লন্ডন : শুধু মাঠের ঘেরাটোপে নয়, মাঠের বাইরেও একই রকম ক্রিকেটীয় মনোভাব রাখতে হবে। এই বার্তা এ বার আরও কড়া ভাষায় দিল আইসিসি। ফুটবলে এমন ছবি প্রায়ই দেখা যায়। ম্যাচ শেষ হওয়ার পর, শৃঙ্খলাভঙ্গের অপরাধে ড্রেসিংরুমে ঢুকে পর্যন্ত ফুটবলারকে লাল কার্ড দেখান রেফারি। ক্রিকেটেও কার্যত তেমনই ঘটল বলা যায়। মাঠের বাইরে শুভমন গিলকে (Shubman Gill) লাল কার্ড দেখাল আইসিসি (ICC)। বিশ্ব টেস্ট ফাইনাল শেষ হয়েছে রবিবার ভরদুপুরে। ২৪ ঘণ্টা পর আইসিসি কাঠগড়ায় দাঁড় করাল ভারতের তরুণ ব্যাটারকে। শুধু তাই নয়। বড়সড় শাস্তিও ঘোষণা করা হল। জরিমানা অনেক ক্রিকেটারের অতীতেও হয়েছে। শুভমনেরও হল। এর সঙ্গে যা হল, তা কিন্তু শুভমনের কেরিয়ারে খানিকটা হলেও কালো দাগ রেখে গেল। আগামী ২৪ মাস শুভমন আইসিসির কড়া নজরে থাকবেন। মাঠ এবং মাঠের বাইরে তাঁর কোনও আবেগতাড়িত পদক্ষেপ বড়সড় ঝামেলায় ফেলে দিতে পারে। বিস্তারিত জেনে নিন TV9Bangla Sports এর এই প্রতিবেদনে।
ফের একটা WTC ফাইনালের মঞ্চ থেকে খালি হাতে ফিরতে হল ভারতকে। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে কেন হারল ভারত, ক্রিকেট মহলে জোর আলোচনা চলছে। তার থেকেও বেশি সোশ্যাল মিডিয়ায় চর্চা শুভমন গিলের বিতর্কিত আউট নিয়ে। ক্যামেরন গ্রিন আদৌ গিলের ক্যাচ নিয়েছিলেন কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন থামছে না। WTC ফাইনালের চতুর্থ দিনের খেলা শেষ হওয়ার ১৫ মিনিটের মধ্যে শুভমন গিল টুইটারে একটি পোস্ট করেন। তাতে গ্রিনের ক্যাচ নেওয়ার ছবি দিয়ে ২টি আতসকাচ ও একটি মাথা চাপড়ানোর ইমোজি দেন গিল। তা নিয়েই ঝামেলায় পড়েছেন শুভমন। ক্রিকেটের সোজাসাপ্টা নিয়মে, খেলাকে কলঙ্কিত করা যায় না। এ শুধু ক্রিকেট নয়। সব খেলারই নিয়ম। খেলোয়াড়চিত মনোভাব যে কারণে সব খেলার ক্ষেত্রেই প্রাধান্য পায়। ঠিক এখানেই মহা ভুল করেছেন শুভমন। বিশ্ব টেস্ট ফাইনালে তিনি আউট না হলে কী হত, তা নিয়ে যতই চর্চা থাকুক আম্পায়ারের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানানো যায় না। সেই ভুলই করেছেন শুভমন। মাঠের ঘটনা টেনে নিয়ে গিয়েছেন মাঠের বাইরে, প্রকাশ্যে। অকারণে বিতর্ক তৈরি করা এবং আম্পায়ারকে জনতার কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর মতো কাজ আইসিসি ভালো চোখে নেয়নি। তাই তাঁকে জরিমানা করার সঙ্গে একটি ডিমেরিট পয়েন্টও দেওয়া হয়েছে। এই ডিমেরিট পয়েন্টটি কার্যত লাল কার্ড। শুভমনের মতো তরুণ ক্রিকেটার শৃঙ্খলাভঙ্গের অপরাধে আম্পায়ার, ম্যাচ রেফারি, আইসিসির কোপে পড়েছেন। বিতর্কিত টুইট করে ১১৫ শতাংশ ম্যাচ ফি কাটা গিয়েছে শুভমনের। অর্থাৎ বিশ্ব টেস্ট ফাইনাল খেলার জন্য যা ম্যাচ ফি ছিল তা তো দিতেই হবে। সেই সঙ্গে আরও ১৫ শতাংশ ম্যাচ ফি তাঁকে নিজের পকেট থেকে দিতে হবে।
১) কোনও প্লেয়ার যদি ২৪ মাসের মধ্যে ৪টে ডিমেরিট পয়েন্ট পান, তা হলে সেই ক্রিকেটারকে নির্বাসিত পর্যন্ত করতে পারে আইসিসি।
২) ২টো ডিমেরিট পয়েন্ট পেলে টেস্ট, ২টো ওয়ান ডে কিংবা ২টো টি-টোয়েন্টি ম্যাচ থেকে সাসপেন্ড করা হতে পারে ওই ক্রিকেটারকে। ডিমেরিট পয়েন্ট পাওয়ার পর সামনে যে ম্যাচ থাকবে, সেই অনুযায়ী নির্বাসনের ধারা ঠিক হবে।
৩) ডিমেরিট পয়েন্টের মধ্যে দিয়ে আসলে ক্রিকেটারের শৃঙ্খলাকে তুলে ধরা হয়। যে ক্রিকেটার ডিমেরিট পয়েন্ট পেলেন, তিনি শৃঙ্খলা ভেঙেছেন, এটাই ধরে নিতে হবে। কেউ যদি মাঠে কিংবা মাঠের বাইরে শৃঙ্খলা ভাঙেন, তা হলে আইসিসি ওই নির্দিষ্ট ক্রিকেটারকে জরিমানা করার পাশাপাশি সতর্ক করে। ২৪ মাসের মধ্যে আবার এমন ঘটলে শাস্তির পরিমাণ বাড়ে।
মাঠে আগ্রাসন দেখানো, ঝামেলায় জড়ানো, কথা কাটাকাটি এমনকি চড়াও হওয়ার ঘটনাও কিছু কম নেই। ক্রিকেটে যাঁরা আইকন, তাঁরা এমন ঘটনা থেকে দূরে থাকেন। যাতে খেলার খারাপ বিজ্ঞাপন তৈরি না হয়। যে কারণে সচিন তেন্ডুলকর চিরকাল ক্রিকেটের প্রিয় ছাত্র হয়েছিলেন। যে কারণে বিরাট কোহলি আইকন হওয়ার সত্ত্বেও প্রশ্নের মুখে পড়েছেন বার বার। শুভমন গিলের মতো তরুণ ক্রিকেটার কেন এমন কাণ্ড ঘটাবেন? এই দায় একা শুভমনের কি? রাহুল দ্রাবিড়, রোহিত শর্মাদের টিম ম্যানেজমেন্ট এবং বোর্ড কেন তরুণ ক্রিকেটারদের এটা বোঝাবেন না যে, মাঠের ঘটনার জের মাঠের বাইরে টানতে নেই। শৃঙ্খলা মেনে চলাটাই ক্রিকেটারের প্রাথমিক কাজ। শুভমনের ঘটনা ভাবাচ্ছে ক্রিকেট মহলকে।