কলকাতা: স্কোরবোর্ডে রান তখন ৩৪/৫। সাজঘরে ফিরে গিয়েছেন অভিমন্যু ঈশ্বরন, সুদীপ ঘরামি, মনোজ তিওয়ারি, অনুষ্টুপ মজুমদাররা। জয়দেব উনাদকাট, চেতন সাকারিয়ার আগুনে পেসে ছারখার বাংলার টপ অর্ডার। এমনকি চিরাগ জানির সুইংয়েও বেসামাল হয়ে উইকেট ছুড়ে দিয়েছেন ফর্মে থাকা অনুষ্টুপ মজুমদার। তখনই ক্রিজে এলেন শাহবাজ আহমেদ। শেষ চার বছরে বাংলা যখনই বিপদে পড়েছে, রক্ষাকর্তা হয়েছেন তিনি। ব্যাটিং-বোলিং সব বিভাগেই দলকে ভরসা দিয়েছেন। ঠিক যেন কয়েক বছর আগের লক্ষ্মীরতন শুক্লা। অলরাউন্ড পারফরমেন্সে যিনি একার কাঁধে বাংলাকে বহু ম্যাচ জিতিয়েছেন। ৩৩ বছর পর বাংলার রঞ্জি ট্রফি জয়ের সুযোগ। ঘরের মাঠে মেগা ফাইনাল। সকাল থেকেই সাজ সাজ রব ইডেন জুড়ে। গ্যালারিতে হাজির সমর্থকরাও। ম্যাচের শুরু থেকেই ‘জয় বাংলা’ চিৎকার ছড়িয়ে পড়ছিল চারদিকে। উনাদকাট, সাকারিয়াদের আগুনে পেসে ইডেনে তখন শ্মশানের নিস্তব্ধতা। ম্যাচে কোণঠাসা মনোজরা। ফাইনালের দু’দিন আগে ফলাও করে বলেছিলেন একপেশে ফাইনাল হবে। যাতে ফেভারিট বাংলা। অথচ মনোজের সেই বাংলাকে এক চিলতে জমিও ছাড়েনি সৌরাষ্ট্র। স্কোরবোর্ড দেখে একটা সময় আশঙ্কা হচ্ছিল, একশোও হয়তো পেরোবে না। সেখান থেকে বাংলার পরিত্রাতা হয়ে উঠলেন শাহবাজ আহমেদ। বিস্তারিত TV9Bangla-য়।
কয়েক বছর আগে আইপিএলে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালোরে ডাক পেয়েছিলেন। তখনও ক্রিকেটমহলে সে ভাবে পরিচিত হননি। বাংলার তারকাদের ভিড়েও সে দিন আইপিএলে দল পেয়েছিলেন শাহবাজ। বাঁ-হাতি অলরাউন্ডার আরসিবিতে প্রথম মরসুমে সে ভাবে সুযোগ পাননি। তবে গত দু’বছরে নিজেকে অন্য জায়গায় নিয়ে গিয়েছেন। বিরাট কোহলির দলের অন্যতম অস্ত্র। পরে ডাক পেয়েছেন জাতীয় দলেও। এমনকি টিম ইন্ডিয়ার জার্সিতে অভিষেকও হয়েছে বাংলার বাঁ-হাতি অলরাউন্ডারের। হাইভোল্টেজ ফাইনালে দলের চাপের মুহূর্তে খাদের কিনারা থেকে বাংলাকে টেনে তুললেন। বুঝিয়ে দিলেন, স্নায়ুর যুদ্ধ জিততে কলিজা থাকা প্রয়োজন।
ইডেনের সবুজ উইকেটে উনাদকাট, সাকারিয়াদের গতির ঝড়ে বাংলা দল থরহরিকম্প। কখনও কখনও মারের পাল্টা মার দিতে হয়। আর সেটাই করলেন শাহবাজ। প্রথম থেকেই আক্রমণাত্মক মেজাজে ব্যাটিং শুরু করলেন। উনাদকাট, সাকারিয়া, চিরাগদের বিরুদ্ধে লড়লেন চোখে চোখ রেখে। মারার বল মারলেন, ছাড়ার বল ছাড়লেন। ৩৪-৫ থেকে বাংলার স্কোরকে ১৫০ পার করালেন শাহবাজ। সঙ্গী অভিষেক পোড়েল। সপ্তম উইকেটের জুটিতে উঠল ১০১ রান। শাহবাজ যখন প্যাভিলয়নে ফিরলেন বাংলার স্কোর তখন ১৬৬। ধর্মেন্দ্র জাডেজার বলে শর্ট লেগে ক্যাচ দিয়ে আউট হলেন। ৬৯ রানের লড়াকু ইনিংস উপহার বাংলার বাঁ-হাতি অলরাউন্ডারের। ইনিংসে সাজানো ১১টি চার। দু’দিন আগেও জ্বরের জন্য দলের সঙ্গে অনুশীলন করতে পারেননি। এমনকি ম্যাচের আগের দিনও সে ভাবে নেট সেশন করতে পারেননি। তবে রঞ্জি ফাইনালের মতো মঞ্চে নিজেকে নিংড়ে দিলেন শাহবাজ। বুঝিয়ে দিলেন দলের প্রয়োজনে তাঁর কাছে সমস্ত বাধাই তুচ্ছ। ওই যে, বড় মঞ্চে পারফর্ম করার জন্য কলিজা দরকার…