কলকাতা: ২০১৫ সালের বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের কাছে হারের পর ড্রেসিংরুমে ফিরে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রত্যাবর্তনের পর থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা একটাই স্বপ্ন দেখে এসেছে— বিশ্বকাপ জয়। হ্যান্সি ক্রোনিয়ে পারেননি। গ্রেম স্মিথ পারেননি। এবি ডে ভিলিয়ার্স (AB de Villiers) পারবেন! নিশ্চিত স্বপ্নের খুব কাছে এসে ফিরে যেতে হয়েছিল সে বার। কিউয়িদের কাছে হারের পর তাই আর নিজেকে সামলাতে পারেননি তিনি।
সতীর্থ, বন্ধু এবির অবসরে বিরাট কোহলিও (Virat Kohli) টুইটারে লিখেছেন, ‘আমাদের প্রজন্মের সেরা প্লেয়ার। এমন অনুপ্রাণিত মানুষ আমি খুব কম দেখেছি। তুমি যা করেছ কেরিয়ারে, আরসিবির জন্য, তুমি নিশ্চিত ভাবে গর্বিত হবে। আমাদের বন্ধুত্ব ক্রিকেটের উর্ধ্বে। সেটা চিরকাল থাকবে।’
This hurts my heart but I know you've made the best decision for yourself and your family like you've always done. ?I love you ? @ABdeVilliers17
— Virat Kohli (@imVkohli) November 19, 2021
দক্ষিণ আফ্রিকা ড্রেসিংরুমে এবি-কে ডাকা হত ‘আব্বাস’ নামে! যা আসলে ‘আ বস’ থেকে জন্ম নিয়েছিল। শুধু ড্রেসিংরুম নয়, বিশ্ব ক্রিকেটের বস ছিলেন ১৭ বছরের কেরিয়ারে। যে কোনও পজিশনে, যে কোনও প্রতিপক্ষ, যে কোনও বোলারের বিরুদ্ধে এবি সফল। ব্যাট হাতে একটানা বিস্ফোরণ, দীর্ঘমেয়াদি বিনোদনের জন্যই বিখ্যাত হয়ে থাকবেন তিনি। দেশের হয়ে হোক, আইপিএল কিংবা অন্য ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে, এবি উল্টো দিকে মানে টেনশনে থাকত বোলারকুল। যে কোনও ইয়র্কার, নিখুঁত বাউন্সার, মাপা লেন্থ, স্লোয়ারকে সযত্নে রাখতে পারেন গ্যালারির নানা কোণে। ছয়ে সিদ্ধহস্ত, স্টেডিয়ামের বাইরে বল হারানোতে কোনও কার্পণ্য নেই।
এবিডি কোনও ক্রিকেট ইয়ারবুক নন, যেন উপন্যাস। প্রতিভার আশ্চর্য মেলবন্ধন। এক অঙ্গে অনেক রূপ! যেখানে যখন পা রেখেছেন, নিজেকে তুলে ধরেছেন। ঘোষণা করেছেন, তিনি এসেইছেন জয় করতে! তাঁকে ক্রিকেটার বললে ভুল হবে। তিনি সব অর্থে অ্যাথলিট। ক্রিকেটে পা রাখার আগে জুনিয়র স্তরে ১০০ মিটারে দ্রুততম স্প্রিন্টার ছিলেন। গল্ফ খেলেছেন একটা পর্যায় পর্যন্ত। রাগবি টিমের ক্যাপ্টেন। জুনিয়র জাতীয় হকি টিমের সদস্য। এমনকি, বয়সভিত্তিক জাতীয় ফুটবল টিমেও নির্বাচিত হয়েছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকা টেনিস টিমের হয়ে জুনিয়র ডেভিস কাপ খেলেছেন। স্কুল সাঁতারে তাঁর করা ছ’টা রেকর্ড আজও অক্ষত। অনূর্ধ্ব ১৯ জাতীয় ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়ন।
শুধু কি তাই, পড়াশোনাতেও তুখোড় ছিলেন এবি। স্কুলে পড়ার সময় সায়েন্স প্রোজেক্টের জন্য রাষ্ট্রপতি নেলসন ম্যান্ডেলার হাত থেকে জাতীয় পদকও নিয়েছিলেন। এতটাই ভালো ছিলেন পড়াশোনায় যে, তাঁর ডাক্তার বাবা চেয়েছিলেন ছেলে চিকিৎসক হোন। এমনকি গানের জগতেও অবাধ বিচরণ তাঁর। রক মিউজিক অ্যালবাম ‘শো হু ইউ আর’ শোনেননি, এমন লোক মেলা ভার।
সেই তিনিই ক্রিকেটকে ভরিয়ে দিয়েছেন। ১৬ বলে হাফসেঞ্চুরি, ৩১ বলে সেঞ্চুরি, ৬৪ বলে ১৫০ রানের মতো কাণ্ড কেরিয়ার জুড়ে ছড়িয়েছিটিয়ে রয়েছে। দ্রুততম ৭ হাজার ওয়ান ডে রান থেকে ৫ বছর সব ধরনের ক্রিকেটে আধিপত্য চালিয়ে গিয়েছিলেন। এমনকি উইকেটকিপার হিসেবেও অত্যন্ত সফল। ২০১৪ সালে আইসিসির বর্ষসেরা প্লেয়ার হয়েছিলেন।
জাতীয় টিম থেকে সরে দাঁড়ানোর পর যেমন হয়েছিল, সব ধরনের ক্রিকেটকে আলবিদা জানানোর পরও সেই একই আর্তি। কেন অবসর নিলেন এবিডি? আরসিবির টুইটারে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘চিরকাল আরসিবির হয়েই থাকব। আর আরসিবির প্রতিটা সদস্য আমার পরিবারের লোক। অনেকেই আসে, চলেও যায়। কিন্তু যে ভালোবাসা আমি পেয়েছি আরসিবি থেকে সব সময় থেকে যাবে। আমি তো নিজেকে অর্ধেক ভারতীয় মনে করি। আর এই ভাবনাটার জন্য গর্ববোধও করি।’
শুধু কি বিরাট, মাইকেল ভন থেকে শুরু করে ক্রিকেট দুনিয়ার তারকারা, ক্রিকেট ভক্তরা, এমনকি ক্রিকেটও মিস করবে এবিডিকে!