দীপঙ্কর ঘোষাল
নতুন তারকা কে? এই প্রশ্ন চার বছর অন্তত ঠিক ঘোরাফেরা করে মাথায়। বিশ্বকাপ ফুটবলের আসরে এ বারও আমরা বসব মেসি-রোনাল্ডো-নেইমারের পরবর্তী প্রজন্মের খোঁজে। বিশ্বকাপ এমনই। তার পথচলার প্রথম দিন থেকেই জন্ম দিয়ে চলেছে একের পর নায়ক। অসংখ্য ঘটনা। আর একদল বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। সেই সব নায়ক আর না-ভোলা ঘটনা তুলে আনল টিভি নাইন। পর্ব-৬
ইতালি ফুটবল মানেই সেরা ডিফেন্ডারদের দীর্ঘ তালিকা। সিজার মালদিনি, পাওলো মালদিনি, জাম্ব্রোতা…। শুধুমাত্র ইতালিই নয় বিশ্ব ফুটবলে সেরা ডিফেন্ডারদের তালিকায় নিঃসন্দেহে থাকবেন জিউসেপে বেরগেমো। ১৭ বছর বয়সেই ‘আঙ্কল’ হয়ে গিয়েছিল যাঁর ডাক নাম। তার একটা মজার কারণ ছিল। ওই বয়সেই গোঁফ এবং ঘণ ভুরু। বেশ গম্ভীর দেখাত। তাই ডাকা শুরু হয় ‘আঙ্কল’ নামে। তবে ওই যে বলে, নামে কী আসে যায়। ১৯৮২ সালের ফিফা বিশ্বকাপ। ফাইনালে ওয়েস্ট জার্মানিকে ৩-১ হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন ইতালি। মাত্র ১৮ বছর বয়সেই বিশ্বকাপ জেতা জিউসেপের জন্য দারুণ কৃতিত্বের বিষয়। সব মিলিয়ে চারটি বিশ্বকাপ খেলেছেন। এর মধ্যে ঘরের মাঠে ১৯৯০ সালের বিশ্বকাপে দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন ইতালির এই ডিফেন্ডার। ক্লাব ফুটবলে খেলেছেন ইন্টার মিলানে। ক্লাব কেরিয়ারে শুরু সেখানে, অবসরও এই ক্লাবে খেলেই। দীর্ঘ ২০ বছরের কেরিয়ার ইন্টার মিলানে।
ইতালির মিলান শহরে জন্ম জিউসেপের। সেন্টার ব্যাকের পাশাপাশি অনেক ম্যাচে খেলেছেন রাইট ব্যাক পজিশনেও। ১৭ বছরেই ইন্টার মিলানের সিনিয়র দলে সুযোগ। স বমিলিয়ে হয়তো ৩০টি ম্যাচ খেলেছেন। এটুকু পথই নতুন দরজা খুলে দেয় তাঁর সামনে। ধারাবাহিক ভালো পারফরম্যান্সের সুফল পরের বছরই। জাতীয় দলে এবং ১৯৮২ বিশ্বকাপের স্কোয়াডেও জায়গা পান। শুরুতেই অবশ্য প্রথম একাদশে খেলার সুযোগ হয়নি। ব্রাজিলের বিরুদ্ধে পরিবর্ত হিসেবে নামেন জিউসেপে। সেই ম্যাচে ৩-২ স্মরণীয় জয় দলের এবং অবশ্যই ১৮ বছরের জিউসেপের। সেমিফাইনালের আগে সমস্যায় পড়ে ইতালি। কার্ড সমস্যায় জেন্টিলেকে পায়নি তারা। ঝুঁকি নিয়েই সেমিফাইনালের মতো হাইভোল্টেজ ম্যাচে পোল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম থেকে খেলানো হয় জিউসেপেকে। পরিচ্ছন্ন ফুটবলে এতটাই পরিণত মানসিকতার পরিচয় দিয়েছেন, ইতালির কোচ মুগ্ধ হয়ে যান। ফাইনালে তাঁকে খেলানোর লোভ সামলাতে পারেননি কোচ বেয়ারজোত। জিউসেপেকে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়। বিশ্ব ফুটবলের আর এক কিংবদন্তি ওয়েস্ট জার্মানির কার্ল হেইঞ্জ রুমেনিগেকে মার্কিংয়ে রাখার দায়িত্ব পড়ে জিউসেপের উপর। সেই দায়িত্বে সফল জিউসেপে। এতটাই ভালো খেলেন তিনি, রুমেনিগের পরিবর্ত নামাতে বাধ্য হয় ওয়েস্ট জার্মানি। ইতালি ৩-১ ব্যবধানে ফাইনাল এবং বিশ্বকাপ জেতে।
১৯৯০ সালে ফিফা বিশ্বকাপের আয়োজক ছিল ইতালি। ঘরের মাঠে বিশ্বকাপে নেতৃত্ব দেন জিউসেপে। প্রতিটি ম্যাচেই খেলেন তিনি। ঘরের মাঠে চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি ইতালি। সেমিফাইনালে আর্জেন্টিনার কাছে টাইব্রেকারে হার ইতালির। সব ক্রীড়াবিদের জীবনে আলো যেমন থাকে, অন্ধকারও থাকে। জিউসেপের ক্ষেত্রেও এসেছে। ১৯৯২ সালের ইউরো কাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বে নরওয়ের বিরুদ্ধে পরিবর্ত হিসেবে নামানো হয় জিউসেপেকে। নামার কিছুক্ষণের মধ্যে একটি জঘন্য ফাউলে রেড কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন জিউসেপে। দীর্ঘ কয়েক বছর জাতীয় দলে সুযোগ পাননি আর। আশা ছাড়েননি, নিজের উপর ভরসা রেখে প্রস্তুতি সেরেছেন, ক্লাব ফুটবলে ভালো খেলেছেন। ১৯৯৮ বিশ্বকাপে কিছুটা অপ্রত্যাশিত ঘটনা তাঁর কেরিয়ারে। বিশ্বকাপের আগে হঠাৎই জাতীয় দলে ডাক পান জিউসেপে। আন্তর্জাতিক ফুটবলে ৩৪ বছর বছরে প্রত্যাবর্তন খানিকটা অপ্র্যাত্যাশিত ঘটনা। কেরিয়ারের চতুর্থ বিশ্বকাপে তিনটি ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন।
বিশ্বকাপ জয়ের পাশাপাশি কিছু ব্যক্তিগত স্বীকৃতিও পেয়েছেন জিউসেপে। ১৯৮৮ সালে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে টুর্নামেন্টের সেরা দলে জায়গা পেয়েছিলেন। ইন্টার মিলানে বর্ষসেরা ফুটবলারের সম্মান, ইতালিয়ান ফুটবলের ‘হল অব ফেমে’ স্থান, ইন্টার মিলানে ‘হল অব ফেম’ এবং সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি ২০০৪ সালে কিংবদন্তি পেলের তৈরি সেরা ১০০ ফুটবলারের তালিকায় জিউসেপের জায়গা পাওয়া।