কলকাতা: প্রয়াত হয়েছেন প্রাক্তন ভারতীয় ফুটবলার সুরজিৎ সেনগুপ্ত (Surajit Sengupta)। সুরজিতের প্রয়াণে ফুটবলমহলে শোকের ছায়া। ৭০ বছর বয়সে জীবনের লড়াইয়ে হেরে গেলেন সুরজিৎ। ফুটবল জগতে একের পর এক নক্ষত্রপতন। ২৩ জানুয়ারি করোনা আক্রান্ত হয়ে কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। হাসপাতালের বেড থেকে করোনার সঙ্গে ক্রমাগত লড়াই করছিলেন সুরজিৎ। আজ সেই লড়াইের অবসান হল।
জেনে নিন প্রাক্তন ফুটবলাররা কী বলছেন ময়দানের শিল্পীর প্রয়াণে….
সুব্রত ভট্টাচার্য – ছোটবেলা থেকে আমরা একসঙ্গে খেলেছি। ও চুঁচুড়ায় থাকত, আমি শ্যামনগরে থাকতাম। আমরা ছোটবেলা থেকেই একসাথে খেলেছি। মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গলে দীর্ঘদিন ও সুনামের সঙ্গে খেলেছে। দক্ষতার সঙ্গে খেলেছে। একটা গুনী ফুটবলার ছিল ও। ক্রীড়া বিশ্লেষণটাও খুব ভালো করত। সব মিলিয়ে ও ছিল একটা পরিপূর্ণ ফুটবলার। সে যদি হঠাৎ এই বয়সে চলে যায় তা হলে আর বলার মতো কী থাকে। এর চেয়ে দুঃখের আর কিছু নেই।
সঞ্জয় সেন – এক এক করে আমাদের প্রিয় প্রাক্তন খেলোয়াড়েরা চলে যাচ্ছে। এর থেকে দুঃখজনক আর কী হয়। একটা ভালো মানুষ। একটা সজ্জন মানুষ আমার জীবনে আমি খুব কম দেখেছি। ওনার ব্যবহার থেকে শুরু করে কথাবার্তা অসাধারণ ছিল। যেখানেই দেখা হয়েছে সব সময় কথা বলেছেন। উৎসাহিত করেছেন। ঈশ্বরের কাছে একটাই প্রার্থনা করি, ওনার আত্মা যেন শান্তি পায়। ওনার পরিবারকে সমবেদনা জানাই। হা হুতাশ করা ছাড়া আমাদের কাছে আর কোনও উপায় নেই। আজ আমাদের কাছে একটা বাজে দিন। কী বলব কোনও ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না।
বিদেশ বসু – কোনও ভাষা নেই। আমি এই মাত্র শুনলাম খবরটা। সুরজিৎ দার সঙ্গে সব সময় আমাদের যোগাযোগ ছিল। আমাদের মন্ত্রী আমাদের সবাইকে ডেকেছিলেন। ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান, মহামেডান, আইএফএর অনেকে থেকে ছিল। কীভাবে তাঁর স্বাস্থ্যের জন্য কী করা যায়। পিয়ারলেসে তিনি ছিলেন, সেখানকার কর্মকর্তা আমাদের সঙ্গে হওয়া আলোচনার সময় উপস্থিত ছিলেন। ওখান থেকে ট্রিটমেন্ট করার কথা আলোচনা হয়। প্রতিনিয়ত আলোচনা হচ্ছিল তাঁকে সুস্থ করে তোলার জন্য কী করা যায়। আমরা প্রতিনিয়ত তাঁর মেডিকেল আপডেট পাচ্ছিলাম। তবে আমরা কোনওদিনই আশা পাচ্ছিলাম না। করোনা যে কত মানুষদের কেড়ে নিল! সুভাষদা চলে গেল। এদিকে সুরজিৎদা চলে গেল। তার আগে আমার বন্ধু চিন্ময় চলে গিয়েছিল। সব চেয়ে কষ্টের হল, এই বয়সটা কী চলে যাওয়ার? এই বয়সটা তো চলে যাওয়ার নয়। সেই কষ্টটা প্রকাশ করতে পারছি না। শেষ দেখা হয়েছিল, মনোরঞ্জন ভট্টাচার্যের ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠানে। এটা মেনে নিতে পারছি না। সব সময় হাসি খুশি থাকতেন তিনি। মজা করে কথা বলত। সত্যি এটা মেনে নেওয়া যাচ্ছে না। ভীষণ রসিক মানুষ ছিলেন। ১৯৭৮ সালে আমরা সন্তোষ ট্রফি খেলতে গিয়েছিলাম কাশ্মীরে। আমার ওই সময় রীতিমতো আনন্দ করেছিলাম। যারা ওই সময় টিমে ছিল না তারা ভাবতে পারবে না, আমরা কীভাবে দিন কাটিয়েছিলাম ওই সময়। আমি সুরজিৎদার সঙ্গে এক ক্লাবে খেলেছি, বাংলার হয়ে ভারতের হয়েও আমি সুরজিৎদার সঙ্গে একসঙ্গে খেলেছি।
মানস ভট্টাচার্য – গত ২৩ তারিখ দাদা ভর্তি হয়েছিল। তার পর থেকে নিয়মিত দাদাকে সুস্থ করার জন্য আমরা একটা প্রক্রিয়া চালিয়েছিলাম। সরকার আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল। নিয়মিত ওর ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলাম। দাদাকে সুস্থ করে তোলার জন্য আমরা ভীষণ চেষ্টা করেছিলাম। গত কয়েকদিন ধরে একটা ভীষণ চাপের মধ্যে ছিলাম। একটা টালমাটালের মধ্যে ছিল সুরজিৎদার অবস্থাটা। পরপর আমরা বেশ কয়েকজন গুনী প্লেয়ারকে হারিয়ে ফেললাম। সুভাষদা চলে গেলেন, প্রদীপদা চলে গেলেন, চিন্ময় চলে গেল। তার পর সুরজিৎদার চলে যাওয়াটা আমাদের কাছে ভীষণ বেদনার, ভীষণ দুঃখের। ১৯৭৬ সালে সুরজিৎদার সঙ্গে বেঙ্গল টিমে প্রথম খেলার সুযোগ হয়েছিল। পরপর টার বছর ন্যাশানাল টিমে আমরা একসঙ্গে খেলেছিলাম। দারুণ মানুষ ছিলেন। ওনার পরিবারের সঙ্গেও আমাদের ভালো সম্পর্ক ছিল। বৌদির সঙ্গে কদিন ধরেই কথা হচ্ছিল, নিশ্চই সুরজিতদা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরবেন। তবে আজ আমাদের ফুটবলারদের কাছে খুব দুঃখের একটা দিন। সুরজিতদা শুধু ভালো খেলোয়াড় ছিলেন না। তাঁর গানের গলাও ভীষণ ভালো ছিল। সাংস্কৃতিক জগতের সঙ্গেও সুরজিৎদার ভালো সম্পর্ক ছিল। একটা পত্রিকাতে তিনি কাজও করেছেন। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন সুরজিৎদা। সত্যি আজ খুব খুব খারাপ লাগছে। আজ খুব খুব খারাপ লাগছে। শুধু একটাই কথা বলব দাদা যেখানেই থাকুক না কেন শান্তিতে থাকুন। এবং তাঁর পরিবারকে আমি সমবেদনা জানাই। আজ বাংলার ফুটবলের একটা কালো দিন।