অভিষেক সেনগুপ্ত
১৯৮৩ সালের ২৫ জুন চিরকাল থেকে যাবে ভারতীয় ক্রিকেটগাথায়। কাপ-কাহিনির নায়ক হয়েই থাকবেন কপিল দেব। ২০১১ সালের ২ এপ্রিলও তো তা-ই। সেই অমর ছয়। সেই অবিশ্বাস্য ইনিংস। ২০০৭ সালে শুরু করেছিলেন যে কাজ, চার বছর পর দিলেন পূর্ণতা। ভারতীয় ক্রিকেটে নেই মহেন্দ্র সিং ধোনি। কিন্তু থেকে গিয়েছেন। ২০২৪ সালের ২৯ জুন কি তেমনই এক অমর দিন হয়ে থাকবে? ২০১১ সালে যে ছেলে ক্রিকেট দুনিয়ায় শিশু ছিলেন, আজ তিনিই মহীরুহ। ছাতা। লড়াইয়ের প্রতীক। ক্রিকেটে অমর শব্দবন্ধনীকে যেন আর একবার প্রতিষ্ঠা দিয়ে গেলেন বিরাট কোহলি, ফর্ম ইজ় টেম্পোরারি, ক্লাস ইজ় পার্মানেন্ট। একটু ওলোটপালট করে হয়তো বলে দিলেন বিশ্বকাপ ফাইনালে, রান তখনই করব, যখন দরকার পড়বে!
সত্যিই দরকার পড়ল তাঁকে। ফাইনাল বলে কথা। সারা টুর্নামেন্টে ১০০র সামান্য বেশি রান করেছেন। কিন্তু তা দিয়ে সুবিচার করা যায় না! ফাইনালে করলেন। উল্টো দিকে দাঁড়িয়ে দেখলেন, রোহিতের চলে যাওয়া। পন্থের এক বলের জীবন। উঠতে না উঠতে সূর্যের অস্ত যাওয়া। এমন দিনে তিনি না দাঁড়ালে কে দাঁড়াবেন? বিশ্বকাপের ভারতীয় ব্যাটিংয়ের সঞ্চালক হয়ে থাকলেন। সিঙ্গলস, সিঙ্গলস, সিঙ্গলস…! স্টাইক বদল…! এক-কে দুই…। কভার ড্রাইভ…। পায়ের বলে সাবধানী…! বিরাট তো এমনই। খেলেন, খেলান। স্কোর বোর্ড সচল রাখেন। তরতরিয়ে এগোন নিজেও। কেন এত পরিণত বিরাট, এত ধৈর্য তুলে ধরতে পারেন, বার্বাডোজে দেখে বোঝা গেল। স্রেফ ইচ্ছাশক্তি দিয়ে নিজেকে মঞ্চের মাঝখানে রাখলেন বিরাট। যেন অঙ্ক কষে খেললেন। এটাই অভিজ্ঞতা।
খবর, সেই উড়ো খবরটা মনে পড়ে যাচ্ছে। বিশ্বকাপে নাকি বিরাটকে বাদ দিয়েই খেলবে ভারত। স্ট্রাইকরেট টি-টোয়েন্টির উপযোগী নয়। এক নামী বিশেষজ্ঞ বলেছিলেন, কাউকে কাউকে বাজারে থাকতে হয়, তাই বিরাটকে বেছে নিচ্ছে ওরা। একদিকে যখন ভাঙন, তখন বিরাটের স্ট্রাইকরেট নিয়ে আলোচনা কেন করলেন না তাঁরা? প্রায় বল প্রতি রান নিয়ে কেন টুইটার, ফেসবুকে সোচ্চার হলেন না? পরিস্থিতি অনুযায়ী খেলাকে স্ট্রাইকরেট দিয়ে কে মাপবেন?
৪৮ বলে ৫০। কথা শুরু হলও। বিরাট জবাব দিলেন তখনই। পরের ১০ বলে ২৬। দুটো আগুনে ছক্কা। নভজ্যোৎ সিং তখন বলছেন, ‘বোলার হক্কাবক্কা, ঝাড় দিয়া ছক্কা’, ‘বুলেট ট্রেনের এক্সালেটরে পা’, ‘উঠা কে মারা, শট কাড়ারা, দিন মে দিখা দিয়া তারা’। ৫৯ বলে ৭৬ করে গেলেন। লা জবাব ইনিংস। নায়ক মঞ্চ চান। না হলে নিজেকে তাতাবেন কী করে? সারা বিশ্বকাপে রানই পাননি। সেই তিনিই কিনা অবিশ্বাস্য ইনিংস খেলে গেলেন। এমন উদাহরণ বিরাট ছাড়া আর কে তৈরি করবেন?
৩৪-৩ থেকে অক্ষর প্যাটেলকে সঙ্গী করে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। তলিয়ে যেতে যেতে লড়াইয়ে ফেরাই হত না ভারতের, যদি বিরাটের উইকেটটা পকেটে পুরতে পারতেন রাবাডা, নর্টজেরা। বার্বাডোজে লড়তে হলে ১৭০ করতে হবে। টার্গেট যেটা রেখেছিল ভারত, এল তার থেকে বেশি। দক্ষিণ আফ্রিকাকে ১৭৭ টার্গেট দিল ভারত। বিশ্বকাপের ইতিহাসে যা সর্বোচ্চ। বিরাট না থাকলে হত?