Pakistan Football : পাক ফুটবলের কেরল-জাত ক্যাপ্টেন! ফুটবলের টানে জন্মভূমি ছেড়েছিলেন মইদিন কুট্টি
Moideen Kutty : মলপ্পুরমে মইদিন কুট্টি পরিচিত ছিলেন 'ইরুমবান' নামে। যার অর্থ লৌহমানব। তাঁর নগ্ন পা থেকে আগুনের গোলার মতো শট মাঠের অস্থায়ী গোলপোস্টকে কাঁপিয়ে দিত। সিঁটিয়ে থাকত বিপক্ষের গোলরক্ষকরা।

কলকাতা: এ দেশে জন্ম। কেরলের মলপ্পুরম তাঁর শৈশব, কৈশোর ও যৌবনের বিচরণক্ষেত্র। জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন মলপ্পুরমের মেয়েকে সাইনবাকে। পরাধীন ভারতবর্ষে কেরলের সৈনিক মইদিন কুট্টির জীবনটাই বদলে দিয়েছিল দেশভাগ। যিনি পাকিস্তানের গিয়ে হয়ে যান পুরোদস্তুর ফুটবলার। সেদেশের ফুটবল দলকে নেতৃত্ব দিতে শুরু করেন। ভারতের সৈনিক মইদিন কুট্টি ছিলেন পাকিস্তান ফুটবল টিমের চতুর্থ ক্যাপ্টেন। দেশভাগের পর গোটা জীবনটা পাকিস্তান ফুটবল ও তার উন্নতির জন্য উৎসর্গ করে দিয়েছিলেন। সদ্য জন্মানো একটি দেশের ক্রীড়া জগতে কুট্টি পদপ্রদর্শকের কাজ করেছিলেন। পাকিস্তান ফুটবলের আগাম ভবিষ্যৎ গড়া হয়েছিল কেরল-জাত এক জওয়ানের হাত ধরে! আজ ২০২৩ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ভারত বনাম পাকিস্তান ম্যাচ। তার আগে পাক ফুটবলের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া মলপ্পুরমের মইদিন কুট্টির বিষয়ে জেনে নেওয়া যাক TV9 Bangla Sports-র এই প্রতিবেদনে।
কে এই মইদিন কুট্টি?
মলপ্পুরমে মইদিন কুট্টি পরিচিত ছিলেন ‘ইরুমবান’ নামে। যার অর্থ লৌহমানব। তাঁর নগ্ন পা থেকে আগুনের গোলার মতো শট মাঠের অস্থায়ী গোলপোস্টকে কাঁপিয়ে দিত। সিঁটিয়ে থাকত বিপক্ষের গোলরক্ষকরা। ১৯২০ সালে জন্ম মইদিন কুট্টি মলপ্পুরমের হাই স্কুলে পড়ার সময় ফুটবল খেলা শুরু করেন। আন্তঃস্কুল টুর্নামেন্টে দলকে নেতৃত্ব দিতেন। ম্যাট্রিক পাশ করার পর ১৯৪৪ সালে রয়্যাল ইন্ডিয়ান এয়ার ফোর্সে যোগ দেন কুট্টি। ব্যাঙ্গালোরে ট্রেনিংয়ের দিনগুলিতে প্রথম বার বুট পরে ফুটবল খেলেছিলেন। খুব অল্পদিনের মধ্যে রয়্যাল ইন্ডিয়ান এয়ার ফোর্সের ফুটবল টিমের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হয়ে ওঠেন।
মইদিন কুট্টি পাকিস্তানে কীভাবে গেলেন?
বেঁচে থাকা অবস্থায় খুব কম মানুষই তাঁর সান্নিধ্যে যেতে পেরেছেন। আহমেদ কুট্টি নামক মলপ্পুরম জেলার ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের এক কর্তা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, “১৯৪৭ সালে যখন দেশভাগ হল তখন কুট্টি রয়্যাল ইন্ডিয়ান এয়ারফোর্সে। সেখানকার বেশিরভাগ সেনা ছিলেন পশ্চিম পঞ্জাবের। দেশভাগের পর যা পাকিস্তানের অধীনে চলে যায়। সহকর্মীদের সঙ্গে তিনিও পাকিস্তানে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। শুধুমাত্র তাঁদের সঙ্গে ফুটবল খেলবেন বলে। আসলে মইদিন দেশভাগের বৃহত্তর পরিণতি এবং তার সিদ্ধান্ত সম্পর্কে অবগত ছিলেন না। তাঁর বিশ্বাস ছিল, দুটি দেশ বন্ধুর মতো পাশাপাশি থাকবে। বর্ডার পেরিয়ে এ দেশে আসা খুব সহজ হবে। কিছুদিনের মধ্যেই মইদিনের ভুল ভাঙে। ততদিনে আর কিছু করার ছিল না।”
রয়্যাল পাকিস্তান এয়ার ফোর্সে যোগ দেন মইদিন কুট্টি। ১৯৫২ সালে এশিয়ার চার দলের টুর্নামেন্টে পাকিস্তানের জাতীয় দলের হয়ে অভিষেক হয় তাঁর। যে টুর্নামেন্টে পাকিস্তান ছাড়াও ছিল ভারত, সেইলন এবং বার্মা। বছর দুয়েক পরে কলকাতায় আয়োজিত হয় চার দলের কলম্বো কাপ। সেই প্রথম বার ভারতের মাটিতে ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে পাকিস্তানের হয়ে খেলতে নামেন কুট্টি। জানা যায়, লক্ষাধিক দর্শকের উপস্থিতিতে ম্যাচটি ১-৩ গোলে হেরে গিয়েছিল পাকিস্তান। ১৯৫৪ সালে ম্যানিলা এশিয়ান গেমসে পাক দলের নেতৃত্ব পান কুট্টি। ১৯৫০ সালে আর্মি ফুটবল টুর্নামেন্টে পাকিস্তান সার্ভিস টিমের অংশ ছিলেন। পরে দীর্ঘদিন পাকিস্তানের সিনিয়র ও জুনিয়র টিমের কোচিং করিয়েছেন। জীবনের শেষদিকে ভারতে আসার প্রবল ইচ্ছে ছিল। তবে বিভিন্ন সমস্যার জন্য জন্মভূমিতে পা রাখা হয়নি অশীতিপর মইদিন কুট্টির। কেউ বলেন ২০০৫ সালে তিনি প্রয়াত হন। আবার শোনা যায় ২০১১ সাল পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন তিনি।





