অ্যাকশনের জন্য আইসিসি নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করেছে।

মুরলী কিন্তু বরাবর আইসিসির অভিযানকে সমর্থন করেছেন। মুরলী তাঁর পুরো কেরিয়ারে একাধিকবার চ্যাকিংয়ের অভিযোগের মুখোমুখি হওয়া সত্ত্বেও, কখনও অসহযোগিতা করেননি। বরং তাঁর অ্যাকশন পরীক্ষা করার জন্য কর্তৃপক্ষকে বরাবর সহযোগিতা করেছিলেন। তবে এ কথা আজও একবাক্যে সকলে স্বীকার করেন যে, মুরলীর রহস্যময় বোলিং অ্যাকশন কিন্তু অসামান্য। শ্রীলঙ্কা এখনও তাঁর যোগ্য উত্তরসূরি খুঁজে পায়নি। একাধিকবার মাঠে অবৈধ বোলিং অ্যাকশনের জন্য মুরলীর ওপর আঙুল উঠলেও, তিনি সৎ ভাবে ক্রিকেট খেলে গিয়েছেন। এবং জেন্টলম্যানস গেমে নিজের ছাপ রেখে গিয়েছেন।

Next Article