ভারত-অস্ট্রেলিয়া পাঁচ ম্যাচের টেস্ট সিরিজের মাঝেই অবসর ঘোষণা রবিচন্দ্রন অশ্বিনের। পারথে প্রথম টেস্টে একমাত্র স্পিনার হিসেবে খেলানো হয়েছিল ওয়াশিংটন সুন্দরকে। অ্যাডিলেডে গোলাপি টেস্টে সুযোগ পেয়েছিলেন অশ্বিন। ব্রিসবেনে তৃতীয় ম্যাচে জাডেজা। গাব্বা টেস্টের পরই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন। তাঁর হঠাৎ এমন ঘোষণা নিয়ে বিশ্ব ক্রিকেটে নানা আলোচনা। চমকে দেওয়া সিদ্ধান্তই। সিরিজ শেষেও তো ঘোষণা করতে পারতেন! অশ্বিন বেছে নিলেন গাব্বাকেই। সিরিজের চতুর্থ টেস্ট মেলবোর্নে। সেই মাঠে অশ্বিনের দুর্দান্ত একটা স্মৃতিও রয়েছে।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারত-পাকিস্তান সেই ম্যাচটা মনে পড়ে? টস জিতে রান তাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ভারত। শুরুতেই পাকিস্তানের দুই ওপেনারকে তুলে নিলেও শান মাসুদ ও ইফতিকার আহমেদ অনবদ্য ব্যাট করেন। শেষ দিকে শাহিন আফ্রিদির ক্যামিও। ভারতের টার্গেট দাঁড়ায় ১৬০। মর্যাদার ম্যাচে রান তাড়ায় নেমে ৪১ রানেই ৪ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছিল ভারত। সেখান থেকেই অনবদ্য প্রত্যাবর্তন।
বিরাট কোহলি এবং হার্দিক পান্ডিয়া জুটি দলকে জয়ের অনেকটা কাছে নিয়ে যান। কিন্তু হার্দিকের উইকেটে ফের বিপদ বেড়েছিল। বিরাট কোহলিকে চেজমাস্টার বলা হয়। সেই ম্যাচেও অপরাজিত ৮২ রানের ইনিংসে দলকে জিতিয়েছেন। কিন্তু ম্যাচের ছোট্ট একটি ঘটনা তাক লাগিয়ে দিয়েছিল। শুধু তাই নয়, ভারতের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাও নিয়েছিল। সেটা কেউ বা ভুলে গিয়েছেন, বেশির ভাগই মনে রেখেছেন।
বিরাট কোহলি যেমন চেজ মাস্টার, তেমনই রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে ‘চেস’ মাস্টার বলাই যায়। তাঁর ক্রিকেটীয় বুদ্ধিতে হেলাফেলা করার নয়। প্রতিপক্ষর স্নায়ু নিয়ে খেলতে ভালো বাসেন। পাকিস্তানের বিরুদ্ধেও এমনই একটা চাল দিয়েছিলেন। নয়তো জয়ের দোরগোড়া থেকেও ফিরতে হতে হত ভারতকে। বিরাটের ইনিংসটাও ব্যর্থ হয়ে যেত।
ইনিংসের শেষ ওভারের ঘটনা। ৬ বলে ১৬ রান প্রয়োজন ছিল ভারতের। বোলিংয়ে আসেন পাকিস্তানের বাঁ হাতি স্পিনার মহম্মদ নওয়াজ। হার্দিক প্রথম বলেই আউট। ক্রিজে বিরাটের সঙ্গে যোগ দেন দীনেশ কার্তিক। এত কাছে এসে খালি হাতে ফিরতে হবে না তো! ভারতীয় শিবিরে এই চিন্তাই। ওভারের পঞ্চম ডেলিভারিতে আউট কার্তিকও। বিরাট নন স্ট্রাইকে। ফলে যা করার নতুন ব্যাটারকেই করতে হবে।
শেষ বলে ২ রান প্রয়োজন। বাঁ হাতি স্পিনারের বিরুদ্ধে অশ্বিন। তাঁকে ২ রান নিতে হলে অফসাইডে ইনফিল্ড ক্লিয়ার করতেই হবে। যা সহজ নয়। মহম্মদ নওয়াজ লেগ স্টাম্প টার্গেট করেছিলেন। যাতে অশ্বিন খুব একটা সরে গিয়ে অফসাইডের সার্কেল ক্লিয়ার করতে না পারেন। অশ্বিনের সঙ্গে বুদ্ধিতে পেরে ওঠেননি। প্যাড টার্গেট করলেও অশ্বিন অফসাইডে সরে যান। বল টার্ন না হওয়ায় অ্যাঙ্গেলে লেগ স্টাম্পের অনেকটা বাইরে। আম্পায়ারের কাছে ওয়াইড দেওয়া ছাড়া অপশনও ছিল না।
এর ফলে স্কোর লেভেল। একটা ডেলিভারিও থেকে যায়। শেষ বলে আর নওয়াজ কোনও ঝুঁকি নেননি। মিডল স্টাম্পে বল রাখলেও অশ্বিন লেগ সাইডে সরে ইনসাইড আউটে অফসাইড ইনফিল্ড ক্লিয়ার করেন। ভারত ম্যাচ জেতে। অশ্বিনের বুদ্ধিতে পাকিস্তান কিস্তিমাত। সেই এমসিজিতেই ভারত চতুর্থ টেস্ট খেলতে নামছে। অশ্বিন থাকবেন না টিমে। তার আগেই যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন!