জলপাইগুড়ি থেকে বেঙ্গালুরু। ভায়া কলকাতা। না কোনও ট্রেন কিংবা বিমানের রুট নয়। এক ক্রিকেটারের প্রথম শ্রেনির ক্রিকেটে উত্থানের রাস্তা। গত কয়েক বছর ধরেই বাংলা ক্রিকেট সংস্থা চাইছিল, জেলা থেকেও নতুন প্রতিভা উঠে আসুক। সেই প্রত্যাশা কিছুটা পূরণও হয়েছে। অতীতে ঋদ্ধিমান সাহা, শিবশঙ্কর পালের মতো ক্রিকেটাররা কলকাতার বাইরে থেকে এই শহরে এসেই নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। সেই তালিকায় আরও একটা নাম যোগ হবে কিনা অনেক দূরের বিষয়। তবে একটা সিঁড়ি অবধি পৌঁছে গিয়েছেন জলপাইগুড়ির ঋষভ বিবেক। বাংলার হয়ে প্রথম শ্রেনির ক্রিকেটে অভিষেক হল তাঁর।
রঞ্জি ট্রফিতে এ মরসুমের চতুর্থ রাউন্ডের ম্যাচে বেঙ্গালুরুতে অ্যাওয়ে ম্যাচ খেলছে বাংলা। প্রতিপক্ষ কর্ণাটক অধিনায়ক মায়াঙ্ক আগরওয়াল টস জিতে ফিল্ডিং নেন। চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে প্রথম দিনের শেষে ৫ উইকেট হারিয়ে ২৪৯ রান তুলে দিয়েছে বাংলা। দিনের শেষে ক্রিজে রয়েছেন শাহবাজ আহমেদ, ঋদ্ধিমান সাহা। ফলে বাংলা ৩০০ প্লাস স্কোর তুলতেই পারে। এরপর নজর থাকবে বোলারদের উপর। আর বিশেষ করে অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা তরুণ পেসার ঋষভ বিবেকের দিকেও।
কলকাতায় আসা, ক্লাব ক্রিকেটে হাতে গোনা ম্যাচ। বাংলার হয়ে অনূর্ধ্ব ১৯-ও খেলার সুযোগ পাননি। গত বছর বাংলা অনূর্ধ্ব ২৩ দলে সুযোগ। প্রচুর ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা না থাকলেও সীমিত সুযোগে নজর কেড়েছেন এই তরুণ পেসার। ক্লাব ক্রিকেটে বোলিং করেছেন বাংলার কিংবদন্তি তথা প্রাক্তন অধিনায়ক মনোজ তিওয়ারিকেও। বাংলা সিনিয়র দলের কোচ লক্ষীরতন শুক্লা নেটে মুগ্ধ হয়েছেন তাঁর বোলিংয়ে। যার ফল, প্রথম শ্রেনির ক্রিকেটে বাংলার জার্সিতে খেলার সুযোগ। স্নায়ুর চাপ সামলে দিতে পারলে তাঁর বিষাক্ত ইনসুইং প্রতিপক্ষকে পাল্টা চাপে ফেলতেই পারে।
বাংলা দলে ঋষভের অভিষেকের খবরে জলপাইগুড়ি শহরে উচ্ছ্বাসের পরিবেশ। অনেকের কাছেই এই খবর অজানা ছিল। বিকেলে জলপাইগুড়ি জেলা ক্রীড়া সংস্থার দপ্তরে সাংবাদিক সম্মেলন করে জানান কর্মকর্তারা। খুশি ঋষভের স্থানীয় কোচ পার্থ মন্ডল সহ জেলা ক্রীড়া সংস্থার কর্মকর্তারা। উচ্ছ্বসিত কোচ পার্থ মণ্ডল বলেন, ‘ও বড় কিছু করবে এমনটাই প্রত্যাশা ছিল। আগামীতেও করবে। সেটা জাতীয় দল হোক অথবা ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ। আজ তো বাংলা ব্যাট করছে। আশা করছি, বাংলার হয়ে ওকে বোলিং ওপেন করতে দেখব।’
জলপাইগুড়ি জেলা ক্রীড়া সংস্থার কার্যকরী সভাপতি গৌতম দাস জানান, ঋষভের বাবা বিএসএফ আধিকারিক ছিলেন। কর্মসুত্রে জলপাইগুড়িতে আসেন। এরপর এখানেই থেকে যান। ঋষভ ছোট্ট বয়স থেকে জলপাইগুড়িতে পড়াশোনা করেছে। বাংলা দলের হয়ে কর্ণাটকের বিরুদ্ধে রঞ্জি ট্রফিতে খেলছেন, এটা গর্বের বিষয়। জলপাইগুড়ির আরএসএ ক্লাবে প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে বর্তমানে বাংলা দলে উঠে এসেছে ঋষভ বিবেক।
জলপাইগুড়ি জেলা ক্রীড়া সংস্থার সচিব ভোলা মণ্ডল বলেন, ‘জলপাইগুড়ির আজ আনন্দের দিন। যতদূর আমার মনে পড়ে, দীর্ঘ ৩৫ বছর আগে জলপাইগুড়ির সুদীপ চন্দ বাংলা দলের হয়ে খেলেছিল। সম্ভবত একটা ম্যাচই। তিনি এখন কোচিং করেন। উত্তরবঙ্গ থেকে ঋদ্ধিমান দীর্ঘ সময় খেলেছেন। আমাদের শহর থেকেও আজ বাংলা দলে ঋষভ খেলছে, এটা গর্বের বিষয়।’