কলকাতা: দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ভারতীয় ক্রিকেট দল এবং ডিআরএস বিতর্ক। এ যেন এক ‘সিরিজ’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ বারও পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলতে দক্ষিণ আফ্রিকায় রয়েছে ভারতীয় ক্রিকেট দল। টি-টোয়েন্টি সিরিজে যুগ্মবিজয়ী হয়েছে ভারত। ওয়ান ডে সিরিজে লোকেশ রাহুলের নেতৃত্ব জয়। এ বার পালা টেস্ট সিরিজের। ২৬ ডিসেম্বর শুরু প্রথম টেস্ট। বক্সিং ডে টেস্টের আগে মনে পড়ে গত সফরের সেই কেপটাউন টেস্টের কথা? সেই ম্যাচের পরই টেস্ট ক্যাপ্টেন্সি ছেড়েছিলেন বিরাট কোহলি। তার কারণ অবশ্য অন্য। বিতর্কের রেশ নিয়ে ভারত ছেড়েছিলেন বিরাট কোহলি, দক্ষিণ আফ্রিকা সফর শেষও হয়েছিল বিতর্কেই। বিস্তারিত জেনে নিন TV9 Bangla Sports-এর এই প্রতিবেদনে।
প্রথমে এ বারের টি-টোয়েন্টি সিরিজে ডিআরএস বিতর্কের কথা বলা যাক। প্রথম ম্যাচটি বৃষ্টিতে ভেস্তে গিয়েছিল। ফলে টি-টোয়েন্টি সিরিজ হয়ে দাঁড়ায় দু-ম্যাচের। বৃষ্টিবিঘ্নিত দ্বিতীয় ম্যাচে ভারতের হার। তৃতীয় ম্যাচে ক্যাপ্টেন সুর্যকুমার যাদবের সেঞ্চুরিতে বড় স্কোর গড়ে ভারত। রান তাড়ায় এক বার জীবন পান ডেভিড মিলার। ফিল্ডিংয়ে চোট পাওয়ায় সূর্যকুমার যাদব সে সময় মাঠে ছিলেন না। সহ অধিনায়ক রবীন্দ্র জাডেজা দায়িত্বে।
ইনিংসের নবম ওভার। বোলিং করছিলেন জাডেজাই। মিলারের ব্যাট ছুঁয়ে বল কিপার জীতেশ শর্মার হাতে। আওয়াজ এসেছে। হয়তো আম্পায়ারের কানে তা পৌঁছয়নি। আউটের আবেদনে সাড়া দেননি। জাডেজা রিভিউ নিতে গিয়ে জানতে পারেন সেই বিকল্প নেই! ব্রডকাস্টারকে টেকনিক্যাল সমস্যায় কিছুক্ষণের জন্য ডিআরএস বন্ধ ছিল। প্রায় মিনিট দশেক পর ডিআরএস ফেরে। ততক্ষণে ডেভিড মিলারের উইকেট অক্ষত। শেষ অবধি ভারত জেতায় বড় কোনও ইস্যু হয়নি। কিন্তু গত সফর!
দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে কখনও টেস্ট সিরিজ জেতেনি ভারত। সেঞ্চুরিয়নে ছিল প্রথম ম্যাচ। বিরাট কোহলির নেতৃত্বে অনবদ্য জয়ে টেস্ট সিরিজে যাত্রা শুরু করেছিল ভারত। চোটের কারণে জোহানেসবার্গে বিরাট কোহলিকে পাওয়া যায়নি। নেতৃত্ব দিয়েছিলেন লোকেশ রাহুল। তৃতীয় তথা শেষ টেস্টে ফেরেন বিরাট। সিরিজ সে সময় ১-১। অর্থাৎ কেপটাউনে সিরিজের ফয়সালা। কেরিয়ারের ৯৯তম টেস্টে নেমেছিলেন বিরাট।
প্রথম বার দক্ষিণ আফ্রিকায় টেস্ট সিরিজ জিততে মরিয়া ভারতীয় দল। পরিবেশ পরিস্থিতির সঙ্গে দুর্দান্ত মানিয়ে নিয়েছিল ভারত। কিন্তু ডিআরএস সঙ্গ দেয়নি। চতুর্থ ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকার সামনে লক্ষ্য ছিল ২১২ রান। তৃতীয় দিনের খেলা। ভারত অনবদ্য বোলিং করছে। চতুর্থ ইনিংসে ২১২ রানের টার্গেটটাও কম ছিল না। বাঁ হাতি ব্যাটারদের বিরুদ্ধে রবিচন্দ্রন অশ্বিন কতটা বিপজ্জনক, এ আর নতুন করে বলার প্রয়োজন পড়ে না। ইনিংসের ২১তম ওভারে তৎকালীন প্রোটিয়া অধিনায়ক ডিন এলগারকে লেগ বিফোর করেন অশ্বিন। এরপরই চমক।
