হানঝাউ: ভৌগলিক দূরত্ব প্রায় ২০০০ কিলোমিটার। ওঁদের মধ্যে অবশ্য কোনও দূরত্বই নেই। বাঁধনটাই এমন। সালাম সুনীল সিং এবং অর্জুন সিং। প্রথম জনের বাবা জেলে, দ্বিতীয় জনের মা কারখানার মজদুর। মসৃণ পথে কে কবেই বা সাফল্য পেয়েছিল! ওঁদের ক্ষেত্রেও তাই। হানঝাউ এশিয়ান গেমসে এই জুটির চমৎকার রসায়ন। ১৯৯৪ সালের পর ক্য়ানয় ১০০০মিটার ইভেন্টে প্রথম পদক এনে দিয়েছে এই জুটি। বিস্তারিত রইল TV9Bangla Sports-এর এই প্রতিবেদনে।
সুনীলের বয়স ২৪। মণিপুরের মোইরাং থেকে উঠে এসেছেন। ১৬ বছরের অর্জুনের বেড়ে ওঠা রুরকিতে। তাঁদের মিলিয়েছে ‘জল’-এর প্যাশন। ওয়াটার স্পোর্টসের প্রতি আগ্রহই তাঁদের পদক জিততে সাহায্য করেছে। পুরুষদের ডাবলস ক্য়ানয় ১০০০মিটারে ব্রোঞ্জ এসেছে তাঁদের ঝুলিতে। দেশেরও পদক সংখ্যা বেড়েছে। শেষ বার ১৯৯৪ সালে হিরোসিমা গেমসে একই ইভেন্টে ব্রোঞ্জ পেয়েছিল ভারতের সিজি সদানন্দন-জনি রোমেল জুটি।
সুনীল-অর্জুন দু-জনের ক্ষেত্রেই হানঝাউয়ের এই পদক পরিশ্রমের ফসল। জীবনে যা কিছু স্রোত সামলেছেন তাঁর পুরস্কার। সুনীলের কথায়, ‘আমার বাবা জেলে। সকাল হতেই বেরিয়ে পড়েন। লোকটাক লেকে নৌকো নিয়ে মাছ ধরেন। মা ঘর সামলায়। আমাদের পরিবারের আয়ের একমাত্র উৎস এটিই।’ তাঁর উঠে আসা প্রসঙ্গে বলেন, ‘শুরুটা আমার পক্ষে খুবই কঠিন ছিল। বোট এবং অন্যান্য সরঞ্জামের প্রচুর দাম। একটা বোট অন্তত ৪-৫ লক্ষ টাকা, প্যাডেল ৪০ হাজারের মতো। শুরুতে আত্মীয়-স্বজনদের থেকে দেনা করতে হয়। ২০১৭ সালে ভারতীয় সেনায় যোগ দিই। এখন খরচটা চালিয়ে নিতে পারি।’ লোকটাক লেক থেকেই জলের সঙ্গে সম্পর্ক। যা আজও রয়ে গিয়েছে।
সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার পর রুরকি ট্রেনিং সেন্টারে ছিলেন সুনীল। সেখানে ছিলেন অর্জুনও। তাঁর পরিবার উত্তরপ্রদেশের, ভাগবত গ্রাম থেকে রুরকিতে চলে গিয়েছিল। অর্জুন চাইছেন জীবনের কঠিন সময়গুলো ভুলতে। বলছেন, ‘আমার বাবা বেঁচে নেই। মা একটি ওষুধের কোম্পানিতে কাজ করে। মাসে ৮ থেকে ১০হাজার আয় হয়। ভাড়া বাড়িতে থাকি। মা অনেক কষ্ট করেছে। এখন আমি সাই সেন্টারে থাকি বলে কিছুটা ভালো আছি।’
বাবা না থাকলেও তাঁর কাকা অজিত সিংয়ের কাছে ঋণী অর্জুন। বলছেন, তিনি আন্তর্জাতিক স্তরের ক্যানোয়ার। অর্জুনকে তিনিই প্রাথমিক প্রশিক্ষণ দেন। সুনীল-অর্জুন জুটিকে মিলিয়েছে জল, জীবনের কঠিন পরিস্থিতি, যা কিছুটা ঢাকা পড়েছে পদকের আড়ালে।