T20 World Cup 2021: মিচেল ঝড়ে বিশ্বকাপের মঞ্চে মধুর বদলা নিউজিল্যান্ডের

TV9 Bangla Digital | Edited By: সঙ্ঘমিত্রা চক্রবর্ত্তী

Nov 10, 2021 | 11:39 PM

ক্রিকেটে বলা হয়, যে কোনও টুর্নামেন্টের ফাইনালে পৌঁছতে হলে ধৈর্য সবচেয়ে বড় অস্ত্র। আর দরকার পড়ে সঠিক সময়ে জ্বলে ওঠা। ইংল্যান্ড ঠিক এখানেই ব্যাকফুটে চলে গিয়েছিল। নিউজিল্যান্ড ঠিক এখানেই আগ্রাসী হয়ে উঠল। ক্রিকেট যে বরাবর সাহসীদের সঙ্গ দেয়, উইলিয়ামসনের থেকে ভালো আর কে জানেন!

T20 World Cup 2021: মিচেল ঝড়ে বিশ্বকাপের মঞ্চে মধুর বদলা নিউজিল্যান্ডের
T20 World Cup 2021: মিচেল ঝড়ে বিশ্বকাপের মঞ্চে মধুর বদলা নিউজিল্যান্ডের

Follow Us

অভিষেক সেনগুপ্ত

ইংল্যান্ড ১৬৬-৪ (২০ ওভারে)
নিউজিল্যান্ড ১৬৭-৫ (১৯ ওভারে)

ক্রিস জর্ডনের ওই বলটাই বোধহয় ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট। জিমি নিস্যাম লফটেড শট বাউন্ডারি লাইনে আছড়ে পড়ল? নাকি ক্যাচ ধরলেন জনি বেয়ারস্টো? নাকি, নিস্যাম রান আউট? ১৭তম ওভারে এত প্রশ্নের উত্তর মিলল টিভি আম্পায়ারের কাছে— নট আউট! অর্থাৎ ছয়!

ক্রিকেট অনেক সময়ই অতীত ফিরিয়ে আনে। সুযোগ করে দেয় ভুল শুধরে নেওয়ার। তিন বছর আগে ওয়ান ডে বিশ্বকাপ ফাইনালে ট্রফি আর ইংল্যান্ডের মাঝে দাঁড়িয়ে ছিলেন জিমি নিস্যামই। সে দিন নিস্যাম থামাতে পারেননি ইওন মর্গ্যানদের। এ বার পারলেন। জর্ডনের ওই ওভারটাই ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট। ২৪ বলে ৫৭ রান দরকার। কিউয়িরা বদলার রাস্তা থেকে ক্রমশ সরছে। ঠিক এই সময় ক্রিজে এলেন নিস্যাম। ৬ বলে ১৯ রান নিলেন। ওভার থেকে এল ২৩ রান। আদিল রশিদের বলে ২৭ করে আউট হয়ে গেলেন ঠিকই, কিন্তু নিস্যাম নড়িয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন ইংল্যান্ডের আত্মবিশ্বাস। বাকি কাজটা শেষ করে গেলেন ড্যারেল মিচেল।

কিংবদন্তি ক্লাইভ লয়েড বিশ্বকাপের সম্ভাব্য চ্যাম্পিয়ন খুঁজতে গিয়ে এক নম্বরে রেখেছিলেন নিউজিল্যান্ডকে। দু’বার বিশ্বকাপ জেতা প্রাক্তন ক্যারিবিয়ান ক্যাপ্টেনের য়ুক্তি ছিল, ‘ঠান্ডা মাথায় কাজ শেষ করতে পারে ওরা। টিমে চ্যাম্পিয়নের সংখ্যা অনেক বেশি।’

স্যার ক্লাইভ লয়েড যে ভুল ঘোড়া বাছেননি, আবু ধাবির সেমিফাইনালে প্রমাণ রেখে গেলেন কেন উইলিয়ামসনরা। মার্টিন গাপ্টিল নামক ঝড় যদি না ওঠে কুছ পরোয়া নেই। উইলিয়ামসন দাঁড়িয়ে গেলে বিপক্ষের চাপ হতে পারে। ডেভন কনওয়ে, গ্লেন ফিলিপসরাও পাল্টে দিতে পারেন খেলার রং। নিস্যাম, স্যান্টনারদের হিসেবের বাইরে রাখা যাবে না।

এই ম্যাচ অবশ্য ড্যারেল মিচেল নামের এক ৩০ বছরের যুবকের। বিশ্বকাপের আগে পর্যন্ত কোনও টিমেরই নোটবুকে জায়গা ছিল না তাঁর। এই আমিরশাহি থেকেই ওপেন করা শুরু করেন। আর তাতেই রীতিমতো ভয় পাইয়ে দিয়েছেন সব প্রতিপক্ষকে। গ্রুপ লিগে বড় রান করলেও হাফসেঞ্চুরি ছিল না। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সেটাও পেয়ে গেলেন। ৪৭ বলে নট আউট ৭২ রানের ইনিংস। ৪টে চার ও ৪টে ছয় দিয়ে জয়ের মালা গেঁথেছেন। ম্যাচের সেরা তাঁকে ছাড়া আর কাকে বাছা যেত!

