কলকাতা: আজ কি সিএবির প্রেসিডেন্ট (CAB President) পদে মনোনয়ন জমা করবেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (Sourav Ganguly)? ময়দানে এ নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (BCCI) প্রেসিডেন্ট পদ থেকে অপসারণের পর খোদ সৌরভ বলে দিয়েছিলেন, তিনি সিএবির প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়ন জমা করছেন। আজ মনোনয়ন জমা করার শেষ দিন। কিন্তু শনিবার সিএবিতে গেলেও শেষ পর্যন্ত নমিনেশন তোলেননি তিনি। তার পরই উঠে আসছে ‘যদি’, ‘কিন্তু’, ‘হয়তো’, ‘সম্ভবত’র মতো অনিশ্চিয়তা। তা হলে কি সৌরভ রাজ্য ক্রিকেট সংস্থার প্রেসিডেন্ট পদের জন্য মনোনয়ন জমা করবেন না? যাঁরা ময়দানি রাজনীতি বোঝেন, তাঁরা কিন্তু এই সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছেন না। কোন অঙ্ক ঘুরছে, খোঁজার চেষ্টায় TV9Bangla।
ময়দানের পোড়খাওয়া কর্তারা তিনটে যুক্তি তুলে ধরছেন। যা নাকি ভাবাচ্ছে সৌরভকে। সেই কারণেই তাঁর মনোনয়ন তোলার সিদ্ধান্ত শেষ বেলার জন্য তুলে রেখেছেন ভারতীয় টিমের প্রাক্তন অধিনায়ক। কী সেই যুক্তি?
এক, সৌরভ যদি রাজ্য ক্রিকেট সংস্থায় মনোনয়ন জমা করেন, তা হলে আগের ছ’বছর ও এ বারের তিন বছর মিলিয়ে মোট ন’বছর সিএবির প্রশাসনিক পদে থেকে যাবেন। যার ফলে আগামী দিনে কুলিং-অফ না নিয়ে আর সিএবির প্রশাসনে আসতে পারবেন না। ক্রিকেট প্রশাসক সৌরভের ক্ষেত্রে যা মোটেও উজ্জ্বল সিদ্ধান্ত হবে বলে, মনে করা হচ্ছে না। বোর্ডে আবার ফিরতে হলে, কিংবা অন্য কোনও অঙ্ক মেলাতে এই ‘লাইফলাইন’ এখনই শেষ করে দিতে চাইছেন না সৌরভ।
দুই, বোর্ড থেকে অপসারণের পর খোদ বাংলার ক্রিকেট নিয়ামক সংস্থায় সৌরভ-বিরোধী অনেকেই গলা তুলতে শুরু করেছিলেন। বিরোধীদের ব্যাকফুটে পাঠাতেই স্টেপ আউট করেছিলেন সৌরভ, এমনই বলা হচ্ছে। তাই নাকি তিনি সিএবির নির্বাচনে লড়ার কথা ভেবেছিলেন। সৌরভ সামনে আসতেই সেই ছবি অনেকটাই পাল্টে গিয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা হল, বিরোধী গোষ্ঠীর পছন্দের এক প্রতিনিধিকে তিনি নিজের প্যানেলে সহ সভাপতি হিসেবে জায়গাও দিয়ে দিয়েছেন। পরিস্থিতি যখন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে, বিরোধীরা প্যানেল দেবে না-ই যখন, তা হলে আর নির্বাচনে দাঁড়াবেন কেন, এই ভাবনাতে আচ্ছন্ন হয়েই নাকি ধীরে চলো নীতি নিয়েছেন। সে ক্ষেত্রে সৌরভ নাকি তাঁর বদলে দাদা স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায়কে প্রেসিডেন্ট করে এগোতে চাইছেন। প্রবীর চক্রবর্তী হবেন সচিব। নরেশ ওঝা কোষাধ্যক্ষ।
তিন, বোর্ড থেকে অপসারণের পর সৌরভ কেন সিএবিতে ফিরতে চাইছেন, তা নিয়ে ময়দানে গুঞ্জন উঠে গিয়েছিল। এর পিছনে যে রাজনৈতিক যুক্তি খানিকটা থেকে গিয়েছিল, তাও মেনে নিচ্ছে ময়দানের ওয়াকিবহাল মহল। তাঁদের যুক্তিই হল, তৃণমূল যতই সৌরভকে ইস্যু করে ফেলুক, তিনি নিজে মোটেও তৃণমূলের দিকে পা বাড়াবেন না। উল্টে দিকে, ২০২৪ সালে কেন্দ্রে নির্বাচন। সরকারে বিজেপি আরও একটা টার্মের জন্য থেকে যেতে পারে, এমনই বলা হচ্ছে। কিন্তু তখন পরিস্থিতি এখনকার মতো থাকবে না। পরের বছর, অর্থাৎ ২০২৫ সালে বাংলা দখলের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য অঙ্ক সাজাতেই পারে। তখন সৌরভের দরকার পড়বে না, কে বলতে পারে। রাজনৈতিক ভাবে যে কারণে সৌরভ বরাবরের মতো ‘নিরপেক্ষ’ই থেকে যেতে চান।
ময়দানি রাজনীতির ঘেরাটোপেই কাটে যাঁদের, তাঁরা কিন্তু যদি-কিন্তু তর্জা সরিয়ে রেখে অন্য কথাও বলছেন। সৌরভ জল মাপছেন ঠিকই, তবে শেষ বেলায় তিনি সিএবির মনোনয়ন জমা করতেই পারেন। বোর্ড থেকে অপসারিত সৌরভ রাজ্য ক্রিকেট সংস্থায় না থাকলে জাতীয় ক্রিকেট রাজনীতির কেন্দ্রে সৌরভের টিকে থাকার সম্ভাবনা এতে নাকি কমতে পারে।
কোন অঙ্কে কী হবে, কোথাকার জল কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়, এ সব দেখার জন্য় আরও কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করতেই হবে। সিএবির প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়ন জমা দিলেন কিনা মহারাজ, তা জানার জন্য় কিন্তু রাজ্য এবং কেন্দ্র- দুই সরকারই অপেক্ষা করছে!