আনকারা: ফুটবল মাঠের কালো অধ্যায় বললেও বোধহয় কমই বলা হবে। জেতা ম্যাচ ড্র কিংবা হারের পর সমর্থকদের ঝামেলা, দাঙ্গা ফুটবল মাঠের অতিপরিচিত দৃশ্য। কিন্তু কোনও ক্লাবের প্রেসিডেন্ট ম্যাচ ড্রয়ের কারণে রেফারিকে মেরে রক্তাক্ত করে দিয়েছেন, এমনটা সচারাচর দেখা যায় না। তুরস্কের লিগে তাই দেখব ফুটবল বিশ্ব। এমন অবাক করা ঘটনা তুরস্কের সুপার লিগে ঘটেছে। আনকারাগুসুর সঙ্গে হোম ম্যাচ ছিল রিজস্পোরের সঙ্গে। ম্যাচ ১-১ শেষ হয়। ০-১ পিছিয়ে থাকা অবস্থায় ৯৬ মিনিটে ১-১ করে রিজস্পোর। জেতা ম্যাচ হাতছাড়া হওয়ায় রেফারির উপর চড়াও হন আনকারাগুসু ক্লাবের প্রেসিডেন্ট ফারুক কোকা। রেফারি উমুত মেলারের সঙ্গে ঝামেলায় জড়ান। কথা কাটাকাটি, উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ে গড়ায়। তখন রেফারিকে ঘুষি চালান ফারুক। এই ঘটনার নিন্দায় সোচ্চায় হয়েছেন ফুটবল প্রেমীরা।
৩৭ বছরের রেফারি উমুত মেলার তুরস্কের অন্যতম সেরা রেফারি। ফিফার ম্যাচ পরিচালনাও করেন। উয়েফার এলিট রেফারি লিস্টেও রয়েছেন তিনি। সেই তাঁকে যে মাঠেই এমন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হবে, তা হয়তো ভাবেননি। শুধু প্রেসিডেন্ট ফারুকই নন, ম্যাচের পর গ্যালারি থেকে মাঠে ঢুকে পড়েন সমর্থকরা। ফারুকের ঘুষি খেয়ে মেলার যখন মাটিতে পড়ে যান, তখন আনকারাগুসুর সমর্থকরাও তাঁকে লাথি মারেন। তুরস্ক ফুটবল ফেডারেশন কিন্তু এই ঘটনা হালকা নিচ্ছে না। এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘অনির্দিষ্ট কালের জন্য সুপার লিগের যাবতীয় ম্যাচ স্থগিত রাখা হচ্ছে। রেফারি উমুত মেলারকে যে বা যারা মেরেছে, ক্লাবের চেয়ারম্যান, কর্তারা, অভিযুক্তরা কড়া শাস্তি পাবে।’
এখানেই থামছে না ব্যাপারটা। ফুটবল মাঠের এই ঝামেলা, রেফারি নিগ্রহের ঘটনা তুরস্কের প্রেসিডেন্টের কানেও পৌঁছেছে। রিসেপ টাইপ এর্দোগান বলেছেন, ‘রেফারি উমুত মেলারের উপর ম্যাচের পর যে ভাবে আক্রমণ করা হয়েছে তার তীব্র নিন্দা করছি। আশা করি রেফারি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবেন। খেলার অর্থ গতি এবং বন্ধুত্ব। খেলার সঙ্গে হিংসাকে মেলানো যায় না। তুরস্কের খেলার জগতে হিংসাকে কোনও ভাবেই ঢুকতে দেব না আমরা।’
আনকারাগুসুর প্রেসিডেন্ট ফারুক কোকা কিন্তু ভিলেন হয়ে গিয়েছেন রেফারি নিগ্রহের পর। ম্যাচের ফলাফল যাই হোক না কেন, রেফারিকে মাঠেই মারধোর করা কোনও ভাবেই মেনে নিতে পারছেন না দেশের সব মহলের মানুষজন। ফারুককে বড় শাস্তির মুখে পড়তে হবে। দীর্ঘ নির্বাসনের কবলে পড়তে পারে আনকারাগুসুও। ওই ঘটনার পর গ্রেপ্তার এড়াতে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ফারুক। তাতেও যে বাঁচবেন, এমনটা মনে করছে না কেউই। বিশেষ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলি ইয়ার্লিকায়া বলেছেন, ‘তুরস্ক ফুটবলের মুখে ঘুষি মারা হয়েছে। লজ্জার ঘটনা। যারা এই ঘটনায় জড়িয়ে, তাদের উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হবে।’