মধুর বদলার সুখময় রাত নামতে পারে, শুরুতে কিন্তু আন্দাজও করা যায়নি। বরং ইংল্যান্ড টিম শুরুটা দুরন্ত করেছিল। দুই ওপেনার জস বাটলার (২৩), জনি বেয়ারস্টো (১৩) দ্রুত ফিরে গেলেও ডেভিড মালান আর মইন আলি টিমকে বেশ ভালো জায়গায় পৌঁছে দিয়েছিলেন। মালান ৩০ বলে ৪১ করে গেলেন। ৩৭ বলে ৫১ করে নট আউট থেকে যান মইন। আবু ধাবির স্লো, বল থমকে আসা পিচে ১৬৬-৪ শুধু ভালো নয়, বেশ ভালো স্কোর। তার উপর টিমে ক্রিস ওকস, আদিল রশিদ, লিয়াম লিভিংস্টোন, ক্রিস জর্ডনদের মতো অভিজ্ঞ বোলার। কিন্তু ক্রিকেটের এই মজা। টিম দেখে রায় দেয় না ক্রিকেট। য়দি তাই দিত, তা হলে বিরাট কোহলির ভারত ছিটকে যেত না। দু’বারের বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ ফাইনালে উঠত।

২০১৯ থেকে ২০২১— তিন বছরে তিন ফর্ম্যাটেই কেন সেরার আসনে নিউজিল্যান্ড? ওয়ান ডে বিশ্বকাপের ফাইনালে হারের পর এই বছরই ভারতের বিরুদ্ধে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ জয়। এ বার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে। এখটা টিম যখন বারবার ট্রফির দরজার কড়া নাড়ে, বুঝতে হবে তাদের মানসিকতাতেই আমূল পরিবর্তন এসেছে। তারকার ছড়াছড়ি কোনও দিনই নেই টিমে। টেস্টে উইলিয়ামসন, ওয়ান ডে-তে গাপ্টিল, টি-টোয়েন্টিতে ট্রেন্ট বোল্ট, টিম সাউদি জুটি। আসলে তারকার উর্ধ্বে উঠে কিউয়িরা টিমগেমে বিশ্বাসী। ক্রিকেট আসলে মালা গাঁথার খেলা। ছোট ছোট অবদান সাজাতে সাজাতে একটা ট্রফির অবয়ব হয়ে ওঠে। নিউজিল্যান্ড এটাই করেছে। পাকিস্তানের কাছে হেরেও ভারতের বিরুদ্ধে জয় এসেছিল যে কারণে। আফগানিস্তানের মতো বিস্ফোরক টিমকে হারিয়ে শেষ চারে পা রেখেছিল। আবার ফাইনালে ওঠার রাস্তায় তা-ই করে দেখালেন নিস্যাম-মিলেচরা।

১৬৭ তাড়া করতে নেমে শুরুতেই ১৩-২ হয়ে গিয়েছিল নিউজিল্যান্ড। ক্রিস ওকস ফিরিয়ে দিয়েছেন গাপ্টিল ও উইলিয়ামসনকে। যে কোনও টিমের ক্ষেত্রে এমন হলে বাড়ি ফেরার বিমানের টিকিট কাটতে হত। নিউজিল্যান্ডের এখানেই বাজিমাত। ছোট ছোট অবদান জুড়তে শুরু করে দিয়েছিলেন কনওয়ে, মিচেল। বছর খানেক আগেও দক্ষিণ আফ্রিকার ঘরোয়া ক্রিকেট খেলতেন। জোহানেসবার্গের ছেলে নিউজিল্যান্ড চলে গিয়েছিলেন একসময়। কনওয়ের ৪৬ রানটা কিন্তু মিচেলের মতোই গুরুত্বপূর্ণ। কিউয়ি কিপার যে আগামী দিনে কুড়ি-বিশের ক্রিকেটে আলোড়ন ফেলতে পারেন, তার ইঙ্গিত রেখে গেলেন।

ক্রিকেটে বলা হয়, যে কোনও টুর্নামেন্টের ফাইনালে পৌঁছতে হলে ধৈর্য সবচেয়ে বড় অস্ত্র। আর দরকার পড়ে সঠিক সময়ে জ্বলে ওঠা। ইংল্যান্ড ঠিক এখানেই ব্যাকফুটে চলে গিয়েছিল। নিউজিল্যান্ড ঠিক এখানেই আগ্রাসী হয়ে উঠল। ক্রিকেট যে বরাবর সাহসীদের সঙ্গ দেয়, উইলিয়ামসনের থেকে ভালো আর কে জানেন!

সংক্ষিপ্ত স্কোর‌: ইংল্যান্ড ১৬৬-৪ (মইন নট আউট ৫১, মালান ৪১, বাটলার ২৯, নিস্যাম ১-১৮, সাউদি ১-২৪, সোধি ১-৩২)। নিউজিল্যান্ড ১৬৭-৫ (মিচেল নট আউট ৭২, কনওয়ে ৪৬, নিস্যাম ২৭, লিভিংস্টোন ২-২২, ওকস ২-৩৬)।

Next Article