নয়াদিল্লি: বাবার মৃত্য়ুর সময় রাহুলের বয়স মাত্র ৪ বছর। দায়িত্ব নেননি দাদা। কয়েক বছর পর বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয় রাহুলকে। রাত কাটতো গুরুদ্বারে। রাজধানী দিল্লির ঠান্ডা কতটা মারাত্মক! খবরের চ্যানেল বা বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে সকলেই প্রায় জানেন। আর সেরকম আবহাওয়ায় ভোর বেলায় হিমঘরে কাজ করেন জাতীয় স্তরের এক অ্যাথলিট। সেই ১৪ বছর বয়স থেকেই দুধের হিমঘরে শ্রমিকের কাজ করে যাচ্ছেন ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড অ্যাথলিট। নাম তাঁর রাহুল। ২৫ বছরের রাহুল লং এবং মিডল ডিস্ট্যান্স রানার। দিল্লি স্টেট মিটে তিন বারের পদকজয়ী। দিল্লির ঠান্ডা, হিমঘরের তাপমাত্রা আরও কম। এমন পরিস্থিতিতে দুধ প্য়াকেট করছেন। পাঁচ ফুট উচ্চতার রাহুলকে ইয়া বড় বড় ক্রেটের মাঝে যেন খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছে না। যেমনটা তাঁর ব্য়ক্তিগত জীবন…। বিস্তারিত TV9Bangla-য়।
রাত ১০টা থেকে সকাল ৬টা অবধি হিমঘরে কাজ। অনূর্ধ্ব ২০ জাতীয় স্তরের ক্রস কান্ট্রি রেসে ব্রোঞ্জ পদক পান রাহুল। কাজের প্রসঙ্গে বলছিলেন, ‘হিমঘরের ভিতরের পরিস্থিতি বলার মতো নয়। মনে হয় যেন ফ্রিজের মধ্যে হেঁটে বেরাচ্ছি। হাত-পা অসাড় হয়ে যায়। কাজে অস্বস্তি লাগে, বিষয়টা শুধু তাই নয়। চোট লাগার প্রবল সম্ভাবনাও থাকে। মুহূর্তের জন্য মনসংযোগে ব্যাঘাত ঘটলে বড় রকমের দুর্ঘটনা হতে পারে। বেশির ভাগই ধাতুর সরঞ্জাম। এক বার পা আমার পা পিছলে গিয়েছিল, ভারী একটা ধাতুর কার্ট আমার উপর পড়েছিল। জ্ঞান হারিয়েছিলাম।’
উত্তরপ্রদেশের একটি গ্রাম থেকে রাজধানী আসা মাত্র ১৩ বছর বয়সে। এসেছিলেন দাদার সঙ্গে। ফুড অ্যাপ কোম্পানীতে কাজ করেন রাহুলের দাদা। পুরনো ঘটনা প্রসঙ্গে বলছিলেন, ‘দাদার বিয়ে হল। ওদের কাছে আমি কার্যত বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছিলাম। বলেছিল, আর আমাকে বয়ে বেড়ানো সম্ভব নয়।’ স্কুলের ব্য়াগ নিয়েই ঘর ছেড়েছিলেন ১৩ বছরের রাহুল। সঙ্গে টাকাকড়ি কিছুই ছিল না। বলছিলেন, ‘বাসের টিকিট কাটার মতোও টাকা ছিল না। কোনওরকমে একটা গুরুদ্বারে আশ্রয় জোগার করেছিলাম।’ রাতে কাজ করে নিজের পড়াশোনা এবং প্র্যাক্টিস চালিয়ে যান রাহুল। দিন আনি দিন খাই কাজ। ফলে কাজে না গেলে টাকা পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। এখন আবার নতুন যিনি দায়িত্বে এসেছেন, তিনি রোজ কাজ দেন না। একদিন পরপর কাজ মেলে। এ ভাবেই কাটছে রাহুলের জীবন।