এ যেন ছেলেবেলার গল্প! গলি ক্রিকেটে সাবধানী থাকতে হত ব্যাটারদের। চারে ক্ষতি নেই। কিন্তু ছয় মারলেই সর্বনাশ। কার বাড়ির জানলার কাচ যে ভেঙে যাবে, কে জানে! বিপত্তিও কম নেই তাতে। কাচ ভাঙলেই বল হাপিশ, কানমলা থেকে খেলা বন্ধ, সবই থাকত। বাড়িতে তুমুল বকাঝকার সঙ্গে দিন কয়েকের জন্য বন্ধ থাকত খেলা। তা সেই ছেলেবেলা যে বড়বেলাতেও ফিরে আসতে পারে, কে জানত! তাও কিনা এ ভাবে? ক্রিকেট এখন ছয়ের সঙ্গে নিবিড় প্রেম করে বসেছে। যে যত বেশি ছয় মারেন, তাঁর ভক্তের সংখ্যা তত বেশি। তা এই ছয় মারাই কাল হল বিলেতে। ঠিকই শুনছেন। ক্রিকেটে জন্ম যেখানে, সেই ইংল্যান্ডে ছয় মারলেই আর উল্লাস নয়! চলুন দেখি তো ব্যাপারটা কী!
ইংল্যান্ডের দুটো ক্লাব সাউথউইক আর সোরহ্যাম ছক্কার ঠেলায় একেবারে বিপর্যস্ত। এই দুই ক্লাবের চারপাশেই সাধারণ লোকজনের বাড়ি। অনেকটা ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামের মতো। পাড়ার মধ্যেই মাঠ। আর তাতেই যত বিপত্তি। ক্রিকেটারদের মুহূর্মুহূ ছক্কায় প্রায় সব বাড়ির জানলা, দরজা, ব্যালকনির কাচ অহরহ ভেঙে পড়ছে ঝনঝনিয়ে। এতেই শেষ নয়, গাড়ির উইন্ডস্ক্রিনের কাচ পর্যন্ত ভেঙেছে বারবার। প্রথম প্রথম ক্রিকেট প্রেমী মানুষজন মেনে নিয়েছিলেন। কাঁহাতক আর গ্যাটের কড়ি খসিয়ে জানলা-দরজা, গাড়ির কাচ বসাবেন বা লাগাবেন পড়শিরা? তাই একজোট হয়ে নেমেছিলেন প্রতিবাদে। তাতেই মিলল সুফল। সাউথউইক ও সোরহ্যাম ক্লাবের কর্তারা যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন। ছয় মারলেই নির্বাচনে পাঠানোর ফতোয়া দেওয়া হয়েছে ক্রিকেটারদের।
একেবারে নিয়ম করে বন্ধ করা হয়েছে ছয়। বারণ সত্ত্বেও যদি কাজ না হয়? কেউ যদি লোভ সামলাতে না পারেন? বা কোনও ব্যাটার যদি খেলার গতির মধ্যে মেরে ফেলেন ছয়? তার জন্য রয়েছে চরম দাওয়াই। প্রথম ছয়ের ক্ষেত্রে মিলবে না কোনও রান। দ্বিতীয় ছয় মারলে আউট বলে ধরা হবে। এক ক্লাবের কোষাধ্যক্ষ মার্ক ব্রক্সাপ খানিকটা আক্ষেপ নিয়েই বলেছেন, ‘অতীতে ক্রিকেটে ছয়-টয় ছিল না। কিন্তু এখন তো টি-টোয়েন্টি যুগ। যে কারণে খেলাটা অনেক বিস্ফোরক হয়ে গিয়েছে।’
কেন এমন নিয়ম করা হল ওই দুই ক্লাবে? প্রতিবাদী পড়শিরা এই দুই ক্লাবকে পরিষ্কার জানিয়েছে, যদি গাড়ির বা জানলা-দরজার কাচ ভাঙে বিমার টাকা ক্লাবকে দিতে হবে। না দিলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মাঠের ধারে বাড়ি, এমন এক ৮০ বছরের এক বৃদ্ধ বলেছেন, ‘মাঠটা খুব ছোট। যে তরুণরা আগ্রাসী, তারা একের পর এক ছয় মেরে যাবে, এটা চলতে পারে না।’ ব্যাস, গল্প এখানেই শেষ। প্রতিবেশিদের চাপে ইংল্যান্ডের দুই ক্লাব ফিরে গিয়েছে অতীতে। ক্রিকেট মানেই তো আর ছয় নয়! ক্রিকেটে কভার ড্রাইভ তো রয়েছে। ভুলে গেলে চলবে?