কলকাতা: রাশিয়া বিশ্বকাপের গ্রুপ লিগে আর্জেন্টিনার প্রথম ম্যাচ সে বার আইসল্যান্ডের বিরুদ্ধে। পেনাল্টি মিস করেন মেসি। দু’বারের বিশ্বকাপজয়ীদের বিরুদ্ধে বড় মঞ্চে আইসল্যান্ডের মতো নতুন দল ১-১ ড্র করে তখন সপ্তম স্বর্গে। এ দিকে সমালোচনার ঝড় বইছে আর্জেন্টিনায়, বিশেষ করে মেসিকে নিয়ে। মিক্সড জোনে চোখা চোখা প্রশ্নের সামনে অধিনায়ক মেসি। উত্তর দেওয়ার ফাঁকে আর্জেন্টিনার সাংবাদিক রামা পানতারোত্তোর একটি লাল সুতো বের করলেন।
রামা: মা, আমার থেকেও আপনাকে বেশি ভালোবাসে। এই লাল সুতোটা আপনার হাতে তুলে দিতে বলেছে। আপনি চাইলে আমি দিতে পারি।
মেসি: নিশ্চয়ই।
রামা: মায়ের পাঠানো এই লাল সুতো আপনার রক্ষার জন্য। এখন খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। এই সুতো ধারণ করলে সেই দশা কাটবে।
বিনা বাক্যব্যয়ে লাল সুতো হাতে নেন মেসি। সেন্ট পিটার্সবার্গে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচ ছিল নাইজেরিয়ার বিরুদ্ধে। ম্যাচে গোল করে দলকে এগিয়ে দেওয়ার পর ২-১ গোলে ম্যাচ জেতে আর্জেন্টিনা। ম্যাচ শেষে মিক্সড জোনে রামা পানতারোত্তো খানিকটা ইতস্তত করে মেসিকে জিজ্ঞাসা করেই ফেলেন, “জানি না আপনার আমাকে মনে আছে কি না। আমার মায়ের দেওয়া পয়া লাল সুতো আপনাকে দিয়েছিলাম।” মুচকি হেসে নিচের দিকে একটু ঝুঁকে মোজা টেনে ধরলেন মেসি। বাঁ পায়ে বাঁধা সেই লাল সুতো জ্বলজ্বল করছে। এতটা ভাবেননি আর্জেন্টাইন সাংবাদিক। সঙ্গে সঙ্গে তাঁর জিজ্ঞাসা, আপনি কি এই পা দিয়েই গোলটা করেছিলেন? এরপর ক্যামেরার দিকে ঘুরে মাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “মা দেখো, মেসি তোমার দেওয়া লাল সুতো ধারণ করেছেন।”
সে বার কোয়ার্টার ফাইনালে ফ্রান্সের কাছে ৪-৩ গোলে হেরে বিদায় নিতে হয় আর্জেন্টিনাকে। নিজের দেশেরই এক সাংবাদিকের মায়ের দেওয়া সেই লাল সুতোটা কি সেদিন হারিয়ে ফেলেছিলেন মেসি? প্রশ্নটা উঠেছিল অনেকের মনে। উত্তর পাওয়া গেল সাড়ে চার বছর পর। কাতারের লুসেল স্টেডিয়ামে ফুটবল বিশ্বকাপের এক রুদ্ধশ্বাস ফাইনালে ফ্রান্সকে হারিয়ে ড্রেসিংরুমে উদযাপনে মেতেছিলেন মেসি। জুতো, মোজা খুলে ফেলেছেন। তখনই চোখে পড়ল আর্জেন্টাইন মহাতারকার বাঁ পায়ের গোড়ালির কাছে বাঁধা লাল সুতো। সঙ্গে সঙ্গে ফ্ল্যাশব্যাকে চার বছরের আগের স্মৃতি। রামা ও তাঁর মা কি লাল সুতো বাঁধা মেসির পা দেখেছেন?
ওই লাল সুতো নাকি ২০১৯ সাল থেকে মেসি’র ‘লাকি চার্ম’। যার শরণাপন্ন হয়েছেন পাওলো দিবালা, বার্সেলোনায় মেসির ব্রাজিলিয় সতীর্থ ফিলিপ কুটিনহোরা। ২০১৮-১৯ মরসুমে বার্সেলোনায় সময়টা ভালো যাচ্ছিল না কুটিনহোর। মেসির কাছ থেকে ‘ধার’ করে লাল সুতো পরেছিলেন কুটিনহো। ২০১৯ সালে আর্জেন্টিনার হয়ে প্রথম প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ম্যাচে গোল করার সময় পাওলো দিবালার কাছে ছিল সুতোটি। ফাইনাল ম্যাচে আর্জেন্টাইনদের ‘গুডলাক রিবন’ পরতে দেখা গিয়েছে লাওতারো মার্টিনেজ এবং রড্রিগো ডি পলকেও।
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে, সেই ‘রেড রিবন’-এর সৌজন্যেই কি মেসির কেরিয়ারের ‘রেড লেটার ডে’ হয়ে রইল কাতার বিশ্বকাপের ফাইনাল?