কলকাতা: দেখতে যুবরাজ সিংয়ের মতো নয়। ব্যাটিং পজিশনও আলাদা। কিন্তু পরবর্তী যুবরাজ সিং বলা হচ্ছিল। পাস্ট টেন্স কেন? সালটা ২০১৮। অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ভারত। ফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে ৮ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে হারিয়েছিল ভারতীয় দল। কোন ব্যাচ বুঝতে পারছেন? পৃথ্বী শ, শুভমন গিল এই দুটো নাম অচেনা নয়। সেই বিশ্বকাপে টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কার জিতেছিলেন শুভমন গিল। এখন তিন ফরম্যাটেই ভারতের সিনিয়র দলে জায়গা করে নিয়েছেন। ২০১৮ সালের অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ ফাইনালের মঞ্চে নায়ক কিন্তু অন্য একজন। ওই যে ‘পরবর্তী যুবরাজ সিং’ বিশেষণ যোগ হওয়া। বিস্তারিত জেনে নিন TV9 Bangla Sports-এর এই প্রতিবেদনে।
পৃথ্বী শয়ের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দলের বিশ্বজয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন বাঁ হাতি ওপেনার মনজ্যোৎ কালরা। পাঁচ ইনিংসে করেছিলেন ২৫২ রান। নিউজিল্যান্ডে হয়েছিল সে বারের বিশ্বকাপ। টুর্নামেন্টের প্রথম চার ইনিংস মিলিয়ে তাঁর অবদান ছিল ১৫১ রান। মাত্র একটি হাফসেঞ্চুরির ইনিংস। সেটিও ছিল লিগ পর্বে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধেই। সেরা পারফরম্যান্স যেন ফাইনালের জন্যই তুলে রেখেছিলেন। গত কালই এ বারের অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ ফাইনাল হল। সব ম্যাচ জিতে ট্রফির ম্যাচে নেমেছিল ভারত। কিন্তু ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হার।
এ বার ফেরা যাক ২০১৮ সালে। ভারতীয় বোলারদের দাপটে অস্ট্রেলিয়া অলআউট মাত্র ২১৬ রানেই। নিউজিল্য়ান্ডের পরিবেশে এই রান খুব কম বলা যায় না। তবে ভারতের ওপেনিং জুটি দুর্দান্ত পারফর্ম করায় মনে হয়েছিল ১০ উইকেটেই জিতবে ভারত। ক্যাপ্টেন পৃথ্বী শ ২৯ রানে ফিরতেই কিছুটা চাপ বাড়ে। তিনে নামা শুভমন গিলও সেট হয়ে ৩১ রানেই আউট। দলের সেরা দুই ব্যাটার, দুরন্ত ছন্দে থাকা পৃথ্বী এবং শুভমন আউট হতে কিছুটা হলেও চাপ বাড়ে ভারতীয় শিবিরে। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার সব আশায় বালি।
কিপার-ব্যাটার হার্ভিক দেশাইকে সঙ্গে নিয়ে ম্যাচ জিতিয়েই মাঠ ছাড়েন বাঁ হাতি ওপেনার মনজ্যোৎ। ফাইনালের মঞ্চে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ১০২ বলে ১০১ রানের অপরাজিত ইনিংস। ৮টি বাউন্ডারি এবং ৩টি ওভার বাউন্ডারি। ভারতীয় ক্রিকেট প্রেমীরা ততক্ষণে ভবিষ্যতের পরিকল্পনা যেন ছঁকে ফেলেছেন। প্রতিটা যুব বিশ্বকাপেই যেমনটা হয়। সব পরিকল্পনা কি আর মেলে? তাঁকে পরবর্তী যুবরাজ বলার অন্যতম কারণ হাই ব্যাকলিফ্ট, বাঁ হাতি ব্যাটার, যুবরাজের মতো শট খেলায় সাবলীল। যদিও মনজ্যোতের আর যুবি হওয়া হয়নি।
বিশ্বকাপের পরই ২০১৯ সালে দিল্লির হয়ে সিনিয়র টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সুযোগ। ২০২১ সালে দিল্লির হয়ে ওয়ান ডে অভিষেক। সেটাই প্রথম, এখনও অবধি সেটিই শেষ। সিনিয়র স্তরে তিন ম্যাচে পারফরম্যান্স আশানুরূপ হয়নি। ঘুরে দাঁড়ানোর আগেই নতুন বিতর্ক। ২০১৯ সালেই তাঁর বিরুদ্ধে বয়স ভাঁড়ানোর অভিযোগ ওঠে। দোষী সাব্যস্ত হন মনজ্যোৎ। ২০২০ সালে দিল্লি ক্রিকেট সংস্থা তাঁকে দু-বছরের নির্বাসন দেয়। লজ্জা নাকি অভিমান! ক্রিকেটকে নীরবে বিদায় জানিয়েছিলেন মনজ্যোৎ। তাঁকে আর খেলতে দেখা যায়নি। এখন নতুন ভূমিকায় মনজ্যোৎ।
শুভমনদের অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বজয়ী সতীর্থ এখন ইউটিউবার! তাঁর চ্যানেলের নাম ‘সেকেন্ড ইনিংস উইথ মনজ্যোৎ কালরা।’ প্রচুর সাবস্ক্রাইবারও রয়েছে। ক্রিকেট নিয়ে নানা কন্টেন্ট রয়েছে তাঁর চ্যানেলে। এ বার কুচবিহার ট্রফিতে যুবরাজের রেকর্ড ভেঙে দেওয়া প্রখর চতুর্বেদী থেকে শুরু করে কলকাতা নাইট রাইডার্স পেসার হর্ষিত রানা। ঘরোয়া ক্রিকেটের অনেককে নিয়েই বেশ কিছু এপিসোড রয়েছে। নিজের ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমেই যেন ক্রিকেটটা খেলছেন মনজ্যোৎ।