সাও পাওলো: নতুন বছরে কাজ থেকে কয়েকটা দিনের ছুটি পেয়েছেন পেশায় ইলেকট্রিশিয়ান সিলভিও নেভেস সৌজা। সোমবার সশরীরে ভিলা বেলমিরোতে উপস্থিত থেকে প্রয়াত ফুটবল সম্রাটকে (Pele Death) শ্রদ্ধা জানাতে পারবেন না। ছুটি কাটানোর ফাঁকে রবিবার চলে এসেছিলেন পেলের প্রথম ক্লাব স্যান্টোসের স্টেডিয়ামে। যেখানে সোমবার থেকে ২৪ ঘণ্টার জন্য শায়িত থাকবে পেলের কফিনবন্দি দেহ। ফুটবলের প্রথম সুপারস্টারকে শেষবারের মতো শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগ। স্টেডিয়ামের গেটের বাইরে ফুল রেখে গেলেন ৫৪ বছরের সিলভিও। যাওয়ার আগে বলেন, ওনাকে খেলতে দেখা প্রবীণরাই শুধু নন, আমি নিশ্চিত নবীন প্রজন্মও আসবে শ্রদ্ধা জানাতে। ২০২৩-এর নতুন সূর্য আলো দেখার সুযোগ পাননি ৮২ বছরের কিংবদন্তি। বর্ষবরণের আনন্দ ছুঁতে পারছে না সাও পাওলোর বাসিন্দাদেরও। তাঁরা শুধু ‘ও রেই’-এর অপেক্ষায়। সমুদ্র তীরবর্তী স্যান্টোস শহরে জীবনের অধিকাংশ সময় কাটিয়েছেন পেলে। ১৫ বছর বয়সে স্যান্টোসে পা, জীবনের শেষটাও সেখানেই কেটেছে। শুক্রবার থেকে ছোট, বড় কাটআউট, পোস্টারে ছেয়ে গিয়েছে শহর।
সাদা-কালো স্যান্টোস স্টেডিয়ামে বসে খেলা দেখতে পারেন ১৬ হাজার মানুষ। স্টেডিয়ামের স্ট্যান্ডে তিনটে বিশাল পতাকা। একটিতে পেলের বিখ্যাত ১০ নম্বর জার্সি। অন্য পতাকায় বার্তা, ‘রাজা দীর্ঘজীবী হউন।’ তৃতীয় পতাকায় লেখা, ‘পেলে ৮২ বছর’। শহরের কোনও এক প্রান্তে লাগানো বড় ব্যানারে লেখা পেলের উক্তি, “আমি পায়ে বল রেখে এই দুনিয়াকে ভালোবাসি।” রিও ডি জেনেইরোতে ব্রাজিল ফুটবল কনফেডারেশনের হেড কোয়ার্টারে জায়ান্ট পোস্টার। পেলের হাসিমুখের ছবিতে লেখা একটাই শব্দ, Eternal। সত্যিই তিনি চিরন্তন, ফুটবলের আদি ও অনন্ত। পায়ের শিল্পে চামড়ার গোলককে বশ মানানোয় সেরা এডসন আরান্তেস ডু নাসিমেন্তো। ব্রাজিলে হয়তো তিনদিনের রাষ্ট্রীয় শোক, কিন্তু ফুটবল প্রেমীদের হৃদয়ে চিরকালীন।
২১টা বছর ধরে স্যান্টোসে কাটিয়েছেন। ১২৮৩ গোল। গোলের পরিসংখ্যান নিয়ে বিতর্ক যতই থাকুক। পেলের কৃতিত্ব তাতে খাটো হয়ে যায় না। সাও পাওলোর কনগনহাস বিমানবন্দরে এখন তৎপরতা, কড়া নিরাপত্তা। খেলোয়াড়, রাজনীতিবিদ এবং সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা ছাড়াও সাধারণ মানুষের ভিড়ে অবরুদ্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা। শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের পর স্যান্টোসের ৭৫ কিলোমিটার জুড়ে পথজুড়ে বের হবে পেলের অন্তিমযাত্রা। পেলের কফিনবন্দি দেহ পার হবে শতায়ু মা সেলেস্তো আরান্তেসের বাড়ির পাশ দিয়ে। দীর্ঘদিন ধরে শয্যাশায়ী পেলের মা। তাঁর বিখ্যাত ছেলে পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে চলে গিয়েছেন, এখনও জানেন না শতায়ু সেলেস্তা।