কলকাতা: ইন্ডিয়ান সুপার লিগের ইতিহাসে প্রথম কোন টিম চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল মনে পড়ে? অ্যাটলেটিকো ডি কলকাতা। সংক্ষেপে এটিকে বলা হত। আইপিএলের ধাঁচে ২০১৪ সালে শুরু হয় ইন্ডিয়ান সুপার লিগ। উদ্বোধনী সংস্করণে এটিকের কোচ ছিলেন স্প্যানিশ আন্তোনিও লোপেজ হাবাস। স্প্যানিশ ক্লাব অ্যাটলেটিকো ডি মাদ্রিদের জুনিয়র টিমে কোচিং করানো হাবাসের ওপর ভরসা রাখা হয়। প্রথম সংস্করণেই নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করেন। সে বারই শুধু নয়, আইএসএলে দু-বার চ্যাম্পিয়নের ট্রফি জিতেছেন। ২০২০-২১ মরসুমেও সবুজ মেরুনের কোচ ছিলেন হাবাস। যদিও টানা কয়েক ম্যাচে হতাশার জেরে সরে দাঁড়ান। এফসি গোয়া থেকে কোচ করে আনা হয় হুয়ান ফেরান্দোকে। এ বছর ফের হাবাসকে টেকনিক্য়াল ডিরেক্টর করে আনা হয় সবুজ মেরুনে। এ বার ফেরান্দোকে সরিয়ে তাঁকেই দায়িত্ব দেওয়া হল। এর নেপথ্যে যে কারণগুলি মনে করা হচ্ছে, বিস্তারিত রইল TV9Bangla Sports-এর এই প্রতিবেদনে।
বিপক্ষকে থামানোর ক্ষুরধার ছক। প্ল্যান এ, বি, সি- ধরে এগোতেই পছন্দ করেন হাবাস। প্রতিপক্ষ ধরে পরিকল্পনা প্রস্তুত রাখেন। তার মানে কি তিনি কোনওদিন হারেননি? খেলায় হার জিত থাকবেই। তাঁর কোচিংয়েও দল হেরেছে। যদিও কলকাতার ক্লাবের হয়ে তাঁর সাফল্য ঈর্ষণীয়। দু-বার ট্রফি জেতার পাশাপাশি ধারাবাহিক পারফর্মও করেছে তাঁর টিম। এর অন্যতম কারণ, টিমের ভুল-ত্রুটি দ্রুত বোঝা। জুনিয়র প্লেয়ারদের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা থাকায় তৃণমূল স্তরে প্লেয়ার তুলে আনার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতেন। এ বারও টেকনিক্যাল ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করেছেন।
হাবাসের সবচেয়ে বড় বিষয়ে আসা যাক। ম্যান ম্যানেজমেন্ট। এ দিক থেকে হাবাসকে অনেকের থেকে এগিয়ে রাখতে হবে। তাঁর কাছে প্লেয়ার মানেই প্লেয়ার। তিনি তারকা না জুনিয়র, ম্যাটার করে না। এর অন্যতম প্রমাণ লুই গার্সিয়া। বার্সেলোনা, লিভারপুল, অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ, স্পেন জাতীয় দলের হয়ে খেলা ফুটবলারকে ফাইনালের মতো ম্যাচে বাদ দেওয়ার ‘দুঃসাহস’ দেখিয়েছিলেন হাবাস। পাশাপাশি জোফ্রেকেও বেঞ্চে রেখেছিলেন। টিমের মার্কি প্লেয়ার গার্সিয়াকে বেঞ্চে রাখায় প্রাথমিক ভাবে কম সমালোচনার মুখে পড়েননি হাবাস। তবে চ্যাম্পিয়ন হয়ে প্রমাণ করে দিয়েছিলেন, তাঁর পরিকল্পনার নেপথ্যেও কারণ ছিল। আন্তোনিও লোপেজ হাবাসের কাছে ভারতের এক তরুণ ফুটবলারের যা গুরুত্ব, বিদেশি তথাকথিত তারকা ফুটবলারেরও।
হারের হ্যাটট্রিকে বছর শেষ করেছে মোহনবাগান। মরসুমের শুরু থেকে ফেরান্দোর পাখির চোখ ছিল এএফসি কাপ। যদিও গ্রুপ পর্বেই বিদায় নিয়েছে মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট। দলে একাধিক প্লেয়ারের চোট থাকা নিয়েও অস্বস্তি প্রকাশ করেছিলেন ফেরান্দো। অনেকে এই থিয়োরির সঙ্গে একমত হলেও কেউ কেউ পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন, রিজার্ভ বেঞ্চ কেন তৈরি রাখেননি ফেরান্দো? ফুটবল বডি কন্ট্যাক্ট গেম। চোট পাওয়া তো স্বাভাবিক! বিকল্প কেন থাকবে না? বাকিদের সঙ্গে হাবাসের যেন এখানেও পার্থক্য। তাঁর রিজার্ভ বেঞ্চ প্রস্তুত রাখার দক্ষতাও প্রশংসনীয়। যে কারণে, দলটাকে সবসময়ই বড় মনে হত।
ভারতীয় ফুটবল এবং আরও নিখুঁত করে বললে, কলকাতা ফুটবলে সবচেয়ে বেশি জরুরী সমর্থকদের ‘পালস্’ বোঝা। যেটা হাবাস খুব ভালো বুঝতে পারতেন। কলকাতা ফুটবলে শেষ কথা কিন্তু সমর্থকরাই। তাঁরা না থাকলে দলের কোনও অস্বিত্ব নেই। সেবিষয়ে অনেক অনেক এগিয়ে আন্তোনিও লোপেজ হাবাস।