অভিষেক সেনগুপ্ত
কেরিয়ার শুরু হয়, শেষও। সাফল্য থেকে যায় আজীবন। ক্রীড়াবিদদের কেরিয়ার নামেই ইতি হয়। অনেকেই জড়িয়ে থাকেন তাঁর প্রিয় খেলার সঙ্গেই। অবসর ঘোষণা করেছেন ভারতের সর্বকালের অন্যতম সেরা গোলরক্ষক সুব্রত পাল। ভারতীয় ফুটবলে তিনি অনেক বেশি পরিচিত, ‘স্পাইডারম্যান’ নামে। আর বাংলা ফুটবল যাঁকে চেনে ‘মিষ্টু’ বলে। অবসরের সিদ্ধান্ত যে কতটা কঠিন? বাকিরা জানেন, বোঝেন। একমাত্র তিনিই উপলব্ধি করতে পারেন। সুব্রত পালের ক্ষেত্রেও নতুন নয়। চোখের সামনে ভেসে ওঠে নানা মুহূর্ত। জাতীয় দলের জার্সিতেই হোক কিংবা ক্লাব ফুটবলে। কিংবা বিদেশের ফুটবলে? রইল নতুনদের জন্য বার্তা, প্রত্যাশাও। গ্লাভস তুলে রাখার পর TV9Bangla Sports-কে সাক্ষাৎকারে সুব্রত যা বললেন।
শুরুতেই যেটা বলতে হয়, আপনার জীবনে ফুটবল কী ভাবে পরিবর্তন এনেছে?
ফুটবলই তো জীবনকে সঠিক পথ দেখিয়েছে। বাঁচার অর্থ বদলে দিয়েছে। মানুষ হিসেবে বদলে দিয়েছে। শৃঙ্খল করেছে। জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা পেয়েছি ফুটবলের সৌজন্যেই। সবচেয়ে বড় কথা, দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পেয়েছি এই ফুটবলেই। সহজ করে বলে দেওয়া যায়, ফুটবল না থাকলে, আমি আজ এই সুব্রত পাল হয়ে উঠতে পারতাম না।
বর্ণময় কেরিয়ারের যদি সেরা তিনটে মুহূর্ত বাছতে বলা হয়, কোনগুলোর কথা বলবেন?
খুবই কঠিন কাজ। সত্যি বলতে ২৪ বছরের কেরিয়ার থেকে মাত্র তিনটে মুহূর্ত বেছে নেওয়া কার্যত অসম্ভব। মাঠে কাটানো প্রতিটা মুহূর্তই আমার কাছে অন্যতম সেরা। সেটা ভালো কোনও গোল সেভই হোক বা সতীর্থদের সঙ্গে বোঝাপড়া। প্রতিটা মুহূর্তই প্লেয়ার এবং মানুষ হিসেবে আমাকে পরিণত করেছে।
শুধুমাত্র ভারতীয় ফুটবলই নয়, বিদেশেও ছাপ ফেলেছেন। কেরিয়ারে সেই দিনগুলো কী ভাবে দেখছেন?
দেশের প্রথম গোলকিপার হিসেবে ইউরোপের শীর্ষসারির ক্লাবে পেশাদার চুক্তিতে সই করা আমার কাছে বড় সাফল্য। দীর্ঘ সময় নানা বাধা পেরিয়ে এই সাফল্য এসেছিলাম। ডেনমার্কের ক্লাবে খেলাটাই আমার জীবনের টার্নিং পয়েন্ট হয়ে দাঁড়ায়। অন্য একটা দরজা খুলে গিয়েছিল আমার সামনে। ওদের খেলার ধরন, গতি, তাগিদ, পরিকল্পনা; সব দিক থেকেই আমার কাছে নতুন এবং বিশাল একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। নিজেকে আরও উন্নত করতে পেরেছিলাম।
আপনার কেরিয়ারে ভারতীয় দলের প্রাক্তন কোচ বব হাউটনের প্রভাব কতটা?
এক কথায়, অনেকটাই। তাঁর কোচিংয়ে কেরিয়ারের রূপরেখা পাল্টে গিয়েছিল। একজন পেশাদার ফুটবলারে জীবনে যা প্রয়োজন, বুঝতে শিখেছিলাম। দেশের অন্যতম সেরা হয়ে উঠতে সাহায্য করেছিল তাঁর কোচিং। জীবনে ডিসিপ্লিন, তাগিদ-এর আসল অর্থ বুঝিয়েছিলেন তিনিই।
আপনাকে স্পাইডারম্যান বলা হয়। এটা একেবারেই নতুন বিষয় নয়। তবে এই নামকরণের নেপথ্য কারণ কী?
অনেক দিন আগের কথা। হ্যাঁ, ২০১১ সালে এএফসি এশিয়ান কাপের সময় এই নামটা দেওয়া হয়েছিল। বেশ কিছু অ্যাক্রোব্যাটিক সেভ করেছিলাম। সাংবাদিক সম্মেলনে দেশ-বিদেশের প্রতিনিধিরা ছিলেন। আমি এই ডাকনামকে ভালো ভাবেই নিয়েছিলাম। গর্ব হয়েছিল। খেলার প্রতি আমার যে দায়বদ্ধতা তারই চিহ্ন বলা যায় এই ডাকনাম।
এ বছর ভারতীয় দল তিনটে আন্তর্জাতিক ট্রফি জিতেছে। নতুন বছরে এশিয়ান কাপ। ভারতের সম্ভাবনা কেমন দেখছেন?
সম্ভাবনা ভালো। ভারতীয় ফুটবল দল গত কয়েক বছরে প্রশংসনীয় উন্নতি করেছে। ২০১৯ সালের এশিয়ান কাপে সেমিফাইনালে পৌঁছেছিল। ভারতীয় ফুটবলের জন্য এটি অভিনব সাফল্য। বর্তমান ভারতীয় দলে অনেক প্রতিভাবান খেলোয়াড় রয়েছে। একজন ভাল কোচও রয়েছে। ইগর স্টিমাচ অভিজ্ঞ কোচ। তিনি ভারতীয় দলের খেলাকে আরও উন্নত করার জন্য কাজ করছেন। তবে ভারতের সামনে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। ভারতীয় দলকে শক্তিশালী দলগুলির বিরুদ্ধে আরও ভালো খেলতে হবে। ধারাবাহিকতা দেখাতে হবে।
সাফল্যের অর্থ প্রত্য়েকের কাছে আলাদা। আপনার কাছে সাফল্যের মূল-মন্ত্র কী?
আমার কাছে সফল হওয়ার তিনটেই মন্ত্র। কঠোর পরিশ্রম, অধ্যবসায় এবং লক্ষ্য নির্ধারণ। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এই তিনটি জিনিস মেনে চললে সফল হতে পারবো। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক, কঠোর পরিশ্রম। প্রতিদিন অনুশীলন করতে হবে, নিজের দক্ষতা বাড়াতে হবে এবং যে লক্ষ্য স্থির করেছিলাম সে দিকে এগিয়ে যেতে হবে।