মুম্বই: মাঝপথে আইপিএল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের ভূমিকা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। ঝুঁকি নিয়ে দেশের মাটিতে আইপিএল আয়োজনের সাহসিকতা দেখায় বিসিসিআই। কিন্তু ক্রিকেটারদের, সাপোর্ট স্টাফদের সংক্রমণের ফলে মাঝপথেই স্থগিত করে দিতে হয় জনপ্রিয় টি-টোয়েন্টি লিগ। সাম্প্রতিককালে এমন ব্যর্থতা কখনও হয়নি। বোর্ডের এই ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করছে কর্তাদেরই একাংশ। গভর্নিং কাউন্সিলের প্রস্তাবকে পাত্তাই দেননি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়রা। আর তার জেরেই করোনার কোপে পড়ল আইপিএল।
আইপিএল স্থগিত হয়ে যাওয়ায় বেশ কয়েকটি বিষয় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আসছে। টুর্নামেন্ট আয়োজনের জন্য আদৌও কি এসওপি বা নির্দেশিকা ঠিকঠাক ভাবে পালন করা হয়েছিল? তা নিয়েই প্রশ্ন তুলছেন বোর্ডের একাংশ।
১. ক্রিকেটারদের জৈব সুরক্ষা বলয়ে রাখার জন্য যে পরিষেবা দরকার তার জন্য ব্রিটেনের একটি সংস্থাকে নিয়োগ করেছিল বোর্ড। সেই সংস্থার ভূমিকা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। বলয়ে থেকেও কী ভাবে ক্রিকেটাররা করোনা সংক্রমিত হন, তা বুঝতে পারছেন না কর্তাদের একাংশ।
২. ক্রিকেটারদের রাখার জন্য যে হোটেল বুকিং করা হয়েছিল, তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। আদৌ কি সঠিক পদ্ধতিতে হোটেল বুকিং করেছিল বোর্ড? স্টেডিয়াম থেকে কম দূরত্বের হোটেলে ক্রিকেটারদের রাখা হয়েছিল। একটি ফ্র্যাঞ্চাইজি দল সেই হোটেল থেকে বেরিয়ে আবার ১২ দিন পর সেই হোটেলে ফিরে আসে। তার জন্য আগে ভাগে বুকিং করা হয়নি। জৈব সুরক্ষা বলয় ভেঙেই সেই হোটেল থেকে বেরিয়েছিল ফ্র্যাঞ্চাইজি দলটি। এসব দেখেও কেন কোনও ভূমিকা নেয়নি বোর্ড?
৩. মাঠকর্মী ছাড়া কোনও দলেরই স্টেডিয়ামে অনুশীলন করার কথা নয়। মাঠকর্মীদের করোনা আক্রান্ত হওয়ার খবর আইপিএল শুরুর আগে থেকেই আসছিল। এ সব দেখেও নড়েচড়ে বসেনি বোর্ড। মাঠকর্মীরা জৈব সুরক্ষা বলয়ের বাইরে ছিলেন। আর তাদের সংস্পর্শে আসেন ক্রিকেটার, কোচিং স্টাফেরা। গতকাল দিল্লিতে ৫ মাঠকর্মী করোনা আক্রান্ত হন।
৪. হোম অ্যাডভান্টেজ এড়াতে বিভিন্ন শহরে ম্যাচ আয়োজন করে বিসিসিআই। এটা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। একটাই শহরে দলগুলোকে রেখে আইপিএল আয়োজন করতেই পারত বোর্ড। অথচ হোম অ্যাডভান্টেজ না দেওয়ার জন্য বিভিন্ন শহরে ম্যাচ আয়োজন করে বিসিসিআই। দর্শক ছাড়াই আইপিএল অনু্ষ্ঠিত হয়েছে। বোর্ডের একাংশ কর্তার যুক্তি, দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামেই যদি খেলা হয় তাহলে হোম অ্যাডভান্টেজের প্রসঙ্গ আসে কীভাবে?
৫. গত বছর সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে আইপিএল আয়োজিত হয়েছিল। ৩টি শহরে খেলাগুলি হয়েছিল। কিন্তু কোনও দলই বিমানে করে যাতায়াত করেনি। প্রত্যেক দলের জন্য ছিল আলাদা আলাদা টিম বাস। বিমানে করে এক শহর থেকে আরেক শহরে আইপিএল খেলতে গিয়েই বাধে বিপত্তি। ক্রিকেটারদের সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায় এর ফলে।
আরও পড়ুন:আইপিএল স্থগিত, বিশ্বকাপেও আশঙ্কার মেঘ দেখছে বিসিসিআই
এ ছাড়া ফ্র্যাঞ্চাইজি দলের প্রতিনিধি, ম্যাচ অফিসিয়াল, ম্যাচ পরিচালনার দায়িত্বে থাকা টিম, মাঠকর্মী, হোটেল কর্মী, সম্প্রচারকারী দল, ভেনু অপারেশনস টিম সবার জন্য আলাদা আলাদা জোন করা উচিত ছিল। কিন্তু এমন ভাবে টুর্নামেন্ট আয়োজন করা হয়, যেখানে একে অপরের সংস্পর্শে চলে আসেন। সূত্রের খবর, বোর্ডের দেওয়া নির্দেশিকা একেবারেই ঠিকঠাক ভাবে পালন করা হয়নি। আইপিএল-১৪ এ ভাবে অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত হয়ে যাওয়ায় সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের বোর্ডের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইছে।