কলকাতা: ধরুন, আপনি অফিসে বসে কাজ করছেন বা বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে সুন্দর সময় কাটাচ্ছেন, ঠিক এমন সময় অচেনা নম্বর থেকে বেজে উঠল মোবাইল। মুঠোফোনের ওপার থেকে এক রিনরিনে মহিলা কণ্ঠ আপনার নাম ধরে বলে উঠল, “স্যার, কনুইয়ের সার্জারির জন্য আগামীকাল আসছেন তো? আপনি তো আকাশ থেকে পড়লেন। কারণ এই মুহূর্তে আপনার কনুইয়ের সার্জারির কোনও প্রয়োজন নেই। ছয়মাস আগেই অস্ত্রোপচার হয়ে গিয়েছে। “ম্যাডাম, আপনার কোনও ভুল হচ্ছে। আপনি যাঁকে চাইছেন আমি সেই লোক নই।” আপনি কথাগুলো বলতে ফোনের ওপারের মানুষটি ধন্দে পড়ে গেলেন। কী একটা ভেবে হাসপাতাল ও সার্জেনের নাম জিজ্ঞাসা করতেই পিলে চমকে উঠল আপনার। মাস ছয়েক আগে ওই হাসপাতাল থেকে, একই সার্জেনের কাছে কনুইয়ের অস্ত্রোপচার করিয়েছেন। তাহলে আগামীকাল যে লোকটির অপারেশন রয়েছে তিনি কে?
এতটুকু পড়েই মাথা ঘুরছে, তাই তো। কিন্তু এটা কোনও কাল্পনিক গল্প নয়, কিংবা কোনও সিনেমার প্লটও নয়। ভীষণই বাস্তব এক কাহিনি। তালগোল পাকিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা কাকে নিয়ে? কাকে নিয়ে বললে পুরো গল্পটা ঠিকঠাক বলা হবে না। এই গল্প দু’জনকে নিয়ে। যাঁদের নিয়ে হইচই পড়ে গিয়েছে খেলার দুনিয়ায়।
অস্ত্রোপচারের জন্য হাসপাতাল থেকে ফোন পেয়ে থতমত খেয়ে গিয়েছিলেন আমেরিকার বেসবল খেলোয়াড় ব্র্যাডি ফেইগল। যেদিন Long Island Ducks খেলোয়াড় হাসপাতাল থেকে অদ্ভুত ফোন কল পেয়েছিলেন। ঘটনাটি সেখানেই শেষ হয়ে যায়নি। তাঁরই নামে কার সার্জারি হতে চলেছে, জানতে কৌতুহলী হয়ে পড়েছিলেন তিনি। আর তা করতে গিয়ে যা বেরল, তাতে চক্ষু চড়কগাছ। লং আইল্যান্ডের বেসবল খেলোয়াড় দেখলেন, শুধু নামে মিল রয়েছে তাই নয়, ব্র্যাভি ফেইগল নামের ওই দ্বিতীয় ব্যক্তিও হুবহু তাঁর মতোই দেখতে। দু’জনের উচ্চতা ছয়ফুট ৪ ইঞ্চি। চেহারা কমবেশি একইরকমের। দাড়ি রাখেন দু’জনই। আলাদা দলের হলেও দু’জনই বেসবল খেলেন। দুই ব্র্যাডি ফেইগলের মাথায় লাল চুল এবং তাঁরা দু’জনই প্রায় একই ফ্রেমের চশমা পরেন। কাকতালীয়ভাবে ২০১৫ সালে ছয়মাস আগে ও পরে, একই হাসপাতালের একই চিকিৎসকের কাছে কনুইয়ের অপারেশন হয়েছে দু’জনের। বিভ্রান্তির শেষ এখানেই নয়। ২০১৭ সালে মিসৌরি বিশ্ববিদ্যালয়ের বেসবল টিম জুনিয়রের পরিবর্তে ভুল করে সিনিয়র ফেইগলকে ট্যাগ করে ফেলে!
উপরের ঘটনা পড়ে নিশ্চয় ভাবছেন, মেলায় হারিয়ে যাওয়া যমজ ভাইয়ের কথা। কিন্তু সেটারও সম্ভাবনা নেই। কারণ দুই ব্র্যাডি ফেইগলের মধ্যে বয়সের ফারাক পাঁচ বছরের। সিনিয়র ব্র্যাডির বয়স ৩২ বছর। লা ভেগাস অ্যাভিয়ের্টস বেসবল দলের সদস্য জুনিয়র ব্র্যাডি এখন ২৭ বছরের। অনেক ভাবনাচিন্তা করার পর সম্প্রতি ডিএনএ টেস্ট করিয়েছেন দুই ব্র্যাডি। পরীক্ষার ফলাফল আরও চমকে দেওয়ার মতো। যমজ তো নন, দু’জনের মধ্যে দূর দূরান্ত পর্যন্ত কোনও বায়োলজিক্যালি সম্পর্কও নেই। তবে ডিএনএ টেস্টের ফলাফল যাই হোক, দুই ব্র্যাডি ফেইগল মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন তাঁরা কোনও না কোনও ভাবে একে অপরের সঙ্গে যুক্ত।
একজন চেহারার দু’জন মানুষকে বলা হয় Doppelganger বা Lookalike। যাঁদের মধ্যে কোনও জৈবিক সম্পর্ক থাকে না। অথচ চেহারায় এতটাই মিল যাকে যে যমজ বলে মনে হয়। অনেকে বলেন, এই পৃথিবীতে সাতজন একই রকম দেখতে মানুষ রয়েছেন। অর্থাৎ Doppelganger-এর সংখ্যা ছয়জন পর্যন্ত হতে পারে। তাঁদের একে অপরের সঙ্গে দেখা হওয়ার সম্ভাবনা ১১ শতাংশ।
পাঠক নিশ্চয়ই ভাবছেন, দুই ব্র্যাডি ফেইগল যদি তাঁদের মতো দেখতে আরও পাঁচ জন ‘যমজ’এর দেখা হঠাৎই পেয়ে যান, তা হলে কী হবে?