Kolkata Derby: হাজার লোকের পায়ের চাপে… ইন্দোনেশিয়া মনে করায় সে দিনের ইডেন গার্ডেন্সকেও

TV9 Bangla Digital | Edited By: দীপঙ্কর ঘোষাল

Oct 02, 2022 | 1:39 PM

EastBengal vs Mohun Bagan: প্রতিটা ডার্বির আগে কলকাতা এখন একটাই প্রার্থনা করে, আর কোনও মায়ের কোল যেন খালি না হয় 'সুন্দর খেলা'র জন্য।

Kolkata Derby: হাজার লোকের পায়ের চাপে... ইন্দোনেশিয়া মনে করায় সে দিনের ইডেন গার্ডেন্সকেও
Image Credit source: TWITTER

Follow Us

দীপঙ্কর ঘোষাল

 

জোগো বোনিতো। ব্রাজিলের এই শব্দদুটি ফুটবলপ্রেমীদের কাছে অতি পরিচিত। সুন্দর খেলা সবসময় সুন্দর থাকে না। ইন্দোনেশিয়ায় ফুটবল ম্যাচে পদপিষ্ট হয়ে শতাধিক মৃত্যু মনে করায় কলকাতা ডার্বিকেও। ফুটবল মানেই উত্তেজনা। ডার্বির উত্তেজনা আরও অনেক অনেক বেশি। মাঠে যেমন ফুটবলাররা সর্বস্ব দিয়ে খেলেন, গ্যালারির দর্শকরাও ফুটবলারদের তাতাতে কার্পণ্য করেন না। সে দিনের ইডেন, আরও বেশি কিছু চাক্ষুস করেছিল। প্রয়াত সঙ্গীত শিল্পী মান্না দে একটা সময় গেয়েছিলেন, ‘সব খেলার সেরা, বাঙালির তুমি..ফুটবল’। তাঁকে পরবর্তীতে গাইতে হয়েছিল, ‘খেলা ফুটবল খেলা…হাজার লোকের পায়ের চাপে, ফিরল না তো খোকা।’ ১৯৮০ সালের ১৬ অগস্ট ফুটবল প্রেমীদের কাছে এমনই এক ভয়াবহ দিন।

খেলার মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকবে। অবশ্যই থাকবে আনন্দ, উত্তেজনা। লড়াইটা ৯০ মিনিটের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকুক। কিন্তু তার ক্ষত যদি বয়ে বেড়াতে হয়… ফুটবলের লজ্জা। ১৯৮০ সালে খেলার মাঠের উত্তেজনা বাড়াবাড়ি পর্যায়ে পৌঁছেছিল। যার আঁচে আগুন জ্বলেছিল গ্যালারিতেও। কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে ইটবৃষ্টি থেকে শুরু, যার ইতি হয়েছিল ১৬টি প্রাণের বিনিময়ে। কোনওরকমে প্রাণে বেঁচে ফিরেছিলেন অনেকেই। আহতের সংখ্যাও নিছক কম নয়।

কী ঘটেছিল, কেনই বা এমন ঘটেছিল সে দিন, ফিরতে হবে একটু অতীতে। ১৯৮০ সালের কলকাতা ডার্বি। তখনও যুবভারতী ছিল না। ময়দানের বিভিন্ন মাঠে ফুটবল হত। গ্যালারির দর্শকাসন প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। বড় ম্যাচের জন্য তাই ভরসা ছিল ইডেন গার্ডেন্স। ১৯৮০ সালের ১৬ অগস্ট ইডেন গার্ডেন্স হয়ে উঠেছিল রণক্ষেত্র। মুখোমুখি দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগান। রেফারি প্রয়াত সুধীন চট্টোপাধ্যায়। ফুটবলের পাশাপাশি ক্রিকেট, হকি ম্যাচও পরিচালনা করেছেন। কড়া হাতে ম্যাচ পরিচালনার জন্যই পরিচিত ছিলেন প্রয়াত এই ফিফা রেফারি। সে দিন বড় ম্যাচ পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন। মোহনবাগানের বিদেশ বসুকে ফাউল করেন ইস্টবেঙ্গলের দিলীপ পালিত। বিদেশ বসুও ছাড়েননি। উঠে দিলীপ পালিতকে লাথি মারেন। সে সময় দু’জনকেই সতর্ক করেই ছেড়ে দেন রেফারি। কেন না, বড় ম্যাচে কিছু ঘটনা রেফারিও এড়িয়ে যেতে চান। মাঠের ছোট্ট ঘটনাও বড় রকমের দুর্ঘটনার কারণ হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে রেফারিও পারেননি। ম্যাচের ৫৭ মিনিটে একইরকমের ঘটনা। দু’জনকেই লাল-কার্ড দেখিয়ে মাঠ থেকে বের হওয়ার নির্দেশ দেন রেফারি। যার আঁচ পড়ে গ্যালারিতে।

শুরুতে মাঠের দিকে লক্ষ্য করে ইঁট ছোড়া হয়। এরপর গ্যালারিতে শুরু হয় দু-পক্ষের মারামারি। পরিস্থিতি ক্রমশ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। ইডেনের ছোট গেট দিয়ে হুড়োহুড়ি করে বেরোতে গিয়ে পদপিষ্ট হয়ে প্রাণ হারান ১৬ জন ফুটবল অনুরাগী। অনেকেরই ঠাঁই হয় হাসপাতালে। ১৬ জন না ফেরার দেশে…। একটা ম্যাচকে ঘিরে আবেগ, এত বড় হিংসায় পরিণত হবে, এখনও ভাবলে গা শিউরে ওঠে। ১৬ অগস্ট ফুটবল মাঠে প্রাণ হারানো ফুটবল অনুরাগীদের স্মরণে প্রতি বছর এই দিনটি পালিত হয় ‘ফুটবল প্রেমী’ দিবস হিসেবে।

প্রতিটা ডার্বির আগে কলকাতা এখন একটাই প্রার্থনা করে, আর কোনও মায়ের কোল যেন খালি না হয় ‘সুন্দর খেলা’র জন্য। আর ফুটবল প্রেমীদের প্রার্থনা, সুন্দর খেলা যেন আর কলঙ্কিত না হয়। কলকাতায় সেই ঘটনার পরও ডার্বিতে অনেক ঘটনা ঘটেছে। যার মধ্যে যুবভারতীর গ্যালারি থেকে কংক্রিটের চাইয়ে রহিম নবির মাথা ফেটে রক্ত ঝড়ার ঘটনাও ঘটেছে। তবে ১৬ অগস্ট ফেরেনি, এই যা রক্ষে। কলকাতায় এমনটা না হলেও অন্য একটি দেশ, ইন্দোনেশিয়া, আজ আতঙ্কে কাঁপছে। মৃত্যর সংখ্যা বাড়ছে, কলঙ্কিত হচ্ছে ফুটবল।

Next Article