Dean Elgar survives 🤏
Initially given out, he reviewed it, and the decision was overturned. Big moment in the match and the series👀
📺 Stream #SAvIND live: https://t.co/0BMWdennut pic.twitter.com/6EJmtd0Qy3
— SuperSport 🏆 (@SuperSportTV) January 13, 2022
অন ফিল্ড আম্পায়ার মারিয়া এরাসমাসের আউটের সিদ্ধান্তে ডিআরএস নেন প্রোটিয়া অধিনায়ক ডিন এলগার। বল যেখানে পিচ করে, ইমপ্যাক্ট যেখানে, কোনও মতেই তাঁর বাঁচার রাস্তা নেই। কিন্তু হল উল্টো! ডিআরএসে বল ট্র্যাকিংয়ে ধরা পড়ে বল উইকেটের ওপর দিয়ে যাচ্ছে! আম্পায়ার মারিয়া এরাসমাস নিজেই অবাক। এ কী ভাবে সম্ভব! বলের যা বাউন্স, ইমপ্যাক্ট, কোনও মতেই এতটা উচ্চতায় যেতে পারেন না। এরাসমাস বলেই ফেলেন, ‘এটা অসম্ভব’। যদিও তৃতীয় আম্পায়ারের নির্দেশে সিদ্ধান্ত বদলাতে হয় তাঁকে। ক্রিজে থেকে যান এলগার।
ডিআরএসের এই অবাক বিষয়ে ক্ষুব্ধ ভারতীয় শিবির। রইল সেই ভিডিয়ো। বোলার রবিচন্দ্রন অশ্বিন সরাসরি ব্রডকাস্টার সুপারস্পোর্টসের উদ্দেশে বলেন, ‘জেতার জন্য অন্য কোনও রাস্তা খোঁজা উচিত ছিল।’ লোকেশ রাহুলও স্টাম্প মাইকের কাছে বলেন, ‘পুরো দেশ এগারোজনের বিরুদ্ধে খেলছে।’ আর ক্যাপ্টেন বিরাট কোহলি। স্টাম্প মাইকের সামনে মুখ নিয়ে বলেন, ‘নিজেদের টিমের দিকেও একটা ফোকাস করুন। শুধুমাত্র অন্যের খুঁত ধরে লাভ নেই।’
বিরাটের বার্তা ছিল অস্ট্রেলিয়ার সেই বল বিকৃতি কান্ডের ঘটনা। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ক্যামেরন ব্যানক্রফ্ট শিরিষ কাগজ থেকে বলের পালিশ তুলছেন। যা জায়ান্ট স্ক্রিনে ধরেছিলেন ক্যামেরাপার্সন। সেই ঘটনার জেরে নির্বাসিত হয়েছিলেন তৎকালীন অজি অধিনায়ক স্টিভ স্মিথ, সহ অধিনায়ক ওয়ার্নার ও ওপেনার ব্যানক্রফ্ট। বল বিকৃতিকে সমর্থন না করলেও ব্রডকাস্টাররা যে ভাবে প্রতিপক্ষর অন্যায় দেখায়, সে ভাবে অশ্বিনের ক্ষেত্রেও সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ছিল, সেটাই মনে করিয়ে দেন ক্যাপ্টেন কোহলি।
কেপ টাউন টেস্টে হারলেও পুরো সিরিজের রোমাঞ্চ নষ্ট হয় ব্রডকাস্টারের সেই ডিআরএসে। এলগারকে নটআউট দেওয়ার পর বিদ্রুপ করতেও ছাড়েননি বিরাট। অনেক ক্ষেত্রেই জসপ্রীত বুমরার বোলিংয়ে বল হাঁটুর নীচে লাগলেও রিভিউ নেননি বিরাট। স্টাম্প মাইকে ধরা পড়েছে বিরাটের সেই কথা। বলছিলেন, ‘রিভিউ নিয়ে লাভ নেই। হাইট ফ্যাক্টর। এই ডেলিভারি ট্র্যাকিংয়ে কাঁধের উচ্চতায় উঠবে।’ সামনেই টেস্ট সিরিজ। বিরাট আর ক্যাপ্টেন নন। ব্রডকাস্টারের সঙ্গে এ বারও এমন বিতর্ক তৈরি হবে না তো! সেই আশঙ্কা থাকছেই। টি-টোয়েন্টি সিরিজে তো এক বার হয়েই গিয়েছে।