দীপঙ্কর ঘোষাল
সব খেলার সেরা বাঙালির তুমি…। উত্তরটা সকলেরই জানা। আর ফুটবল বলতেই বাংলার কাছে চিংড়ি-ইলিশ, মশাল-পালতোলা নৌকোর চিরাচরিত লড়াই। বড় ম্যাচ ছাড়া বাংলা ও বাঙালির কাছে ফুটবলটাই নিরামিষ।
ইতিহাস দেখলে, কোন টিন কী জায়গায় দাঁড়িয়ে রয়েছে, ডার্বি কখনও এসবের গুরুত্ব রাখে না। কোন টিম ভালো, কোনটা খারাপ। এসব দিয়ে ডার্বির মঞ্চ তৈরি হয় না। বড় ম্যাচে সবচেয়ে গুরুত্ব রাখে বাধভাঙা লড়াই, গ্যালারি, সমর্থক। হিসেব-নিকেশ উল্টে দেয় ডার্বি।
গত আড়াই বছর ডার্বি দেখতে না পাওয়ার খরা তৈরি হয়েছিল। সেটা মেটানোর জন্যই যেন হাজির হয়েছে এই ডার্বি। যে কারণে বহুদিন পর টিকিটের জন্য ময়দানে লাঠিচার্জ দেখা গেল, বিক্ষোভ হল। বাধভাঙা বৃষ্টিতে কোনওরকমে দাঁড়িয়ে টিকিট নিলেন সমর্থকরা। এটাই তো ডার্বির আসল মেজাজ।
মরসুমের প্রথম ডার্বি সাধারণত দেখা যায়, সেই অর্থে আকর্ষণীয় কিংবা উত্তেজক হয় না। দুটি দলই চেষ্টা করে না হারার। যে হেতু এটা নকআউট টুর্নামেন্ট, দু দলের বর্তমান অবস্থান, না জিতলে শেষ আটে যাওয়ার দরজা বন্ধ। ফলে ঘরের মাঠে আড়াই বছর পর ডার্বি এবং ঘরের মাঠে এত সমর্থকের সামনে নামা, দুই কোচই মরিয়া চেষ্টা করবেন ডার্বি জেতার। আরও একটা লক্ষ্য থাকবে দুই কোচেরই, মরসুমের প্রথম ডার্বি জিতে সমর্থকদের আরও কাছে টেনে নেওয়ার। যে দল জিতবে, সমর্থকদের ভরসা, ভালোবাসা, দায়বদ্ধতা বাড়বে, সঙ্গে প্রত্যাশাও। তাঁরা আরও বেশি করে দলকে তাতাবে। সমর্থকদের এই প্রত্যাশা পূরণই বড় চাওয়া থাকবে দুই কোচ স্টিফেন কনস্ট্যান্টাইন এবং হুয়ান ফেরান্দোর। সে কারণেই, কেউ যদি আগাম ভেবে নেয়, এই ডার্বি নিরামিশ হতে চলেছে, তা হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
ম্যাচের আগে দু দল নিজেদের মতো প্রস্তুতি সারল। মোহনবাগান হয়তো অনেকটা গুছিয়েও নিল। ইস্টবেঙ্গল কিন্তু সে ভাবে পারল না। আগের ম্যাচ খেলায় যে প্রস্তুতি হয়েছিল, ইস্টবেঙ্গলকে তার উপরই ভরসা করতে হচ্ছে। ম্যাচের আগের দিন বৃষ্টিতে মাঠেই নামতে পারল না ইস্টবেঙ্গল। কার্যত ইস্টবেঙ্গল কোচ এবং দলকে ব্ল্যাকবোর্ডে প্রস্তুতি সেরে নামতে হচ্ছে। স্ট্র্যাটেজির উপর ভরসা রাখা এবং স্টিফেন নিজেও কিন্তু এটা পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারেননি তাঁর দলের শক্তি-দূর্বলতা। সেটা তিনি স্বীকারও করেছেন। ফলে নিজের টিমকেই না বোঝার যে খামতি, সন্ধের ম্যাচে যদি তার ছাপ থাকে, তাহলে অবাক হওয়ার নেই। অন্যদিকে, বলা যায় ডার্বির এটাই চরিত্র, আগে থেকে কোনও দলকে এগিয়ে-পিছিয়ে রাখা যায় না। ডার্বি সবসময় সাহসীদের। ইস্টবেঙ্গলের সাহসের অভাব নেই। ইস্টবেঙ্গল বরাবরই কিছুটা জার্মান মানসিকতার। ইস্টবেঙ্গল পাল্টা আক্রমণ, প্রত্যাবর্তন, হঠাৎ ফিরে আসা, এ সবে বিশ্বাসী। গত পাঁচটি ডার্বিতে হারের জ্বালা মোটানোর তাগিদ।
সৌভিক চক্রবর্তী, প্রীতম কোটালদের মতো দু’দলের বাঙালি ফুটবলারদের কাছে ডার্বির বাড়তি গুরুত্ব রাখে। তারাও বাকি সতীর্থদের এর গুরুত্ব বোঝাবে এমনটাই স্বাভাবিক। আবহাওয়ার মতো ইলশে গুড়িতে পালতোলা নৌকো ভিজবে, নাকি ইলশে গুড়ি আরও বড় আকারে এসে পালতোলা নৌকো ডুবিয়ে দেবে, আজ সন্ধ্যায় বোঝা যাবে সেটাই।