World Cup Final: বিশ্বরেকর্ডের রাতে জেমাইমা যেন ওয়ান্ডার উওম্যান! অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে বিশ্বকাপ ফাইনালে ভারতের মেয়েরা!
Indian Women's Cricket Team: ভারত গ্রুপ লিগে অনবদ্য, নক আউটে নয়— এমন তথ্য কম মজুদ নেই। ফাইনালে উঠেও হারতে হয়েছে। সেই ভারত নতুন ইতিহাস লিখে গেল। দু’বছর আগে ছেলেদের বিশ্বকাপ ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছেই হেরে গিয়েছিল রোহিত শর্মার টিম।

স্কোর বোর্ড বলছে, শুধু কঠিন নয়, তীব্র চাপেরও। নার্ভ একবার ফেল করলে হুড়মুড়িয়ে তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা। ৩৩৯ রানের পাহাড়প্রমাণ টার্গেট। উল্টো দিকে নিয়মিত পড়ছে উইকেট। তবু হাত মুঠো করে বসে রয়েছে মুম্বই, দিল্লি, বেঙ্গালুরু, চেন্নাই, কলকাতা। বদলার এমন সুযোগ। বদলার এমন ময়দান কি রোজ মেলে?
মাত্র ২৫ বছর বয়স। হোক না ঘরের মাঠ, প্রতিপক্ষ যে অস্ট্রেলিয়া! মিডল অর্ডারে ব্যাট করেন। তাও যে মিলছে না! উল্টে নামতে হবে তিন নম্বরে। যিনি পারেন, তিনি সব জায়গায় পারেন। জেমাইমা রড্রিগস যেন তাই দেখিয়ে গেলেন। অ্যানাবেল সাদারল্যান্ড নামের মেয়েটা এই বিশ্বকাপের অন্যতম সফল বোলার। ঝুলি কখনও শূন্য থাকেনি। ৪৭ ওভারে তাঁকেই বেছে নিলেন। তীক্ষ্ণ স্কুপটা থেকে চার তুললেন প্রথমে। দ্বিতীয় বাউন্ডারি এল কভারের উপর দিয়ে। সবুজ ঘাসে যেন নিজের নাম লিখছিলেন জেমি! একবার, দু’বার, বারবার! দ্বিতীয় ওভারে ব্যাট করতে নামা ২৫ বছরের মেয়ে অবলীলায় সেঞ্চুরি করে গেলেন। প্রায় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে যখন হার, সেখান থেকে টিমকে তুলে দিলেন সরাসরি ফাইনালে। নট আউট ১২৭ রানের আশ্চর্য ইনিংস খেলে।
ভারত গ্রুপ লিগে অনবদ্য, নক আউটে নয়— এমন তথ্য কম মজুদ নেই। ফাইনালে উঠেও হারতে হয়েছে। সেই ভারত নতুন ইতিহাস লিখে গেল। দু’বছর আগে ছেলেদের বিশ্বকাপ ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছেই হেরে গিয়েছিল রোহিত শর্মার টিম। মেয়েদের বিশ্বকাপেও কি কাঁটা হয়ে যাবে অজিরা? জেমি একার হাতে সব বাধা টপকে দিলেন ভারতকে। ছেলে হোক আর মেয়ে, বিশ্বকাপের নকআউটে ৩৩৯ রান তাড়া করে জিতে ইতিহাস করল হরমনপ্রীত কৌরের টিম। ফাইনালে ভারতের সামনে দক্ষিণ আফ্রিকা। যে ছন্দে রয়েছে মেয়েদের ভারত, বিশ্বকাপের স্বপ্ন দেখা শুরু হয়ে গেল!
বিশ্বকাপের নকআউটে জেমাইমার মতো এমন ইনিংস কি আর কেউ খেলেছেন? ক্যাপ্টেনই আছেন! ২০১৭ সালের বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে এই অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছিল ভারত। হরমনপ্রীত কৌর সেঞ্চুরি করেছিলেন। সেই ইনিংসকেও ছাপিয়ে গেলেন জেমি। অবশ্য এই ম্যাচেও হ্যারি ৮৮ বলে ৮৯ রানের ইনিংস খেলে গিয়েছেন। জেমাইমার সঙ্গে হরমনপ্রীতের ১৫৬ বলে ১৬৭ রানের পার্টনারশিপটা না থাকলে কিন্তু জয়ের আনন্দ চোখের জলে বদলে যেত।
শুরুটা কিন্তু কঠিন ছিল। নভি মুম্বইয়ে ভারতীয় বোলিংকে নিয়ে কার্যত ছেলেখেলা করেছিল অস্ট্রেলিয়া। ফোব লিচফিল্ড একাই প্রায় ম্যাচটা কেড়ে নিয়েছিলেন। ওপেন করতে নেমে মাত্র ৯৩ বলে ১১৯ রানের ইনিংস খেলেন। চার-ছক্কায় দিশেহারা হয়ে গিয়েছিলেন দীপ্তি শর্মা, রাধা যাদবরা। তিনটে লাগাতার রান আউট আর দিপ্তীর দুটো উইকেট শেষ পর্বে না থাকলে সেমিফাইনালের গল্প অন্যভাবে লিখতে হত। এলিস প্যারি ৭৭ করেন। অ্যাশলি গার্ডনার ৬৩ করেন।
৩৩৯ রানের টার্গেটের সামনে দাঁড়িয়ে কি কেউ ফাইনালের স্বপ্ন দেখে? ভারত দেখেছিল। নিভে যেতে যেতে সেই স্বপ্নকে মুঠোতেও ধরল ওই জেমাইমা রড্রিগস আর হরমনপ্রীত কৌরের জন্য। সারা টুর্নামেন্টে দারুণ ছন্দে থাকলেও সেমিতে রান পাননি স্মৃতি মান্ধানা। মাত্র ২৪ করে ফেরেন। তাঁর আগে ফিরে গিয়েছেন প্রতীকা রাওয়ালের বদলে ওপেন করতে নামা শেফালি ভার্মা (১০)। শুরুতেই ধাক্কা। বাকি ম্যাচ সামলে দেওয়া যাবে, এমন স্বপ্ন হয়তো অনেকেই দেখছিলেন না। জেমি দেখেছিলেন।
কুল কিন্তু সুযোগসন্ধানী। হিসেবি কিন্তু আগ্রাসী। বিপদ ঘাড়ে নিয়েও লক্ষ্যে অবিচল। স্কোর বোর্ড যতই চাপ বাড়াক, উল্টো দিকে যতই পড়ুক উইকেট, ২৫ বছরের মেয়েটা অনবদ্য। অবিশ্বাস্য। ১৩৪ বলের ইনিংসে স্রেফ ১৪টা চার রয়েছে। একটাও ছয় নেই! কেন? পারতেন না বড় শট নিতে? হ্যারিকে হারিয়ে তখন দমবন্ধ পরিস্থিতি। তিনি না থাকলে ম্যাচটা জিতবে কেমন করে ভারত? শেষ দিকে দীপ্তি কিংবা বাংলার মেয়ে রিচা ঘোষ অহেতুক আউট হয়ে চাপটা আরও বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। তবু অনড় মেয়েটা। ইতিহাস লিখবেন বলেই যেন নেমেছিলেন মাঠে!
