India vs England 2021: ‘লর্ড’ শার্দূলের হাত ধরে ওভালে ইতিহাস ভারতের

TV9 Bangla Digital | Edited By: সঙ্ঘমিত্রা চক্রবর্ত্তী

Sep 06, 2021 | 9:09 PM

ভারতীয় ক্রিকেটে শার্দূল এখন যেন 'ক্রাইসিস ম্যান'। যখন দরকার পড়ে, জ্বলে ওঠেন। পঞ্চম দিনও ওভাল সেই শার্দূলময়। ভারতের ৩৬৮ রানের লক্ষ্য সামনে রেখে ইংল্যান্ড যেন ধীরে ধীরে রেকর্ডের গল্প শোনাচ্ছিল। ঠিক তখনই চমক দেখালেন লর্ড শার্দূল।

India vs England 2021: লর্ড শার্দূলের হাত ধরে ওভালে ইতিহাস ভারতের
India vs England 2021: 'লর্ড' শার্দূলের হাত ধরে ওভালে ইতিহাস ভারতের

Follow Us

কলকাতা: বিস্ময় নিয়ে টুইটারে একজন লিখেছেন, ‘আমি তো এতদিন বোলার ভাবতাম তোমাকে। তুমি তো যোদ্ধা!’ ঘোর লেগে যাওয়া এমন লোকজনের সংখ্যা কম নাকি? একদল তো ঘোষণাই করে বসেছেন, ‘লর্ড’!

হবেই না-ই বা কেন? কেউ যদি এমন পারফরম্যান্স করেন, ধারাবাহিক ভাবে, তাঁকে নিয়ে এ সব বলতেই হয়! জল্পনার দরকার নেই, তিনি শার্দূল ঠাকুর (Shardul Thakur)। বল হাতে পেলে নিরাশ করেন না। বিপক্ষকে ভাঙবেনই। ব্যাট হাতে পেলে হাফসেঞ্চুরি বাঁধা। শার্দূল যেন সত্যিই ভারতীয় ক্রিকেটের নতুন বাঘ! ইংলিশ বোলারদের তাণ্ডবে যখন রাহানে, পূজারা, বিরাটরা হিমশিম খাচ্ছেন, তখন অবলালীয় রান করে দিচ্ছেন। উইকেট এনে দিচ্ছেন। আর তাতে ভর করেই সাফল্যের উড়ান দিচ্ছেন বিরাট কোহলির টিম।

অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সেই ঐতিহাসিক ব্রিসবেন টেস্ট যদি ঋষভ পন্থের নতুন শুরু হয়ে থাকে, তবে শার্দূলের ছিল অলরাউন্ডার হিসেবে উত্থানের গল্প। প্রথম ইনিংসে ভাঙনের মুখে দাঁড়িয়ে ৬৭ রানের ইনিংস খেলে গিয়েছিলেন। দু’ইনিংস মিলিয়ে নিয়েছিলেন ৭ উইকেট। সেই তিনিই ওভালে এক সন্ধীক্ষণ তৈরি করে দিয়েছেন। প্রথম ইনিংসে ৩৬ বলে ৫৭ রানের বিস্ফোরক ইনিংস খেলেছিলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে আবার তাঁর নামের পাশে ৭২ বলে ৬০।

ভারতীয় ক্রিকেটে শার্দূল এখন যেন ‘ক্রাইসিস ম্যান’। যখন দরকার পড়ে, জ্বলে ওঠেন। পঞ্চম দিনও ওভাল সেই শার্দূলময়। ভারতের ৩৬৮ রানের লক্ষ্য সামনে রেখে ইংল্যান্ড যেন ধীরে ধীরে রেকর্ডের গল্প শোনাচ্ছিল। ঠিক তখনই চমক দেখালেন লর্ড শার্দূল। ররি বার্নস হাফসেঞ্চুরি করেই ফিরে গেলেন তাঁর বলে। এমনকি, ইংলিশ টিমের সবচেয়ে সফল ও ফর্মে থাকা ভয়ঙ্কর জো রুটও তাঁর শিকার। দুরন্ত ডেলিভারিতে নড়িয়ে উইকেট। চোটের কারণে সফরের প্রথম টেস্টের পর আর খেলতে পারেননি। না হলে শার্দূলঝলকের জন্য ওভাল পর্যন্ত হয়তো অপেক্ষা করতে হত না। দুই ইনিংস মিলিয়ে শার্দূলের ঝুলিতে মোট ৩ টি উইকেট এসেছে।

ভারতীয় ক্রিকেট সম্পর্কে বলা হয়, এক সম্পূর্ণ আলাদা গোলার্ধে ঢোকাটা মুশকিল। বেরিয়ে যাওয়া খুব সহজ। যাঁরা থাকতে পারেন সেখানে, তাঁদের সাফল্যের সর্বোচ্চ চূড়ায় উঠে দাঁড়াতে হয়। শার্দূল যেন সেই ব্যতিক্রমী ভাবনাকে মিলিয়ে দিচ্ছেন। অলরাউন্ডার হওয়ার সুবিধা অনেক। ব্যাটে আর বলে সাফল্য খোঁজা যায়। কিন্তু চাপ কি কম? অলরাউন্ডার মানে প্রত্যাশাও তো বেশি। প্রয়োজনের সময় উইকেট এনে দিতে হবে, দরকারের সময় রান। সেই দাবি মেটাতে পারেন যিনি, তিনিই থাকতে পারেন বিরাটদের গোলার্ধে। শার্দূল এখন সাফল্যের শিখরে উঠে দাঁড়িয়েছেন।

মুম্বই থেকে ৮০ কিমি দূরে পালঘর নামে এক জায়গায় বড় হয়ে ওঠা। বেড়ে ওঠার দিনগুলোয় ভোরের লোকাল ট্রেন ধরে যেতেন মুম্বই। ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্নে। ২০১২-১৩ মরসুমে রঞ্জি অভিষেক। ওই বছর মুম্বই রঞ্জি চ্যাম্পিয়ন হলেও তেমন নজর কাড়তে পারেননি তিনি। কিন্তু পরের বছর ফিরে এসেছিলেন দুরন্ত ফর্ম নিয়ে। ২০১৪-১৫ মরসুম থেকে কেরিয়ার তুঙ্গে পৌঁছয়। ভারতীয় টিমের কাছকাছি পৌঁছে যাওয়া সেই সময় থেকেই। কয়েক বছরে নিজের ক্রিকেট কেরিয়ারের গতিমুখটাই পাল্টে দিয়েছেন শার্দূল। যতই সেঞ্চুরি করুন রোহিত শর্মা, ম্যাচের নায়ক কিন্তু শার্দূলই।

জীবন এক আশ্চর্য সফর। কিছু দেয়, কিছু নেয়। যখন দেয়, তখন তাঁকে ঘিরে থাকে আলোর চাঁদমালা। লোকাল ট্রেন ধরে যিনি একসময় ক্রিকেট খেলার স্বপ্ন নিয়ে যেতেন মুম্বই, সেই তিনিই এখন বিরাটের টিমের সবচেয়ে উজ্জ্বল মুখ। ওভালের ‘লর্ড’। শার্দূল না থাকলে ইংল্যান্ডকে ‘রং’রুটে পাঠাতে পারতেন না বিরাট। শার্দূল না থাকলে ফের টেস্ট সিরিজে ২-১ এগোনো সম্ভব হত না।

Next Article